আগামী বছর যানবাহন চলবে নড়াইলের কালনা সেতুতে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নড়াইল

নির্মাণাধীন নড়াইলের কালনা সেতু ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা পয়েন্টে মধুমতী নদীতে এগিয়ে চলছে সেতু নির্মাণকাজ। একই সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে এটি প্রথম দৃষ্টিনন্দন ব্যতিক্রমী সেতু হবে। সেতুটি হবে ছয় লেনের।

সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আগামী বছর সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। এরই মধ্যে সেতুটির অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ হলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব কমবে ১৬০ কিলোমিটার। স্থাপিত হবে বেনাপোল-পদ্মা সেতু-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

সেতুটি নির্মিত হলে ভৌগোলিকভাবে নড়াইল জেলার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। প্রকল্পটির প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলে শিল্পায়নের ছোঁয়া লেগেছে। বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা সড়কের হাইওয়ের দুই পাশে নড়াইল অংশে জমির দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এরই মধ্যে নড়াইল অংশে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কলকারখানা। কালনা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে নড়াইল অংশ (৩৬ কিলোমিটার) অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে পরিণত হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা মহল। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরে সেতুর পাশে নড়াইলের অংশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য ৩০০ একর জমির একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে। প্রাধানমন্ত্রীও প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের নির্বাচনী জনসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সড়ক জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় সেতুর কাজ চলছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, ছয় লেনের সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সেতু হচ্ছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে সেতুর ঠিকাদার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মধুমতী নদীর কালনা ফেরিঘাটের লাগোয়া দক্ষিণে হচ্ছে সেতুটি। চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নদীর পূর্বপাড়ে সংযোগ সড়ক করতে বালি ভরাটের কাজ চলছে।

সওজের সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সংযোগ সড়কের জমি বুঝে পেতে দেরি হওয়ায় সেটির কাজ শুরু হয়েছে দেরিতে। এজন্য একটু পিছিয়ে আছি। তাছাড়া করোনার কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি হয়েছে। জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু টেকনিশিয়ান আসতে পারছেন না। সেতুটির কাজ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে সেতুটির ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কাজের সময় বাড়ানো হবে। ২০২২ সালে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন কর্মকর্তা।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ফকরুল হাসান বলেন, নড়াইল জেলা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। কালনা সেতু চালু হলে এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে। লোহাগড়ায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা করছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন