সারা দেশে শর্তসাপেক্ষে হাফ ভাড়ার ঘোষণা

নিঃশর্ত হাফ ভাড়া ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে গণপরিবহনে হাফ ভাড়াসহ নিরাপদ সড়কের জন্য ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে বিআরটিসি বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ। এরপর গত ৩০ নভেম্বর কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়ে শুধু ঢাকা শহরের জন্য হাফ ভাড়া চালুর ঘোষণা দেন পরিবহন মালিকরা। তার পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত থাকায় এবার সারা দেশে শর্তসাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। ১১ ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে।

হাফ ভাড়া কার্যকরের ক্ষেত্রে পরিবহন মালিকদের শর্তগুলো হলো চট্টগ্রামসহ দেশের অন্য শহরে যেগুলোয় সিটি সার্ভিস আছে কেবল সেসব বাসে হাফ ভাড়া দেয়া যাবে। আন্তঃজেলা রুটের কোনো বাসে হাফ ভাড়া প্রযোজ্য হবে না। হাফ ভাড়া কার্যকরের সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা। এজন্য শিক্ষার্থীর ইউনিফর্ম ছবিযুক্ত আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। সরকারি ছুটির দিন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৌসুমি ছুটিতে হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না।

গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সারা দেশে শর্তসাপেক্ষে হাফ ভাড়া চালুর ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে হাফ ভাড়া কার্যকর করেছি। সুতরাং তারা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবে বলে আশা করছি। আর সবকিছু দেখভালের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ১০টি মনিটরিং টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি কফিল উদ্দিন আহামদ, চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি খোরশেদ আলম, চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল, মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল, মৃণাল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

পরিবহন মালিকরা হাফ ভাড়ার ঘোষণা দিলেও শিক্ষার্থীরা চান নিঃশর্তভাবে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা। পাশাপাশি নিরাপদ সড়কের জন্য ১১ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

নিরাপদ সড়ক, সড়কে অব্যবস্থাপনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শনের পর গতকাল প্রতীকী লাশের মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার শাহবাগে পুলিশের কড়াকড়ির মধ্যেই কর্মসূচিটি পালন করেছেন তারা। সময় আইন করে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে হাফ ভাড়া কার্যকরসহ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালন প্রতিবাদী গানের কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলমান নিরাপদ সড়ক আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকার রামপুরায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। আজকের জন্য কালো ব্যাজ ধারণ মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।

পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গতকাল দুপুরে ঢাকার শাহবাগে জমায়েত হন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সময় শিক্ষার্থীরা প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল করার চেষ্টা করলে শাহবাগে আগে থেকেই অবস্থান করা বিপুলসংখ্যক পুলিশ তাদের ঘিরে রাখে। দাবি আদায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আজ সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে থাকবে প্রতিবাদী গানের আসরও। সময় তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে একযোগে দেশের ১৮ জেলায় আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল ঢাকার রামপুরায়ও বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সময় তারা ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে আজকের জন্য ক্যালো ব্যাজ ধারণ মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাস ভাড়া বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় একাধিক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত ১৮ নভেম্বর থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যু হয়। পরদিন উত্তর সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান একজন সংবাদকর্মী। ২৯ নভেম্বর রামপুরায় বাসচাপায় নিহত হন স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম। এসব ঘটনা চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলে। মূলত ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় উত্থাপন করা দাবিগুলো নিয়েই গতকাল পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন