ভাঙন আতঙ্কে সোমেশ্বরী নদীতীরের শতাধিক পরিবার

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা

দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধিতে ভাঙছে কামারখালী এলাকা। আতঙ্কে আট গ্রামের মানুষ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরের ভাঙনে এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েকশ ঘরবাড়ি, স্থাপনা গাছপালা। এবার বর্ষার শুরুতেই ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে নদীতীরবর্তী শতাধিক পরিবার।

স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছরের ভাঙনের কবলে পড়ে এরই মধ্যে ভিটেবাড়ি হারিয়েছে নদীতীরের কয়েকশ পরিবার। এবার টানা বর্ষণ পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার জেলার নদ-নদীর পানি বেড়েছে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোমেশ্বরী নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ভাঙন আতঙ্কে থাকা নদীতীরের বাসিন্দারা বলেন, সোমেশ্বরীর করাল গ্রাসে বিলীন হচ্ছে আমাদের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু। দুশ্চিন্তায় আছে নদীতীরের শতশত মানুষ। নতুন করে নদীর পানি বাড়ায় হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, বিদ্যালয়সহ ঐহিত্যবাহী রানীখং ধর্মপল্লী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী গ্রাম রানীখং, দুর্গাপুর সদরের ফারংপাড়া, ডাকুমারা, কামারখালী, বহেরাতলী বরইকান্দীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ভাঙন রোধে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০০ মিটার ভাঙন এলাকায় ছয়টি প্যাকেজের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হয়। ধীরগতির কারণে কাজ এখনো শেষ হয়নি। ৯০০ মিটারের মধ্যে মাত্র ২০০ মিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বাকি অংশের কাজ।

ভাঙন এলাকায় বালিভর্তি শতশত জিও ব্যাগ পড়ে থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ট্রাক্সফোর্সের তদারকি না থাকায় তা নষ্ট হচ্ছে বলেন জানায় এলাকাবাসী। ওই কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বর্ষা শুরু হওয়ার আগ থেকে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের বস্তা ব্যবহার সঠিক পরিকল্পনার অভাব, সেই সঙ্গে কাজে ধীরগতির ফলে নদীতীর রক্ষার উদ্যোগ সুফল বয়ে আনছে না।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, সোমেশ্বরী নদীর ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসকের চেষ্টায় ওই এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়ায় এলাকা পরিদর্শন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ সম্পাদনের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, নদীতে নতুন করে পানি আসার ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাউবো নিয়োজিত টাক্সফোর্স ভাঙন এলাকায় ফেলার জন্য বস্তা গুনে না দিলে ঠিকাদার ফেলতে পারবে না। টাক্সফোর্সের তদারকির অভাবে কাজে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে। অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। মেরামতকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

এদিকে খবর পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান। তিনি বলেন, সোমেশ্বরী নদীর তীর ভাঙন রোধে আমি নিজে চেষ্টা করে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছি। ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। নদীভাঙন রোধে স্থানীয় ইউএনও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীন পরিবারগুলোকে গৃহনির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। শুধু আশ্বাস নয়, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সোমেশ্বরী নদীর ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে নদীতীরের মানুষ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন