সানেমের জরিপ

করোনাকালীন সার্বিক দারিদ্র্য বেড়ে ৪২ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাকালীন সার্বিক দারিদ্র্য বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। কভিড-পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে কভিড-পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য, বৈষম্য কর্মসংস্থান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে দেশব্যাপী পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনা করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম।

গতকাল দারিদ্র্য জীবিকার ওপর কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব: সানেমের দেশব্যাপী জরিপের ফলাফল শীর্ষক ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক . সেলিম রায়হান।

ওয়েবিনারে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বরিশালে ছিল ২৯ দশমিক শতাংশ, চট্টগ্রামে ৩৫ দশমিক শতাংশ, ঢাকায় ৩৮ দশমিক শতাংশ, খুলনায় ৪১ দশমিক শতাংশ, ময়মনসিংহে ৪৬ দশমিক শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৫ দশমিক শতাংশ, রংপুরে ৫৭ দশমিক শতাংশ এবং সিলেটে ৩৫ শতাংশ।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দেশে ২০২০ সালে ২০১৮ সালের তুলনায় মাথাপিছু গড় শিক্ষা ব্যয় কমেছে। অতি দরিদ্র পরিবারের জন্য হার কমেছে সবচেয়ে বেশি (৫৮ শতাংশ) অন্যদিকে গড় মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়েছে, মধ্যম দরিদ্র (৯৭ শতাংশ) এবং -দরিদ্র (১০৪ শতাংশ) পরিবারের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি। গবেষণায় অনলাইন (টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদি) শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও পর্যালোচনা করা হয়। গ্রামাঞ্চলের ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং শহরাঞ্চলের ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে। অনলাইন শিক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের এবং ২৬ শতাংশ -দরিদ্র পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। উত্তরদাতারা অনলাইন শিক্ষায় অংশ নিতে না পারার কারণ হিসেবে অনলাইন ক্লাসের অপ্রাপ্যতা (৪৯ দশমিক শতাংশ), প্রয়োজনীয় ডিভাইসের অপ্রাপ্যতা ( দশমিক শতাংশ), ডিভাইসের অপ্রতুলতা ( দশমিক শতাংশ), ইন্টারনেট সংযোগের অপর্যাপ্ততা ( দশমিক শতাংশ), ইন্টারনেট সংযোগের ব্যয় বহন করতে অক্ষমতার ( দশমিক শতাংশ) কথা উল্লেখ করেছেন।

মহামারীর ফলে কাজ হারানো, পারিশ্রমিক না পাওয়া, কর্মক্ষেত্র বন্ধ হওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থান-সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। মাত্র ১৭ দশমিক দশমিক পরিবারের দাবি, তাদের সদস্যরা আগের মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পেরেছে। ৫৫ দশমিক শতাংশ পরিবার দাবি করেছে, কাজ থাকা সত্ত্বেও তাদের আয় হ্রাস পেয়েছে। দশমিক শতাংশ দাবি করেছে, তারা কাজ হারিয়েছে। শতাংশের কাজের সময় হ্রাস পেয়েছে এবং ৩৩ দশমিক শতাংশ বলেছে, তাদের কাজ শুরু হওয়ার পর কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থেকে আবার শুরু হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে সব ধরনের কর্মসংস্থানে গড় আয় কমেছে, যা স্ব-নিযুক্তদের জন্য ৩২ শতাংশ, বেতনভিত্তিক কর্মীদের জন্য ২৩ শতাংশ, দিনমজুরের জন্য ২৯ শতাংশ এবং অন্যদের জন্য ৩৫ শতাংশ।

আলোচক হিসেবে ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক . এমএম আকাশ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক . ফাহমিদা খাতুন, অর্থনীতিবিদ . জাহিদ হোসেন। ওয়েবিনারে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ৭০ জন অংশ নেন।

. এমএম আকাশ বলেন, কভিডের কারণে যে ক্ষতি হলো, এটি কি স্বল্পমেয়াদি, নাকি এত বছরের অগ্রগতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ল, সেটি ব্যাখ্যার বিষয়। এটি নির্ভর করবে ক্ষতির ধরন কেমন, কোন খাত কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সরকার যে জরুরি পদক্ষেপ নিল তা কতটুকু পর্যাপ্ত তার ওপর।

. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদি পর্যায়ে দারিদ্র্যের ওপর প্রভাব পড়ছে এবং কভিড-১৯-এর পূর্বের দারিদ্র্যবিষয়ক অর্জনগুলো কভিড-১৯-এর প্রভাবে উলটে যাবে, সেই ধারণাটি আরো জোরালো হয়েছে সমীক্ষার মাধ্যমে। স্বাভাবিক সময়েও আয়বৈষম্য, সম্পদবৈষম্য ভোগবৈষম্য বজায় ছিল, অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল অসম। কঠিন সময়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে দরিদ্রদের জন্য যথেষ্ট উপায় নেই। আর যারা সচ্ছল তাদের ওপর অত প্রভাব পড়ে না। কাজেই অসাম্য থেকে হয়তো আমরা খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাব না।

জরিপের ফলাফল উপস্থাপনের সময় . সেলিম রায়হান বলেন, জরিপের মূল উদ্দেশ্য ছিল কভিড-পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে কভিড-পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য, বৈষম্য কর্মসংস্থানের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া। ২০১৮ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সঙ্গে সানেমের করা জরিপের মধ্য থেকে হাজার ৫৭৭টি খানার ওপর জরিপ ফোনকলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সারা দেশব্যাপী জরিপটি ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন