ওয়েব সেমিনারে অর্থনীতিবিদরা

কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে ফিরে যেতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা করোনাভাইরাস মহামারীর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে জোর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের তিন অর্থনীতিবিদ।

গতকাল দুপুরে শিল্পায়ন: শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে শিরোনামে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত এক ওয়েব সেমিনারে অংশ নিয়ে আহ্বান জানান তারা।

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক . জামালউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ . কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক . শফিক-উজ জামান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান . মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান।

গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত অধ্যাপক আবুল বারকাতের সদ্য প্রকাশিত বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে গবেষণা গ্রন্থটির বিষয়বস্তু ঘিরে ১৩ সিরিজের আলোচনা সভার ষষ্ঠ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় অর্থনীতিবিদ . কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, একসময় বাংলাদেশের ময়মনসিংহ থেকে কলকাতা পর্যন্ত রেললাইন করা হয়েছিল কেবল পাট পরিবহনের জন্য, মানুষের জন্য নয়। আবুল বারকাত তার বইয়ে যে কথাটা বলেছেন, আমি তার সঙ্গে একমত যে প্রাকৃতিক সম্পদে সবারই সমান মালিকানা থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ পরিস্থিতি এড়াতে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে আমাদের ফিরে যেতে হবে।

স্বাধীনতার আগে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পায়নের বৈষম্য তুলে ধরে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ওই সময়ের মিল মালিকরা ছিলেন সবাই পশ্চিম পাকিস্তানের। আমাদের পাটচাষীরা দাম পেতেন কম। শোষণ সম্পদবণ্টনে বৈষম্য আবুল বারকাতের বইয়ে উল্লেখ আছে।

অধ্যাপক . শফিক-উজ জামান বলেন, প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে কার্ল মার্ক্সের একটা কথা আছে এমন যেআমরা কখনো প্রকৃতিকে জয় করতে পারব না। প্রকৃতিকে জয় করলে তার ক্ষতি হবে, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করতে হবে। আজ নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে আমরা যখন ঘরবন্দি তখন মার্ক্সের কথাটা অনেক প্রাসঙ্গিক। আগে পাট ছিল আমাদের শিল্পায়নের মাধ্যম, কিন্তু আশির দশকের শেষ দিক থেকে পোশাক শিল্প হয়ে গেল আমাদের শিল্পায়নের মূল মাধ্যম। এটা সঠিক যে, খাতটি নারীদের জন্য ব্যাপক আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করেছে। কিন্তু আজ নদীদূষণের পেছনে শিল্প-কারখানা তার বর্জ্য ভূমিকা রাখছে, মিঠা পানি উর্বর ভূমি ধ্বংস হচ্ছে প্লাস্টিকে।

কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নের সুবিধাগুলো উল্লেখ করে অধ্যাপক শফিক-উজ জামান বলেন, এতে কৃষিপণ্যের দাম বাড়বে। কৃষক আরো টাকা পাবেন। কৃষকের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। মনে রাখতে হবে, কৃষক একই সঙ্গে উৎপাদক শিল্পপণ্যের ক্রেতা। উচ্চ প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান একসঙ্গে চলে না। শ্রমিক ছাঁটাই না করে কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় তা ভাবতে হবে। অভ্যন্তীণ বাজার সম্প্রসারণ, বৈচিত্র্যপূর্ণ কৃষিপণ্য তৈরি কৃষি গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক আবুল বারকাতকে প্রথাবিরোধী অর্থনীতিবিদ উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, অধ্যাপক আবুল বারকাতের লেখা বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে একটি টাইটানিক গ্রন্থ। বইয়ে মুক্তিযোদ্ধা বারকাত তার নিজস্ব ভূমি উত্থিত চিন্তাভাবনা গ্রন্থিত করেছেন। তিনি দেশের বর্তমান শিল্পায়নকে বিপর্যয়কর শিল্পায়ন বলেছেন কল্যাণ শিল্পায়ন গঠনের কথা বলেছেন। এর জন্য ১৫টি সুপারিশ করেছেন তিনি। এর মধ্যে প্রথম সুপারিশ হলো মানবায়ন, যা মানুষকে তার বাস্তু থেকে কখনো উত্খাত করবে না।

সভার সূচনা বক্তব্যে জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী চলছে অর্থনৈতিক মহামন্দা। একই সঙ্গে কভিড-১৯-এর অপ্রতিরোধ্য প্রতাপ। বৈশ্বিক মহাদুঃসময়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি খুঁজছেশোভন সমাজ, শোভন রাষ্ট্র, শোভন বিশ্বব্যবস্থা। সে কারণেই আয়োজন। আমাদের লক্ষ্য জ্ঞানভিত্তিক প্রভাবকের ভূমিকা পালন করা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন