পেঁয়াজের প্রাপ্যতা স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৮ পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করেই প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বাজার। তবে পেঁয়াজের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গেল বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার আগেভাগেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আজ বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ বিষয়ে ডাকা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশে পেঁয়াজের কোন সংকট নেই উল্লেখ করে প্রেস ব্রিফিংয়ে টিপু মুনশি বলেন, পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। আমাদের জানা মতে বিশেষ করে দেশীয় পেঁয়াজের বর্তমান মজুত প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশের পেঁয়াজ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর পাইকারী হাট-বাজারে বিপুল পরিমান পেঁয়াজ ক্রয়-বিক্রয় ও হচ্ছে, সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার কারণে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প পথে এলসির মাধ্যমে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে পৌঁছালে অল্প সময়ের মধ্যেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কাজের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মনিটরিং করে থাকে। আপনারা সবাই একমত হবে গত রমজান মাসে ও করোনাকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি ছিল অভূতপূর্ব। সে কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে; যা প্রতি মাসে মিটিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

পেঁয়াজকে ‘আংশিক আমদানি নির্ভর’ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, নিকট অতীতে পেজের বাজার বেশ কয়েকবার অস্থিতিশীল হয়েছে। গতবছর এ সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে আমাদের দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন, এর বিপরীতে এবছর আমাদের উৎপাদন হয় ২৫ দশমিক ৫৭ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য। উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫ ভাগ ‘প্রসেস লস’ হয়ে থাকে। সে মোতাবেক এ মৌসুমে পেঁয়াজের প্রকৃত উৎপাদন ছিল প্রায় ১৯ দশমিক ১১ লাখ মেট্রিক টন।

গেল বছরের পরিস্থিতি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল ৪ দশমিক ৫৯ লাখ মেট্রিক টন। আন্তর্জাতিক বাজারে পেয়াজ সংকটের কারণে আমদানি কম ছিল। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে আমদানির পরিমান ছিল ১০ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন।

চলতি অর্থবছরে গত জুলাই ও আগস্ট এ ২ মাসে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে বাংলাদেশে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চাহিদা মোতাবেক বাজারে পেঁয়াজের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে-

১) পেয়াজ রফতানির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের সাথে কুটনীতিক মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র সচিবকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
২) আমদানিকৃত পেয়াজ স্থলবন্দর হতে দ্রুততম সময়ে ছাড় করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এনবিআর-এর চেয়ারম্যান এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
৩) আগামী মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত পেঁয়াজের উপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আপাতত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পুনরায় পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
৪) পেঁয়াজের বিষয়ে দ্রুত সংনিরোধ সনদ ইস্যু করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
৫) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং জোরদার করেছে।
৬) দেশের পেয়াজ উৎপাদনকারী জেলা (ফরিদপুর, পাবনা, রাজবাড়ী রাজশাহী, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটরসহ সকল জেলার জেলা প্রশাসকগণকে সরবরাহ ক্ষেত্রে যাতে কোন ধরনের সমস্যা না থাকে, সে বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনজন যুগ্ম-সচিবকে উল্লিখিত জেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি বন্দরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। ৭) মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকগণের নিকট বাজার মনিটরিং জোরদার করতে পত্র প্রেরণ করেছেন।
৮) পেয়াজ আমদানিকারকদের এলসি খোলার সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, দেশে পেঁয়াজের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ দেশব্যাপী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি কেজি ৩০ টাকা মূল্যে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রয় শুরু হয়েছে। এর ফলে বাজারে পেঁয়াজের মূল্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পেঁয়াজ বিক্রির এ কার্যক্রম আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবি’র মাধ্যমে এবারে ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ আমদানি ও বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জানিয়ে মন্ত্রী জানান, বিশেষ করে টিসিবি এবার ই-কমার্সের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রয় করবে। 

পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করা হলে সরকার প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখানে উল্লেখ করতে চাই, গতকাল দেশব্যাপী ৫৩টি বাজার মনিটরিং টিম ১০৭টি অভিযান পরিচালনা করে এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন