সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা সড়ক

শতকোটি টাকার ‘ব্যর্থ’ প্রকল্প শেষে ৫৫০ কোটি টাকার নতুন প্রস্তাব

শামীম রাহমান

শতকোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি সাত বছরেও। ২০১৭ সালের জুনে অসমাপ্ত অবস্থায়ই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। আদতে সে সড়ক স্থানীয় জনগণের কোনো কাজেই আসেনি। বর্তমানে সড়কটি উন্নয়নে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার নতুন আরেকটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।

সুনামগঞ্জের দিরাই শাল্লা উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে দিরাই-শাল্লা মহাসড়ক নির্মাণে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। সাড়ে ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির নির্মাণকাজও শুরু হয় ২০১১ সালে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১২০ কোটি টাকা। হাওড়ের বুকে মাটি ভরাট, সড়ক নির্মাণ, বিভিন্ন পয়েন্টে সেতুসহ পুরো সড়কটি পাকা করার কথা থাকলেও কাজ শেষ করতে পারেনি সওজ। কাজ অসমাপ্ত রেখে ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। ১২০ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয় প্রায় ৯৯ কোটি টাকা। অসমাপ্ত সড়ক এলাকাবাসীর কোনো কাজেই লাগেনি। এবার সড়কটি উন্নয়নে নতুন আরেকটি প্রকল্প নিতে চাইছে সওজ।

২০১০ সালে সুনামগঞ্জ সফরে গিয়ে দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরের বছরই হাওড়ের বুকে মাটি ভরাট করে শুরু হয় সড়কটির নির্মাণকাজ। শুরু থেকেই ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হতে থাকে প্রকল্পটি। ২০১৭ সালে যখন অসমাপ্ত রেখে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ বলে ঘোষণা দেয়া হয়, তখনো মাটির কাজ ১০ শতাংশের মতো বাকি ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যা থেকে সড়কটিকে সুরক্ষা দিতে ব্লক ফেলা হয় যেনতেনভাবে। ১১টি সেতু-কালভার্ট বানানো হলেও সেগুলোর সঙ্গে সড়কটিকে যুক্ত করা হয়নি। পিচ ঢালাইয়ের (ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট) কাজও অসমাপ্তই থেকে গিয়েছে। কোনো কোনো স্থানে মাটি ভরাট করেই শেষ করে দেয়া হয় নির্মাণকাজ। পাঁচ বছরে ৯৯ কোটি টাকা খরচ করেও সড়কটিকে ব্যবহার উপযোগী করা যায়নি। মাটি ভরাট করে যেটুকু সড়ক অবকাঠামো দাঁড় করানো হয়েছিল পরপর তিন বছরের বন্যায় তা- বিলীন হওয়ার পর্যায়ে চলে এসেছে।

সুনামগঞ্জ-আজমিরীগঞ্জ হবিগঞ্জের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহনের সুবিধা তৈরি করতে হাতে নেয়া হয়েছিল প্রকল্পটি। যদিও এর কোনো সুফল পায়নি স্থানীয় বাসিন্দারা। দুর্বল নির্মাণকাজের কারণে সড়কের ওয়াশআউট হয়ে পড়া (ক্ষয়ে যাওয়া) অংশ সংযোগ সড়কবিহীন সেতুগুলো কারো কোনো কাজে আসছে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদার কারণে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে শতকোটি টাকায় নির্মিত মাটির রাস্তাটি

শতকোটি টাকার প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পর এবার সড়কটি পুনর্নির্মাণে ৫৫২ কোটি টাকার নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে সওজ অধিদপ্তর। প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের বন্যায় দিরাই-শাল্লা সংশ্লিষ্ট সড়ক বাঁধের বেশকিছু অংশ ওয়াশআউট হয়ে যায়। দিরাই উপজেলার সঙ্গে শাল্লার যোগাযোগ হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। এরপর ২০১৯ ২০২০ সালের বন্যায় সড়কটির অধিকাংশ স্থান ওয়াশআউট বিধ্বস্ত হয়ে যায়। বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় সড়কটির পেভমেন্ট পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত সড়কটি বাস্তবায়িত হলে অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে তা স্থানীয়দের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পটি ২০২০ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। তবে আনুষঙ্গিক কাজগুলো শেষ করে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মত দিয়েছে দিরাই-শাল্লা সড়ক পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ যাচাই কমিটি।

প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট পুনর্নির্মাণ, বেজকোর্স, ওয়্যারিং কোর্স, রিজিড পেভমেন্ট, পিসি গার্ডার সেতু, বক্স কালভার্ট, ব্রিক টো-ওয়াল, ইউটিলিটি স্থানান্তরসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গ যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা।

সম্প্রতি প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর অভ্যন্তরীণ যাচাই কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। সভায় সড়কটির নির্মাণকাজে নেয়া আগের প্রকল্পটি নিয়েও আলোচনা হয়।

উল্লেখ্য, অসমাপ্ত রেখে সড়কটির কাজ শেষ করার পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগে (আইএমইডি) একটি পিসিআর রিপোর্ট দিয়েছিল সওজ অধিদপ্তর। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএমইডি মূল্যায়ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে বেশকিছু সুপারিশও করেছিল। তবে ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সওজ অধিদপ্তর কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ যাচাই কমিটির সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সচিব।

প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বণিক বার্তার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি আল আমিন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন