দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত এমন রোগীরা টিকা না নেয়া রোগীদের চেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন কম। টিকা নেয়া রোগীদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যাও কম। এমনকি টিকা না নেয়া রোগীদের চেয়ে ১০ ভাগ কম মৃত্যু হচ্ছে টিকা নেয়া রোগীদের। বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
চলতি বছরের মে ও জুনে ১ হাজার ৩৩৪ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করে আইইডিসিআর, যাদের সবাই ছিলেন ত্রিশোর্ধ্ব। জরিপে অংশ নেয়া ৫৯২ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী কোনো ধরনের টিকা নেননি। বাকিরা টিকা নিয়েছেন। অন্যদিকে টিকা নেয়ার ১৪ দিন পরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ছিল ৩০৬।
গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনার টিকা নেয়া রোগীদের মৃত্যুহার দশমিক ৩ শতাংশ বা প্রতি হাজারে তিনজন। বিপরীতে যেসব রোগী টিকা নেননি তাদের মৃত্যুহার ৩ শতাংশ বা প্রতি ১০০ জনে তিনজন। টিকা নেয়া রোগীদের তুলনায় টিকা না নেয়া রোগীদের মৃত্যুহার ১০ গুণ। জরিপকালে নভেল করোনাভাইরাসের টিকা নেননি এমন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। অন্যদিকে গবেষণায় নির্বাচিতদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন এমন একজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন।
টিকা নেয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হারও কম। আইইডিসিআর বলছে, টিকা নেয়া করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৭ শতাংশ, আর না নেয়াদের ২৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। যারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত কিন্তু টিকা নেননি তাদের ৩২ শতাংশই কভিড-১৯ আক্রান্তের পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। টিকা গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এটি ১০ শতাংশ ছিল। আর একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত টিকা নেয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির পরিমাণ দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে টিকা নেয়া যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতাও কম। আইইডিসিআর বলছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী দুই ডোজ টিকা নেয়া ব্যক্তিদের তুলনায় টিকা না নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
গবেষণায় উঠে এসেছে, টিকা না নেয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতায় ভুগেছেন ১১ শতাংশ, যা পূর্ণ ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৪ শতাংশ ছিল। আর অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত টিকা না নেয়া করোনা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতার হার এবং দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারী করোনা আক্রান্ত রোগীদের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি পাওয়া গেছে।
টিকা গ্রহণকারীরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে তাদের আইসিইউও কম লেগেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী টিকা না নেয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৯ জনকে আইসিইউতে নিতে হয়েছে, যা ৩ শতাংশ। পূর্ণ ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনজনকে আইসিইউতে নিতে হয়েছে, যা ১ শতাংশের কম।
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। আর ভাইরাস প্রতিরোধে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি। শুরুতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকা-কোভিশিল্ডের টিকা দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনকে। আর গতকাল পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকা-কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৯ জনকে। সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ বন্ধ রাখায় বর্তমানে কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ রয়েছে।
কোভিশিল্ড ছাড়াও সিনোফার্ম, ফাইজার ও মডার্নার টিকাও দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সিনোফার্মের টিকা দেয়া শুরু হয় গত ২৫ মে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল পর্যন্ত সিনোফার্মের প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ২৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩১ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৫৫৮ জন।
অন্যদিকে ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু হয় ২১ গত জুন। এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ২৫৫ জনকে ফাইজারের টিকা দেয়া হয়েছে। আপাতত প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ রয়েছে। আর গতকাল পর্যন্ত দিতীয় ডোজ পেয়েছেন ২ হাজার ২৫০ জন।
গত ১৩ জুলাই দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় শুরু হয়েছে মডার্নার টিকা প্রদান। গতকাল পর্যন্ত ৭ লাখ ৬৪ হাজার ২২৫ জনকে মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মডার্নার টিকা গ্রহণ করেছেন ৭৬ হাজার ৫৪৪ জন। এখনো দ্বিতীয় ডোজ প্রদান শুরু হয়নি।