সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর একদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। বুধবার তার অভিষেকের মধ্য দিয়ে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের মেয়াদের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন অভিষেকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন, যেগুলোর মূল কথা হবে তার পূর্বসূরি ট্রাম্পের নীতি থেকে সরে আসা এবং আগের নীতি ফিরিয়ে আনা। খবর ডয়েচে ভেলে ও ওয়াশিংটন পোস্ট।
শনিবার জো বাইডেনের একজন শীর্ষ সহযোগী এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। বাইডেনের হবু চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইন এক স্মারকে জানান, অভিষেকের দিনেই কভিড-১৯ মহামারী, অর্থনীতি, জাতিগত অন্যায্যতা দূরীকরণ, আবাসন ও শিক্ষা ঋণ, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসনের মতো অন্তত ডজনখানেক বিষয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের জন্য নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরে ব্যস্ত থাকবেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসূরি ডেমোক্র্যাট বারাক ওবামার আমলে গৃহীত বেশকিছু নীতি পাল্টে দিয়েছিলেন। সেসব নীতি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি কভিড-১৯ মহামারী শুরুর আগে থেকেই দিয়ে আসছিলেন বাইডেন।
রন ক্লেইন জানিয়েছেন, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন বাইডেন যেসব নির্বাহী আদেশ দেবেন, তার একটিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেয়ার ঘোষণা থাকবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার যেন প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হতে না পারে, সে লক্ষ্যে নিঃসরণের মাত্রা সম্মিলিতভাবে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৯টি দেশ ওই চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ছয় মাসের মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তার সেই ঘোষণা কার্যকর হয় গত ৪ নভেম্বর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক পরের দিন। ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আবার প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনবেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসনের নিয়ম বদলাতে তত্পর হন ট্রাম্প। সে সময় সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মোট ১৩টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে কড়াকড়ি চলছে। বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে নতুন নির্বাহী আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন রন ক্লেইন। পাশাপাশি শিক্ষা ঋণের কিস্তি দেয়ার বাধ্যবাধকতা স্থগিত করে এর আগে যে আদেশ দেয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা আসবে বাইডেনের অভিষেকের দিনেই। পাশাপাশি আবাসন ঋণের কিস্তি শোধে ব্যর্থতার জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রমও বন্ধ করার ঘোষণা দেবেন তিনি।
আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভ্রমণ ও ফেডারেল সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করবেন বাইডেন। এসব নির্বাহী আদেশের বেশির ভাগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন হবে না।
এর বাইরে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রত্যাশিত নতুন অভিবাসন নীতির খসড়াও ঘোষণা করবেন, যা লাখো অনিবন্ধিত অভিবাসীর বৈধতা পাওয়ার পথ তৈরি করবে। অবশ্য এ নীতি বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারের যে প্রণোদনার প্রস্তাব বাইডেন এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন, তা কংগ্রেসে পাস করাতে তাকে বেশ বেগ পেতে হবে। কারণ প্রতিনিধি পরিষদের আসনের দিক থেকে তার দল ডেমোক্রেটিক পার্টি এগিয়ে থাকলেও রিপাবলিকানদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান সামান্যই।
ক্লেইন বলেছেন, বাইডেনের প্রথম দিনের প্রতিশ্রুতির একটি বড় অংশের বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যাবে অভিষেকের পরের নয় দিনের মধ্যে। এর মধ্যে থাকবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার আওতা বাড়ানো ও সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত পণ্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা।
ক্লেইন বলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এমন এক সময়ে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, যখন জাতি চরম এক সংকটের মধ্যে রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের সময়ই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এসব সমস্যা আমলে নিয়ে তিনি দেশকে আরো ভালোভাবে গড়ে তুলবেন।
