তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আগের অবস্থানেই ভারত : এস জয়শংকর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারত সরকার আগের অবস্থানেই আছে। এছাড়া সীমান্তে হত্যা বন্ধের পাশাপাশি স্পর্শকাতর ওই এলাকায় যেকোনো মূল্যে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এসব কথা বলেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে গতকালই ঢাকায় আসেন এস জয়শংকর।

বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বন্ধের পাশাপাশি স্পর্শকাতর ওই এলাকায় যেকোনো মূল্যে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার পক্ষে মত দেন . এস জয়শংকর। তার ভাষ্যমতে, উভয়ের অভিন্ন চাওয়া এমন হওয়া উচিতনো ক্রাইম, নো ডেথ।

জয়শংকর বলেন, আমি নিশ্চিত যদি আমরা একসঙ্গে এমন চিন্তা করতে পারি, তাহলে সীমান্তে হত্যা বা মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কার্যকরভাবেই রোধ করা সম্ভব।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে তার দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বাংলাদেশ সারা বিশ্বে আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মুজিব বর্ষ আমাদের দেশের জন্যও অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমরা শুধু আলোচনার মাধ্যমেই যেকোনো সংকটের সমাধান করতে পারি।

তিনি বলেন, করোনাকালে দেশের বাইরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম স্মরণীয় সফর হবে ঢাকা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেন জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে নিরাপত্তা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, বাণিজ্য, পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এস জয়শংকর।

এর আগে গতকাল সকাল ১০টার দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে দিল্লি থেকে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। . কে আব্দুল মোমেন তাকে বিএএফ বাশার ঘাঁটিতে স্বাগত জানান। দিল্লির পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে এস জয়শংকর ঢাকা সফরে আসছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসার কথা। তার সফর চূড়ান্তকরণও জয়শংকরের সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেয়া এক লিখিত বক্তব্যে . এস জয়শংকর বলেছেন, করোনাকালে দেশের বাইরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম স্মরণীয় সফর হবে ঢাকা। ২৬-২৭ মার্চের প্রস্তাবিত ওই সফর প্রস্তুতিতে ঢাকা দিল্লির প্রতিনিধিরা কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সফর খুবই স্মরণীয় হবে, কারণ এটি করোনা মহামারীর পর ভারতের বাইরে তার প্রথম এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সফর।

জয়শংকর বলেন, চলতি বছরটি খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। কারণ উভয় দেশ মুজিব বর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পালন করছে। তিনটি বার্ষিকীর প্রতি দিল্লি যথাযথ গুরুত্বারোপ করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্ক গত্বাঁধা অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বন্ধন শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ প্রগতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দু। লক্ষ্য বাস্তবায়নে উভয়পক্ষই সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের তাত্পর্য আমাদের আগে প্রতিবেশী এবং অ্যাক্ট ইস্ট নীতির জন্য ক্রমবর্ধমান প্রাসঙ্গিকতার মধ্যে নিহিত রয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও মূল প্রতিবেশী গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি। আমাদের সম্পর্কের প্রতিটি অর্জন গোটা অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। সবাই জানেন, আমরা অন্যদের কাছে সম্পর্ককে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন