সার্কিট ব্রেকারেও ঠেকানো গেল না দরপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্লোর উঠিয়ে নেয়া ৬৬ কোম্পানির শেয়ারদর যাতে বেশি কমতে না পারে, সেজন্য গত শনিবার কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শতাংশ নির্ধারণ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তবে এতেও ঠেকানো যায়নি দরপতন। গতকাল ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া ৬৬টি কোম্পানির মধ্যে ৫৮টিরই শেয়ারদর কমেছে। পাশাপাশি ফ্লোর প্রাইস বলবৎ থাকা বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারে দরপতন হয়েছে। এতে গতকাল পুঁজিবাজারের সূচক লেনদেন কমেছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানির শেয়ার মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের বাজারদর ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় এগুলো লেনদেন এক প্রকার বন্ধই ছিল। শেয়ারগুলোকে লেনদেনযোগ্য করতে বিএসইসি গত সপ্তাহের বুধবার ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়। তবে এর পরদিনই ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারে দরপতন হয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া ৬৬ কোম্পানির শেয়ারদর যাতে বেশি কমতে না পারে সেজন্য কোম্পানিগুলোর সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা কমিয়েছিল কমিশন।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠোর লকডাউনের ঘোষণা আসার কারণে কভিড-১৯ পরিস্থিতি কোন দিকে যায় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এর ফলে অনেকেই তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নগদ অর্থ হাতে রাখতে চাইছেন। কারণে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া ৬৬ কোম্পানির শেয়ারে সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা কমানোর সিদ্ধান্ত বাজারের দরপতন ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই নিম্নমুখী ছিল সূচক। দিনশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯০ পয়েন্ট কমে হাজার ১৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের দিন ছিল হাজার ২৫৫ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের।

ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল ২০ পয়েন্ট কমে দিন শেষে হাজার ১৭৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিন ছিল হাজার ১৯৮ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ৩৭ পয়েন্ট কমে গতকাল হাজার ৯৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৯৯০ পয়েন্টে। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে মোট ৪৫৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৫৭৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪০টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২৪টির, কমেছে ২৬৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫২টি সিকিউরিটিজের বাজারদর। ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া ৬৬টি কোম্পানির মধ্যে গতকাল ৫৮টির শেয়ার কমেছে, বেড়েছে পাঁচটির আর অপরিবর্তিত ছিল তিনটির বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪২ দশমিক ২৩ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে সাধারণ বীমা খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ দখলে নিয়েছে বিবিধ খাত। ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। আর দশমিক ১৬ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল ওষুধ রসায়ন খাত।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, রবি আজিয়াটা, বিডি ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, পূরবী জেনারেল ইন্সুরেন্স, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ১৫১ পয়েন্ট কমে হাজার ৪০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল হাজার ১৯০ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ১৯২টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির, কমেছে ১৩৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৭টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ১৪ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২৪ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন