৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার অনুসন্ধানে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কত অর্থ পাচার হয়, তার পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। তবে পাচারকৃত অর্থে বিলাসী জীবনযাপনের খবর প্রায়ই উঠে আসে গণমাধ্যমে। বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরব হয়ে কানাডায় মানববন্ধনের আয়োজনও করেছেন প্রবাসীরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনের তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ওভার আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর দেশ থেকে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। এবার আমদানি-রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া ৬৪ হাজার কোটি টাকার অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে পাচারকারীদের তথ্যের সুলুকসন্ধানে আলাদাভাবে তিন সদস্য চার সদস্যর দুটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলছে, অর্থ পাচার রোধে কঠোর অবস্থানে দুদক। অর্থ পাচারসংক্রান্ত তদন্তযোগ্য তথ্য পাওয়ামাত্র দুদক সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে বলেও বলছেন তারা।

প্রসঙ্গে কমিশনের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, গার্মেন্টস মালিকদের বিরুদ্ধে কিছু পাবলিক সার্ভেন্টের সহযোগিতায় অবৈধ সম্পদ অর্জনপূর্বক আমদানি রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার এবং আল মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে রফতানির আড়ালে ১৭৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের একটি অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে দুদকের একটি অনুসন্ধান টিম অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করলে তা পর্যালোচনা করে কমিশন আইন মোতাবেক পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন দুদক সচিব।

দুদক সচিব আরো জানান, দুদকের চাহিদার ভিত্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ওভার ইনভয়েসিং-সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রেরণ করেছে। এর ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে টিম গঠন করেছে। তারা অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু ব্যাপক হওয়ায় তা সম্পন্ন হতে সময়ের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন দুদক সচিব। তিনি বলেন, দুদক তার চাহিদার ভিত্তিতে এনবিআর থেকে তথ্য পেতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, এখন থেকে ওভার ইনভয়েসিংয়ের তথ্য পাওয়ামাত্র এনবিআর নিয়মিতভাবে দুদককে তথ্য সরবরাহ করবে। বিদেশে অর্থ পাচার রোধে দুদক অত্যন্ত কঠোর বলেও উল্লেখ করেন দুদক সচিব। তদন্তযোগ্য তথ্য পাওয়ামাত্র দুদক অর্থ পাচার রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে উল্লেখ করে দুদক সচিব বলেন, দুদক বিএফআইইউ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা গ্রহণ করবে।

অর্থ পাচারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে দুদক তত্পরতা বাড়িয়েছে। গত বছরের ২২ অক্টোবর বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশীদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক। সেই চিঠিতে ইনভেস্টমেন্ট কোটায় যেসব বাংলাদেশী নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। গত ১১ জানুয়ারি পাচার করা অর্থে বিদেশে বিলাসবহুল বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন এমন বাংলাদেশী নাগরিকদের তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক। আর গত বছরের ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান।

অর্থ পাচার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের করা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবল না হওয়ায় আর্থিক অনিয়ম বা দুর্নীতির ক্ষেত্রে সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অর্থ বিদেশে পাচার করার সুযোগ নেই। তবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানি পণ্যর প্রকৃত মূল্যর চেয়ে বেশি মূল্য পরিশোধ করাকে বলা হয় ওভার ইনভয়েসিং এবং রফতানি মূল্যর চেয়ে কম দেখিয়ে প্রকৃত মূল্য দেশে প্রত্যাবাসিত না করাকে বলা হয় আন্ডার ইনভয়েসিং, আমদানীকৃত পণ্য দেশে না আনা, বা কম আনা হুন্ডিসহ বিভিন্ন উপায়ে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ক্রস বর্ডার ক্যাশ স্মাগলিংয়ের মাধ্যমেও অর্থ পাচার ঘটে।

বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন সময় উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার নজিরও রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন