বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

জ্বালানি তেলের বাজারে ক্ষত সহসাই কাটছে না

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীর মধ্যে পণ্যবাজারে বেশ অস্থিরতা দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছে জ্বালানি পণ্য। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের বাজারে সময় বড় ধস নামে। যদিও এখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে পণ্যটি। তবে করোনাকালের আগের অবস্থান থেকে সেটি বেশ পিছিয়ে, যা আগামী বছরেও তেমন চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে না খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠন সংস্থাগুলো। আর বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, আগামী বছরে জ্বালানি তেলের গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৪৪ ডলারের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক প্রতিবেদনে সম্প্রতি পূর্বাভাসের কথা বলা হয়েছে। খবর অয়েল প্রাইস ডটকম।

গত বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ে অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। যেখানে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, কৃষি ধাতুপণ্যের বাজার এরই মধ্যে কভিড-১৯-এর ক্ষত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলেও জ্বালানি তেলের বাজার এখনো মহামারী-পূববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারিনি। ২০২২ সালের আগে সে সম্ভাবনাও অনেক ক্ষীণ বলে মনে করছে তারা।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের বাজার চাঙ্গা করার জন্য উত্তোলনকারী দেশগুলো তাদের উত্তোলন কমিয়ে আনছে। কিন্তু এর পরও এটি বাজার তেমন চাঙ্গা করতে পারছে না। বরং জ্বালানি তেলের বাজারে একধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। আর নতুন করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কায় এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আবারো অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, আগামী বছরও জ্বালানি তেলের বাজার খুব একটা চাঙ্গা হবে না। এমনকি চীন বাদে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই জ্বালানি তেলের চাহিদা ২০১৯ সালের তুলনায় কম থাকবে। ফলে জ্বালানি পণ্যটির যে দাম বর্তমানে ৪০ ডলারের নিচে রয়েছে, সেটি আগামী বছরে খুব বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

করোনা মহামারীর মধ্যে চাহিদা কমে এসে জ্বালানি পণ্যটির দাম রেকর্ড পরিমাণ কমে যায়, যা এখন ৪০ ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চলতি বছরে জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ব্যারেলপ্রতি ৪১ ডলারে গিয়ে থামতে পারে। আর বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাশা, আগামী বছরে ব্যারেলপ্রতি গড় দাম দাঁড়াতে পারে ৪৪ ডলারে। তবে এটি ২০১৯ সালের বাজারের চেয়ে অনেক কম। সময়ে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের গড় দাম ছিল ৬১ ডলার। 

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের উত্তোলন বৃদ্ধির পাশাপাশি চাহিদা কম থাকায় মজুদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। ফলে জ্বালানি তেলের বাজারে এটিও খুবই প্রভাব ফেলবে। এমনকি ২০২২ সাল পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের নিচে থাকবে।

এছাড়া আগামী বছরে জ্বালানি তেলের উত্তোলনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাস জোটের উত্তোলনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে। ফলে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম আরো নিম্নমুখী থাকবে। একই সঙ্গে লিবিয়ার উত্তোলন বৃদ্ধিও বাজারে প্রভাব ফেলবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত হলেও উত্তোলন বৃদ্ধির মাধ্যমে জ্বালানি তেলের বাজারে যেকোনো পরিবর্তন আনার মতো সক্ষমতা রয়েছে দেশটির।

তবে জ্বালানি তেলের বাজারে মন্দা ভাব থাকলেও আগামী বছরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজার বেশ চাঙ্গা থাকবে। বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সময়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। যে কারণে সময়ে জ্বালানি পণ্যটির বাজার চাঙ্গা হবে।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, আগামী বছরে ওপেক প্লাস জোট তাদের উত্তোলন কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে হয়তো কোনো শিথিলতা আনবে না। কিন্তু বাজার চাঙ্গা করতে আরো বেশি উত্তোলন কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। কারণ জ্বালানি তেলের বাজার নিম্নমুখী থাকার কারণে তেলনির্ভর বেশির ভাগ দেশের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। অবস্থায় জোটের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, উত্তোলন আরো কমিয়ে এনে নিজ দেশের অর্থনীতিকে আরো রুগ্ণ দশায় নিয়ে যেতে রাজি হবে না অনেক দেশ, যা পরোক্ষভাবে জ্বালানি তেলের বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি করে বাজার নিম্নমুখী করতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।

উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত আধিপত্য এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সঙ্গে রাশিয়াসহ অন্যান্য উত্তোলনকারী দেশ নিয়ে ওপেক প্লাস জোট গঠিত হয়। যার নেতৃত্বে একদিকে রয়েছে সৌদি আরব, অন্যদিকে রাশিয়া। কিন্তু জোট গঠনের কিছুদিনের মধ্যেই এটিতে একের পর এক মতানৈক্যের সুর ওঠে। অনেক দেশ জোটের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, উত্তোলন হ্রাস-বৃদ্ধিতে রাজি না হওয়াসহ নানাবিধ অনৈক্য দেখা যায়। এসব কারণে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া, চুক্তির বাইরে গিয়ে উত্তোলন, রফতানি বৃদ্ধি করার মতো ঘটনা ঘটেছে। এর পরও মস্কো-রিয়াদের চেষ্টায় একের পর জ্বালানি তেলের উত্তোলন হ্রাস-বৃদ্ধির সময়সীমা পরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছে করোনা মহামারী। কারণ এর ফলে একদিকে যেমন নিজেদের মধ্যে বিরোধ আরো তীব্র হচ্ছে। অন্যদিকে বাড়ছে জ্বালানি পণ্যটির মজুদের পরিমাণ। ফলে অনেক দেশই অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে জোটের বাইরে গিয়ে উত্তোলন সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন