অন্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত নয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দূতাবাসের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাহরাইন দূতাবাসে গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনজন কর্মচারীকে পদায়ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে পদায়ন করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত না করেই। আবার গত বছর বিভিন্ন হাইকমিশনের বাণিজ্য উইংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে ধন্যবাদ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনাররা ছিলেন অন্ধকারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের এসব সিদ্ধান্তে দূতাবাসের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আর তাকে সমর্থন করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। পরে বৈঠকের আলোচনা শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো অবহিত করতে অন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে জানাতে সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে শাহরিয়ার আলম বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন ছাড়া অন্য কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন না। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনাররা পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যেকোনো মন্ত্রীর সঙ্গে যেকোনো বিষয়ে দেখা করতে পারেন। বিষয়টি দেশের জন্য কোনোক্রমেই মঙ্গলজনক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, কোনো দূতাবাসে কাউকে পদায়ন করতে হলে সেই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত না করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাহরাইন দূতাবাসে তিনজন কর্মচারীকে পদায়ন করা হয়েছে। এতে একদিকে অর্থের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এছাড়া গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন হাইকমিশনের বাণিজ্য উইংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়েছে। কিন্তু সেই চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূতদের দেয়া হয়নি। দূতাবাসগুলোর কর্মকাণ্ড এভাবে পরিচালনার ফলে সেখানকার চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে।

যেকোনো বৈদেশিক সংস্থা বা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ বা সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে কাজ করার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা দেয়ার জন্য তিনি কমিটির সভাপতির দৃষ্টি আর্কষণ করেন।

একই বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেন বলেন, কোনো মন্ত্রণালয় বা দপ্তর থেকে অন্য কোনো রাষ্ট্র বা বৈদেশিক সংস্থার সঙ্গে যেকোনো ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া উচিত। ব্যাপারে সংসদীয় কমিটির একটি নির্দেশনা থাকলে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা যেতে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বৈঠকে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অনেক সময় দেশের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন না করে বিভিন্ন বৈদেশিক সংস্থা বা রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি এমওইউ স্বাক্ষর করছে বিধায় বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি পরিহারের লক্ষ্যে অন্যান্য মন্ত্রণালয় বিভাগগুলো বিদেশী রাষ্ট্র বা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক বা চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত বা পরামর্শ গ্রহণের বিষয়টি লিখিত আকারে মন্ত্রণালয়গুলোকে অবহিত করার পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, দূতাবাসের কোনো অনিয়ম বা কোনো কিছুর ব্যত্যয় হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয় রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারেরই। ফলে সব সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিশনপ্রধানকে অবহিত রাখা খুবই জরুরি। কিন্তু বেশকিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটানো হচ্ছে। প্রথা শুরু হয়ে চলতে থাকলে মিশনপ্রধানকে কেউ মানবে না। যা শুধু কাজের ক্ষেত্রে নয়, বরং বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন