করোনার অভিঘাত নিয়ে পিপিআরসি-বিআইজিডির গবেষণা

কর্মজীবী নারীদের এক তৃতীয়াংশ এখনো বেকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড মহামারীর আগে কাজ ছিল। কিন্তু এখন বেকার এমন মানুষ রয়েছে শতাংশ। কর্মহীনতার ধারা নারীদের জন্য বেশ আশঙ্কাজনক। কভিডের আগে কর্মজীবী ছিলেন এমন নারীদের এক-তৃতীয়াংশ গত বছরের জুন থেকে এখনো বেকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে হার নেমে এসেছে ১৬ থেকে শতাংশে।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। টেলিফোনের মাধ্যমে দেশব্যাপী তিন ধাপে জরিপ করা হয়। জরিপে কভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শহুরে বস্তিতে কভিড-পূর্ব অবস্থার আয়ের চেয়ে এখনকার আয় ১৪ শতাংশ কম।

গতকাল পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান . হোসেন জিল্লুর রহমান বিআইজিডি নির্বাহী পরিচালক . ইমরান মতিন অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনের উপস্থাপনায় বলা হয়, মহামারী সংক্রমণের এক বছর পার হয়েছে। কিন্তু ঋণের জালে জড়িয়েছে এবং সঞ্চয় হারিয়েছে অনেকেই। বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনো তাদের দৈনন্দিন জীবন চালাতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। বিশেষ করে শহুরে বস্তিবাসীদের অবস্থা বেশ ভয়াবহ। মহামারীর কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। তাদের মাঝে আছে হতদরিদ্র মাঝারি দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। তাদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। এছাড়া রয়েছে দরিদ্র নয় কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা একশ্রেণীর মানুষ। যাদের বলা হচ্ছে ভালনারেবল নন-পুওর বা ভিএনপি। দেখা গেছে, দারিদ্র্যসীমার ওপরে কিন্তু মধ্যম জাতীয় আয়সীমার নিচে থাকা শ্রেণীর মানুষদের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে সবচেয়ে ধীরগতিতে।

গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের ৭২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল নতুন দরিদ্র হিসেবে। তাদের ৫০ শতাংশ এখনো ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। হার শহরে ৫৯ শতাংশ এবং গ্রামে ৪৪ শতাংশ। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ১৪ দশমিক শতাংশ নতুন দরিদ্রদের হার বিগত বছরের জুনে ছিল ২১ দশমিক শতাংশে।

. ইমরান মতিন তার বক্তব্যে নারীদের কর্মহীনতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কম। আর কভিডসৃষ্ট অবস্থা নারীদের শ্রমবাজার থেকে আরো ছিটকে ফেলতে পারে। তিনি আরো বলেন, পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণ করায় দরিদ্রদের দুরবস্থা আরো বাড়ছে। শুধু কৃষি খাতই বলা চলে কভিড-পূর্ব অবস্থার মতো ইতিবাচক অবস্থান গড়তে পেরেছে। শহরে আয়ের সুযোগ হ্রাস পাওয়ায় বস্তি থেকে গ্রামে চলে যাওয়ার ঘটনা প্রচুর ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছর ২৭ দশমিক শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়ে ছিল। যাদের দশমিক শতাংশ এখনো ফেরেনি। প্রাক-কভিড অবস্থার তুলনায় আয় কমলেও খাবারের ব্যয় বাদে দৈনন্দিন যে ব্যয় সেটি গত জুন থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। ভাড়াবাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহুরে দরিদ্রদের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। সবার সঞ্চয় কমে গেছে আশ্চর্যজনকভাবে। ভিএনপি দরিদ্র নয় এমন শ্রেণীর মানুষদের সঞ্চয়ের পরিমাণ কভিড-পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে গেছে। একই সঙ্গে সব শ্রেণীতেই ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, যদিও কভিডকালে সামাজিক সুরক্ষা নামমাত্র ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এটিকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। শহরের দরিদ্র শ্রেণী নতুন দরিদ্রদের জন্য বর্তমানে থাকা সুরক্ষা কর্মসূচির পাশাপাশি কার্যকরী প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন তাত্পর্যপূর্ণ আরো কর্মসূচি হাতে নেয়া উচিত। নতুন আয়ের ধাক্কা সামলাতে স্মার্ট লকডাউন দরকার। এটি স্বাস্থ্যগত অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারও বটে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন