দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্দরে সময়ক্ষেপণ সবচেয়ে বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানিতে চীনের পরই অবস্থান বাংলাদেশের। পোশাকসহ দেশের পণ্য রফতানি আমদানির ৯০ শতাংশই হয় সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম সক্রিয় বন্দরটিতে জাহাজ ভেরা, পণ্য ওঠা-নামা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে অনেক সময় লাগে। বন্দর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বন্দরেই সময়ক্ষেপণ হয় সবচেয়ে বেশি।

গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) লজিস্টিকস: বাংলাদেশের আন্তঃবাণিজ্যের বর্তমান প্রেক্ষিত চ্যালেঞ্জ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক . সেলিম রায়হান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বন্দরসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য-উপাত্তের বরাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দরের তুলনামূলক টার্নঅ্যারাউন্ড টাইমের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। 

অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি . রুবানা হক। নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান . এম মাশরুর রিয়াজ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান . জায়েদী সাত্তার, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ফার্স্ট সেক্রেটারি (কাস্টম অ্যান্ড ভ্যাট) মো. আকবর হোসেন অংশগ্রহণ করেন। ওয়েবিনারে যুক্ত ছিলেন ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এনকেএ মবিন, এফসিএ, এফসিএস।

ওয়েবিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, শ্রীলংকায় পোর্ট টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম শূন্য দশমিক ৯৭ বা প্রায় একদিন। চীনে দশমিক শূন্য বা একদিনের কিছু বেশি। ভিয়েতনামে দশমিক দিন। ভারতে দশমিক ৩২ দিন এবং পাকিস্তানে দশমিক ৬১ দিন। এদিকে বাংলাদেশের বন্দরে পোর্ট টার্নওভার টাইম দশমিক ৯৯ বা প্রায় দিন। চিত্র অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পোর্ট টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম সবচেয়ে বেশি।

অধ্যাপক . সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিক পারফরম্যান্স সূচকের প্রধানত কাস্টমস, অবকাঠামো, আন্তর্জাতিক শিপমেন্ট, লজিস্টিক মান দক্ষতা, ট্র্যাকিং অ্যান্ড ট্রেসিং এবং সময়োপযোগিতা ছয়টি বিষয়টিকে বিবেচনা করা হয়। লজিস্টিক সেবা প্রদানে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছে এবং লজিস্টিক সুবিধাপ্রাপ্তির অভাবে আমাদের রফতানি বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে লজিস্টিক সুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ডিসিসিআই পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, কভিড মহামারীর কারণে ৪২ শতাংশ মনে করেন, ফ্যাক্টরি থেকে সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ১৫ দিনের বেশি সময় প্রয়োজন হয় এবং ৬২ শতাংশ উদ্যোক্তার সমুদ্রবন্দর থেকে কারখানা পর্যন্ত পণ্য আমদানিতে ১৫ দিনের বেশি সময় লেগেছে বলে মত প্রকাশ করেন।

. রুবানা হক বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সেবা নিশ্চিতকরণে আমাদের একটি নিজস্ব মানদণ্ড থাকতে হবে এবং প্রতিনিয়ত তা নজরদারির আওতায় রাখতে হবে। বাণিজ্য বিষয়ক সংস্কারকাজগুলো গুছিয়ে উপস্থাপনের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটি প্রণয়ন করা আবশ্যক। এছাড়া তিনি কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আশিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা আরো বাড়ানো এবং আশিয়ান প্লাস ওয়ান নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান।

. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, লজিস্টিক সেবা নিশ্চিতকরণ অবকাঠামো খাত এবং সাপ্লাই চেইনের উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। এছাড়া তিনি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ স্থাপনে গুরুত্বারোপ করেন।     

লজিস্টিক সেবা প্রদানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এদের সমন্বয়হীনতার অভাবে দেশের বেসরকারি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ৩০ লাখ কনটেইনার পরিবহন করা হচ্ছে জানিয়ে মো. জাফর আলম বলেন, বন্দরের সেবা প্রদানে সরকারের বেশকিছু সংস্থা জড়িত এবং সবার মধ্যকার সমন্বয় এখানে একান্ত অপরিহার্য।

মো. আকবর হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আমদানিকারকদের জন্য এনবিআর ইতোমধ্যে প্রি-অ্যারাইভাল প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চালু করেছে, ফলে বন্দরের কনটেইনার জট কমবে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে।

মুক্ত আলোচনায় বিল্ডের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, লজিস্টিক সেবা প্রদানে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা স্থাপন এবং একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব সংস্থার অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি লজিস্টিককে একটি থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন