বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ২০২০-এর প্রভাব সহসাই কাটছে না

বণিক বার্তা ডেস্ক

পণ্যজট মোকাবেলায় লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো কিছু বন্দর সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ছবি: রয়টার্স

১৯৩০-এর মন্দা, নব্বইয়ের দশকে এশীয় আর্থিক সংকট, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে আরেকটি বছর ২০২০। চলতি বছর কভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে ইতিবাচক খবর, বিভিন্ন দেশের ঘুরে দাঁড়ানো কিংবা ওয়াল স্ট্রিটের আশাবাদ সত্ত্বেও মহামারী-পূর্ব সময়ের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ফিরে যেতে আরো সময় লাগবে। আগামী বছরেও ২০২০ সালের প্রভাব বহাল থাকবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। খবর সিএনএন বিজনেস।

বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ইউরোপ এশিয়ায় জ্বালানি সংকট তীব্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক নীতি গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট বিরোধী রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের মধ্যকার অচলাবস্থা চলছে। এতে প্রণোদনার জন্য বাজেট পাস কিংবা ঋণভার হ্রাসের বিষয়টি নিশ্চিত করা কঠিন ঠেকছে। সবমিলিয়ে আগামী বছরও যে করোনার প্রভাব থেকে যাচ্ছে ব্যাপারে সবাই একমত।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যে টিকা কার্যক্রমে বেশ সফলতা এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে এবং টিকা কার্যক্রম এগোচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে চালু হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অর্থনীতি। কিন্তু বেশকিছু ক্ষেত্রে করোনার প্রভাব পড়েছে, যা আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জোনস ট্রেডিংয়ের মুখ্য বাজার কৌশলী মাইক রার্কি বলেন, মহামারীর প্রাক্কালে ২০২০ সালের মার্চে যেমন অনিশ্চয়তা ছিল, বর্তমানেও এমন অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

সরবরাহ চেইনে বিশৃঙ্খলা: কভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকেই সরবরাহ চেইনে সংকট চলছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র এর বড় ভুক্তভোগী। দেশটির বিভিন্ন বন্দরে চলমান জট নিরসনে সম্প্রতি ৯০ দিনের স্প্রিন্ট ঘোষণা করেছে হোয়াইট হাউজ। ফলে লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো কিছু বন্দর সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকছে। তবে সংকট যে শুধু বন্দরে এমন নয়। মাল পরিবহনে ট্রাক ট্রাকচালকদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু চিপস্বল্পতার কারণে কাঙ্ক্ষিত ট্রাক সরবরাহ করতে পারছে না গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো। এমনকি উপকরণ অটো চিপস্বল্পতার কারণে অনেক কারখানায় কর্মদিবস কমিয়েছে বেশকিছু গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি। আর্থিক খাতের বেশির ভাগ শীর্ষ নির্বাহী বলছেন, চলমান সাপ্লাই চেইন সংকট ২০২২ সালেও বহাল থাকবে। সম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপে তথ্য উঠে এসেছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: শিল্প খাতের বিভিন্ন সংকটের কারণে দ্রব্যমূল্যের বাজারেও প্রভাব পড়ছে। যদিও বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্তা এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাময়িক ঘটনা কিন্তু এটা বুঝতে পিএইচডি লাগে না কোন ঘটনাগুলো এতে প্রভাব রাখছে। ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) যুক্তি এতবার ব্যবহার করেছে যে, শব্দটি অর্থ হারিয়েছে। গত বুধবারও ফেড থেকেই একই ধরনের কথা এসেছে; মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সাময়িক ঘটনা বলে মনে করছে ফেড। একই দিন বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত উপাত্তে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে দশমিক শতাংশ। এতে সম্প্রতি আরো যুক্ত হয়েছে তীব্র জ্বালানি সংকট। শীতকালীন মৌসুম যখন এগিয়ে আসছে তখন জ্বালানি সংকট যথেষ্ট উদ্বেগের। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন বলছে, মার্কিন পরিবারগুলোর জ্বালানি ব্যয় বাড়ছে। শীত মৌসুমে প্রোপেনে তাদের ব্যয় বাড়তে পারে ৫৪ শতাংশ, হিটিং অয়েলে ৪৩ শতাংশ, প্রাকৃতিক গ্যাসে ৩০ শতাংশ ইলেকট্রিক হিটিংয়ে শতাংশ।

ইউরোপে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ইউরোপীয় কমিশন বলছে, পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য ২০১৯ সালের গড়ের চেয়ে ২০০ শতাংশ বেড়েছে। চীনে কয়লার মূল্য রেকর্ড সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছে।

ভূরাজনৈতিক সংকট: ২০১৮ সাল থেকেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে যুক্তরাষ্ট্রের। বাইডেন প্রশাসনে তা কমার আশা করা হলেও না কমে বরং বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাজ্যকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জোট নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করলেও চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রের সম্পর্ক যে খারাপ হবে, সেটা বলাই বাহুল্য।  এশিয়ার বৃহত্তম তিন অর্থনীতি চীন, জাপান ভারতের মধ্যেও সমীকরণ আগের জায়গায় নেই। করোনার প্রভাব থেকে চীনের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়ালেও এমনটা বলা যাচ্ছে না ভারতের বেলায়। ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন, তা কেবল কাগজে-কলমে আছে; বাস্তবে তার ফল দেখা যাচ্ছে না। ভিয়েতনাম দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতি বেশ ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়ানার পথে থাকলেও একের পর এক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত। করোনার প্রভাবে ২০২০-এর পাশাপাশি চলতি বছরও মারাত্মকভাবে ধুঁকেছে তারা। বৈশ্বিক খাদ্য সূচকে অবনমনের মাধ্যমে তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন