কিয়েভের আরো কাছে রুশবহর, রাজধানীর পতন কি আসন্ন

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইরপিনে বোমায় বিধ্বস্ত ব্রিজের নিচ দিয়ে বিকল্প পথে এক বৃদ্ধকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা ছবি: এপি

রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান যত সহজে শেষ হবে ভাবা হচ্ছিল বাস্তবে তা হয়নি। ১৬তম দিন পেরোলেও জয় এখনো দূরের পথ বলেই মনে হচ্ছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের পাশাপাশি দেশটির পশ্চিমা মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চাপ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে। তবে ধীরে হলেও রুশ সামরিক বাহিনী রাজধানী কিয়েভসহ অন্যান্য শহরে চাপ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। বোমা মিসাইল হামলাসহ জরুরি সেবার সরবরাহ বন্ধ করে অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। সেই সঙ্গে ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সেনাবহরটি থেমে আছে বলা হলেও স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার দাবি করেছে, এটি রাজধানী কিয়েভের আরো কাছে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে জানা যাচ্ছে, রুশ সামরিক বহরটি কিয়েভের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিসের ছবি প্রকাশের পর ব্রিটেন বলছে, কয়েকদিনের মধ্যেই কিয়েভে চূড়ান্ত হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। গত শুক্রবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইজিয়ামের কাছে একটি মানসিক হাসপাতালে হামলা করার জন্য রাশিয়া সশস্ত্র বাহিনীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় গভর্নর এই হামলাকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংস হামলা বলে মন্তব্য করেছেন। জরুরি পরিষেবাগুলো জানিয়েছে, হামলায় কেউ আহত হয়নি। কারণ রোগীসহ হাসপাতালে দায়িত্বরত অন্যরা আগেই বেজমেন্টে আশ্রয় নেয়। তবে ব্যাপারে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে খবরের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এছাড়া ব্যাপারে রাশিয়াও কোনো মন্তব্য করেনি।

খবরে বলা হয়েছে, ম্যাক্সারের তোলা স্যাটেলাইট ছবিতে কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি বিমানবন্দর এলাকার আশপাশ দিয়ে সশস্ত্র ইউনিটগুলো মহড়া চালাচ্ছে। এলাকায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে রাশিয়ার প্যারাট্রুপাররা অবতরণের পর তাদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র লড়াই হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার শীর্ষ এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, কিয়েভ অভিমুখে চলমান রুশবহরটি একদিনে পাঁচ কিলোমিটার এগিয়েছে। অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এগিয়ে আসা বহরটি রাজধানী কিয়েভের মূলকেন্দ্র থেকে এখন মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান নিয়েছে।

ম্যাক্সার বলছে, আর্টিলারি হাউইটজারসহ অন্য সরঞ্জামাদি লুবিয়াঙ্কার ছোট আবাসস্থলের কাছে ফায়ারিং পজিশনে অবস্থান নিয়েছে। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সবশেষ গোয়েন্দা তথ্যে জানিয়েছে, রাশিয়া চাইছে আগামী দিনগুলোকে তার বাহিনীকে আরো আক্রমণাত্মক করে তুলতে। এজন্য রাজধানী ঘিরে তাদের বাহিনী অবস্থান বদল পুনঃস্থাপন করছে। সম্ভবত পরিকল্পনায় রাজধানী কিয়েভ অভিযান অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ব্রিটেনের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পদাতিক বাহিনী এখনো খুব সামান্যই অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনের প্রতিরোধ অব্যাহত লজিস্টিকস সমস্যা।

ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। রাতারাতি দেয়া বিবৃতিতে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ আরো উল্লেখ করেছেন যে তার বাহিনী পলিস্কি জেলায় রাশিয়ানদের বেলারুশ সীমান্তের দিকে আরো কোণঠাসা করে ফেলেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিত্শকো বলেছেন, অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া বেসামরিক নাগরিকরা রাজধানী শহরের সুরক্ষা দিচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, মূলত শহরটি এখন দুর্গে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনের টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছেন, বাসিন্দাদের অর্ধেকই রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে গেছে। রুশ সেনাবহর রাজধানী অভিমুখে এগিয়ে, প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, আমাদের দিক থেকে বলতে পারি প্রতি দুজন কিয়েভবাসীর একজন রাজধানী ত্যাগ করেছে। তবে রুশ বাহিনীকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন ভিতালি। বলেন, কিয়েভ একটি দুর্গ। এর প্রতিটি ভবন, প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি চেকপয়েন্ট সুরক্ষিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন