চালু হয়নি সৌদিগামী ফ্লাইট

স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় প্রবাসীদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি সৌদি আরবে ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা আসে। তবে শিডিউল ঘোষণা করলেও সৌদি কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় চালু হয়নি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট। অন্যদিকে সাউদিয়া এয়ারলাইনসের ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতিও বাতিল করেছে বাংলাদেশ। এতে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় পড়েছেন সৌদি আরব থেকে ছুটিতে এসে আটকা থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ফিরতি টিকিট প্রাপ্তির আশায় কয়েক দিন ধরে চলছে বিক্ষোভ। যার ধারাবাহিকতায় গতকাল কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা।

জানা গেছে, সোনারগাঁও হোটেলের এক্সটেনশন ভবনে সাউদিয়া এয়ারলাইনসের বিক্রয় কেন্দ্র। টিকিট প্রাপ্তির আশায় গতকাল সকাল থেকেই সহস্রাধিক প্রবাসী হোটেলটির গাড়ি প্রবেশের পথ পেছনের দিকে (ঝিলপাড়ে) অবস্থান নেন। তাদের অবস্থানের কারণে সার্ক ফোয়ারা থেকে শাহবাগ, ফার্মগেট, পান্থপথ হাতিরঝিল রুটে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়।

বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মহামারীর সময়ে তারা অনেকেই ফিরতি টিকিট কেটে দেশে এসেছিলেন। এরই মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। কিন্তু তারা টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতে পারছেন না, ফলে তাদের চাকরি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। টিকিট প্রাপ্তির জন্য সৌদি এয়ারলাইনসের দেয়া টোকেন নম্বরের সিরিয়ালেও ব্যত্যয় ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।

এর আগে গত সোমবারও ঢাকার মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের বিক্রয় কেন্দ্রে বিক্ষোভ করেন ছুটিতে দেশে এসে আটকে পড়া সৌদি প্রবাসীরা। পরে সেখান থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসেও বিক্ষোভ করেন তারা।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত এক গণশুনানিতে বলেন, এতদিন সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের আকাশপথে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই ফ্লাইট শুরু করেছে। আমরা চাচ্ছিলাম সৌদি আরব থেকেও ফ্লাইট শুরু হোক। তিনি বলেন, বাংলাদেশীদের ফিরে যেতে সাউদিয়া যে কয়টা ফ্লাইটের অনুমোদন চাইবে, আমরা দেব।

মফিদুর রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ আগে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস আমাদের কাছে অনুমোদন চায়, আমরা অনুমতি দিয়েছি। যদিও আমাদের বাংলাদেশী এয়ারলাইনসও সেদেশে যেতে পারবে, শর্তে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি, যাদের আকামার মেয়াদ আছে তারা যেতে পারবেন। শুধু ভিজিট ভিসা ওমরা ভিসায় যাওয়া যাবে না। আমরা জানতে পারলাম, বিমানকে চার্টার্ড ফ্লাইটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ফ্লাইটের অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিমানকে অনুমোদন না দেয়ায় অনেকেই চাচ্ছিলেন সাউদিয়ার অনুমোদন বাতিল করা হোক, কিন্তু আমরা সিভিল এভিয়েশন থেকে বাতিল করিনি। আমাদের বাংলাদেশী প্রবাসী ভাইদের যাওয়া নিশ্চিত করতে সাউদিয়া বিমান যেন চলাচল করতে পারে, সে বিষয়ে কথা বলেছি।

বেবিচক চেয়ারমান বলেন, আমাদের বিমানও যেন যেতে পারে, সেই চেষ্টা করছি। বিমান থেকে জানতে পেরেছি, তারা এখনো অপারেশনের অনুমতি পায়নি। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আমরা সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশীদের ফিরে যেতে সাউদিয়া যে কয়টা ফ্লাইটের অনুমোদন চাইবে, আমরা দেব। তবুও যেন প্রবাসীরা ফিরে যেতে পারেন। একই সঙ্গে আমাদের বিমান বাংলাদেশও যেন যেতে পারে, সেজন্য কাজ করছি।

ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মফিদুর রহমান বলেন, সাউদিয়া এয়ারলাইনস জানিয়েছে তারা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে ব্লক করেনি। ট্রাভেল এজেন্সিও টিকিট বিক্রি করছে। আমাদের দেশী কিছু এজেন্সি টিকিট ব্লক করে ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা আমাদের প্রবাসীদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। বিমান চালু হলে যাত্রীরা সুবিধা পাবেন বলে জানান বেবিচক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিমান নতুন করে টিকিট বিক্রি করবে না।

এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি আরবে ল্যান্ডিং পারমিশন এখনো পাওয়া যায়নি বলে তারা টিকিট ছাড়তে পারছেন না। অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফ্লাইট ঘোষণা করা হবে এবং যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হবে। যারা ফিরতি টিকিট কেটে এসেছেন তাদের আসন আগে বরাদ্দ করা হবে, আপাতত নতুন টিকিট বিক্রি করা হবে না বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রেক্ষাপটে গত প্রায় ছয় মাস বন্ধ রয়েছে সাউদিয়ার ফ্লাইট। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার তাদের ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ঢাকা থেকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছিল সাউদিয়া এয়ারলাইনসকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ সেপ্টেম্বর হতে ঢাকা থেকে সৌদি আরবে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণাও দিয়েছিল এয়ারলাইনসটি। এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সৌদি আরবের তিন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে সৌদি আরবে আবেদন করেও ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পায়নি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কারণে সৌদি আরবের এয়ারলাইনসের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি বাতিল করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন