অনিয়মে ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট বন্ধ করল বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোন দেশে ব্যবসা করা কতটুকু সহজ তা যাচাইয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের প্রণয়ন করা অন্যতম একটি সূচক ছিল এনফোর্সিং কন্ট্রাক্ট বা চুক্তি বাস্তবায়ন। সংস্থাটির সংজ্ঞা অনুযায়ী, এনফোর্সিং কন্ট্রাক্ট সূচকটি পরিমাপ করা হতো ব্যবসার বাণিজ্যিক বিরোধ মেটাতে প্রয়োজনীয় সময় ব্যয় এবং -সংক্রান্ত আইনি পদ্ধতির গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট ২০২০- বলা হয়েছিল, বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে তুলনায় চুক্তি বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ।

চুক্তি বাস্তবায়নসহ ১০টি সূচক বিচার-বিশ্লেষণ করে নিয়মিতভাবে ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছিল বিশ্বব্যাংক। ব্যবসা করার পরিবেশ কোথায় সবচেয়ে অনুকূল, তার নিরিখে ২০০৬ সাল থেকে সংস্থাটি প্রতি বছর বিশ্বের ১৯০ দেশের একটি তুলনামূলক তালিকা রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। প্রতিবেদনটির ১৬তম সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশ হয় ২০১৯ সালে। সংস্থাটির দাবি, প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থলগ্নির জন্য সঠিক দেশ বেছে নেয়ার দিকনির্দেশনা পেতেন। তবে প্রতিবেদন প্রণয়নেই অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট প্রণয়ন প্রকাশ বন্ধ ঘোষণা করেছে সংস্থাটি।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ গত ১৬ সেপ্টেম্বর -সংক্রান্ত একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের গবেষণায় আস্থা অত্যাবশ্যক। গ্রুপের নানা গবেষণা নীতিনির্ধারকদের পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করে, দেশগুলোকে আরো ভালোভাবে অবগত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। অংশীজনদের অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নতিগুলো আরো সঠিকভাবে পরিমাপ করারও সুযোগ দেয় এসব গবেষণা। ধরনের অনুসন্ধান বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক অন্যদের জন্যও মূল্যবান হাতিয়ার। পাশাপাশি বৈশ্বিক সমস্যা সম্পর্কে এগুলো থেকে বিস্তৃত ধারণা পাওয়া যায়।

২০১৭ ২০১৯ সালে যথাক্রমে ২০১৮ ২০২০ সালের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বা ব্যবসা সহজীকরণ সূচক প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। ওই দুটি প্রতিবেদনেই তথ্য-উপাত্ত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে। দেখা গেছে, প্রকাশনাগুলোয় তথ্য-উপাত্তের যে পরিবর্তন পাওয়া যায়, তা ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন তৈরির পদ্ধতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এরপর বিশ্বব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিষদ পরবর্তী ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট তৈরির বিষয়টি স্থগিত করে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে শুরু করে। সব পর্যালোচনা, নিরীক্ষার ফলাফল বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পর্ষদের যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে ডুয়িং বিজনেসের জন্য পাওয়া সব তথ্য পর্যালোচনার পর সংস্থাটির গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট ১৬ সেপ্টেম্বর সূচক প্রকাশ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

গত বছরের আগস্টে প্রথম অনিয়মের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। কারণে ওই বছরের অক্টোবরে ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে না বলে জানায় বিশ্বব্যাংক। এছাড়া প্রকাশিত গত পাঁচটি রিপোর্টের তথ্যও ফরেনসিক অডিটরকে দিয়ে পরীক্ষা করানোর কথা জানানো হয় সে সময়।

১৫ সেপ্টেম্বর ইনভেস্টিগেশন অব ডাটা ইরেগুলেটরিজ ইন ডুয়িং বিজনেস ২০১৮ অ্যান্ড ডুয়িং বিজনেস ২০২০: ইনভেস্টিগেশন ফাইন্ডিংস অ্যান্ড রিপোর্ট টু দ্য বোর্ড অব এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরস শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সেখানে বলা হয়েছে, ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট ২০১৮-তে চীন ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট ২০২০- সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্তের পরিবর্তনে অনিয়ম পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনটিতে এর বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থানের ওঠা-নামার বিষয়টি বেশ আলোচিত বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে। প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ডুয়িং বিজনেস সূচকে উন্নত অবস্থান তৈরি করার কর্মসূচি এখনো চলমান, যা তদারকির দায়িত্বে থাকা অন্যতম প্রধান সংস্থা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)

প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিডা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবেদন প্রকাশ প্রণয়ন বন্ধে সংস্থাটির নিজস্ব সিদ্ধান্ত প্রকাশ পেয়েছে। কারণ তারা ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখতে পারেনি। তারা বলেছে, তাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় গলদ থাকার কারণে তারা বাদ দিয়েছে। এটা নিয়ে প্রশ্ন ছিল বেশ আগে থেকে। যে দেশ অনেক ভালো করার কথা তারা নিচের দিকে থাকত, আবার যে দেশ অত ভালো না তারা উন্নত অবস্থানে থাকত।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সংস্কার শুরু করেছিলাম। এক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট করল কি করল না, সেটা নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আমরা পরিবেশ অনুকূল করার যে চেষ্টা করে যাচ্ছি, সেটা করে যাব। কারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য এটির প্রয়োজন রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট ছকে তৈরি সূচক অনুসরণ করে তুলনামূলক অবস্থান দেখা যেত। এখন আমাদের সুবিধা হলো আমরা আরো বৃহত্তর আঙ্গিকে ব্যবসা সহজ করার কাজটা করব। কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করা দরকার তা চিহ্নিত করে আমরা আমাদের কাজ করে যাব। তবে এখন কৌশলগত কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ওই কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সংস্কার প্রক্রিয়া আরো কার্যকর পদ্ধতিতে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন