![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_264235_1.jpg?t=1722053961)
দীর্ঘদিন ধরেই এক শ্রেণীর কারসাজি চক্র ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, লিংকডইন, ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর প্রভাবিত করার মাধ্যমে কারসাজিতে লিপ্ত রয়েছে। এ ধরনের বেশকিছু ঘটনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কমিশন। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিএসইসির ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগের পরিচালক রাজিব আহমেদকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট বিভাগের প্রধান মো. মইনুল হক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সিস্টেম অ্যান্ড মার্কেট অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান ও উপমহাব্যবস্থাপক আবু নূর মোহাম্মদ হাসানুল করিম ও ডিএসইর মার্কেট সার্ভিল্যান্স বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মো. মাহফুজুর রহমান।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএসইসি বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারদর নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী ও কোম্পানির অপ্রকাশিত তথ্যের বিষয়ে গুজব ছড়াচ্ছে এক শ্রেণী কারসাজিকারী। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে তদন্তের মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা জড়িত রয়েছে তাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তদন্ত কমিটি গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ও খতিয়ে দেখবে।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ডিসিশন মেকার নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে শেয়ারদর নিয়ে গুজব ছড়ানোর কারণে এটি বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে চিঠি দিয়েছিল কমিশন। যদিও এখন পর্যন্ত বিটিআরসি কমিশনের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের উত্থানের সুযোগে কারসাজি চক্র আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের দর কত হতে পারে সেটি নিয়ে প্রায়ই পোস্ট দেখা যায় বিভিন্ন গ্রুপে। আবার অনেকে বিকাশে অর্থ বিনিময়ের মাধ্যমে শেয়ারের আইটেম সরবরাহ করার অফার দিয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ কোম্পানির মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের আগেই সেটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কিনতে প্ররোচিত করে। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এভাবে শেয়ারের দর প্রভাবিত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার কারণে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারছে না কমিশন। তাই তদন্তের মাধ্যমে কারসাজি ও গুজবের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে কারসাজি ও গুজব বন্ধ করতে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তাছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে কারো বিরুদ্ধে আরো অধিকতর ব্যবস্থা নেয়া কিংবা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তা নেয়া হবে। এজন্য আগে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে বীমা খাতসহ আরো বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থান ও লেনদেন দেখা গেছে। কারসাজি চক্রের সদস্যরা নিজেরা এসব শেয়ারে বিনিয়োগের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তা নিয়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক গুজব ও কারসাজির প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে।