আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কী হবে, কেমন হবে

মাহমুদ রেজা চৌধুরী

সকালে উঠেই প্রিয় বন্ধু মঈনুল আহসান সাবেরের একটা পোস্ট দেখলাম ফেসবুক ওয়ালে। ও লিখেছে, লেখকেরা যেন প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখেন। না লিখতে পারলেও লেখার টেবিলে যেন বসেন, দরকার হলে একটি শব্দও যেন লেখেন। ভাবলাম কথাটা তো লেখকদের জন্য। আমি লেখক নই, তবে অনেক লেখকের বন্ধু। বন্ধুর কথার প্রতি সম্মান রেখে ভাবলাম, লেখা না হলেও দু-একটা রেখা আঁকি।

এই এলোমেলো রেখাগুলো কখনো লেখা হয়ে যায় যদি! উল্লেখিত বিষয়ের ওপর বলতে গেলে গত বছরের শেষ থেকে কিছুমনের ভাবনা প্রকাশ করেছি, যেটা নিউইয়র্কের ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’ পত্রিকায় কর্তৃপক্ষ তখন ছেপেছেন। পত্রিকার সিনিয়র সম্পাদক শ্রদ্ধেয় এবং প্রিয় মুহম্মদ ফজলুর রহমান ভাই এ বিষয়ে আমাকে এই নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত লিখতে বলেছিলেন। এরপর বেশ একটা সময় এই শিরোনামে কোনো রেখা আঁকিনি। দুই সপ্তাহ আগে সম্ভবত আবার আঁকা ধরেছি, উল্লিখিত শিরোনামে। এটা এর তৃতীয় অনুচ্ছেদ। এর মধ্যে প্রিয় বন্ধু, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সম্মানিত প্রফেসর ড. আলী রীয়াজের সঙ্গে এ বিষয়ে ওর ভাবনা নিয়ে একটুকথা বলেছি।

কথা প্রসঙ্গে রীয়াজ ওর আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন নির্বাচনের পুরো বিষয়টা নিয়ে। প্রফেসর আলী রীয়াজ দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতি ও সরকার বিষয়ে একজন শ্রদ্ধেয় ও গুণী ব্যক্তিত্ব, যেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। রীয়াজের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণকে তাই কমবেশি অনেকেই গুরুত্ব দেন। সংক্ষেপে, প্রফেসর আলী রীয়াজের আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে তিনটি প্রধান আশঙ্কার কথা বলি। লেখাটা বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকা ‘প্রথম আলো’তে প্রকাশিতও হয়েছে সম্প্রতি।

১. প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রার্থীরা কতটা এবার ভোটারদের কাছে তাদের লক্ষ্য এবং পরিকল্পনাকে পৌঁছে দিতে পারবেন। ভোটারদের সঙ্গে প্রার্থীদের এবারকার সখ্য কতটা কেমন হতে পারে। একটি চ্যালেঞ্জ।

২. দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ, বর্তমান ‘কভিড-১৯’ মহাদুর্যোগ চলাকালে ভোটাররাও-বা কতটা নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং ভোট দিতে পারবেন। এ ব্যাপারে একটা স্বাস্থ্যঝুঁকি বা নিরাপত্তা প্রশ্নের আশঙ্কাও আছে। এ বিষয়টাও চ্যালেঞ্জের।

৩. আসন্ন নির্বাচনে ‘ইউনিভার্সেল মেইলিং ভোট’ নিয়ে এখন যে দ্বন্দ্ব  ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিয়ে শেষ পর্যন্ত কী হয়, বলা কঠিন। মোটামুটি এই তিনটা বিষয়কে প্রফেসর রীয়াজ গুরুত্বসহকারে দেখছেন। উল্লিখিত তিনটি বিষয় কিন্তু আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিভিন্ন দেশেও একটি আশঙ্কার সৃষ্টি করছে বলা যায়। যে কারণে বিষয়টি ভাবায়। ২ এরই মধ্যে আরেকটি বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বিবিসির একটি আলোচনা দেখলাম। আলোচনায় একটা বিষয় উঠে আসছে, সেটা হলো ভারতীয় আমেরিকানদের এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের ভ‚মিকাটা কী বা কেমন হবে অথবা হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের একজন সমর্থক। অপরদিকে ভারতের বর্তমান মোদি সরকার একইভাবে ট্রাম্পের সমর্থক। কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ভারত সফরে গেলেন, তখন ভারতবাসীর একটা বড় অংশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে খুশি। ভারতীয় ও আমেরিকান ভারতীয়দের ট্রাম্পকে সমর্থনের পেছনে একটি বড় কারণ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, হতেও পারে।

ট্রাম্প মুসলিমবিরোধী এবং বর্তমান মোদি সরকারও একই নীতি অনুসরণের পক্ষে। স্বভাবত এ কারণে বর্তমান ভারতের এবং আমেরিকান ভারতীয়দের ট্রাম্পের ব্যাপারে কিছুটা ইতিবাচক স্পর্শকাতরতা আছে। অস্বীকার কিংবা অবহেলা করা যাবে না। ইতিমধ্যেই এর একটা গুঞ্জন শোনা এবং আলোড়ন দেখা যাচ্ছে, যেটা বিবিসির সাম্প্রতিক একটি আলোচনায় উঠে আসছে। কেন এই আলোচনাটা। কারণ হলো ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট মিস্টার জো বাইডেন তার রানিংমেট হিসেবে যখন একজন ভারতীয় আফ্রিকান বংশোদ্ভ‚ত সিনেটর কমলা হ্যারিসকে মনোনীত করলেন, তখন থেকেই শুরু এই গুঞ্জনের।

ভারতীয় বংশোদ্ভুত ভারতীয় আমেরিকানরা ভাবছেন কমলা কোনো-না-কোনোভাবে ভারতীয় বংশোদ্ভ‚ত যখন, তখন এটা কিছুটা প্রমাণিত হয় যে মিস্টার জো বাইডেন ভারতবিরোধী নন। অন্যদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভ‚ত ভারতীয় আমেরিকানরা অনেকে মনে করেন, ট্রাম্প যেভাবে মুসলিমবিরোধী, যেটা অনেক ভারতীয়ের পছন্দ, সেটা হয়তো প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিস্টার জো বাইডেন সে রকম হবেন না। যদিও উল্লেখ করা দরকার, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিস্টার জো বাইডেন তার রানিংমেট কে হবেন, এটা নির্ধারণের ব্যাপারে কমলা ভারতীয় বংশোদ্ভুত কি না, বিষয়টা হয়তো অগ্রাধিকার ছিল না।

অগ্রাধিকার হয়তো-বা ছিল ভবিষ্যৎ আমেরিকার রাজনীতিতে বর্ণবৈষম্যবাদ এবং জেন্ডার বৈষম্য বিষয়টাকে কিছুটা সীমিত আকারে নেবার ভাবনা। ভারতীয় আমেরিকান নাগরিকেরা কী ভ‚মিকা পালন করবেন। উল্লিখিত আলোচনায় দেখলাম, ইতিমধ্যে শোর উঠেছে এই বলে যে ‘হিন্দু ফর ডোনাল্ড ট্রাম্প’। আরেক পক্ষ বলছে ‘ইন্ডিয়া ফর জো বাইডেন’। এ-রকম জাতীয়তাবাদী বিভক্তি, এ-রকম সংকীর্ণ চিন্তা এর আগে আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছিল কি না জানি না। তবে আমেরিকার নির্বাচনে অল্পবিস্তর সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের গায়ের রং (বর্ণবাদ) বিষয়টা প্রভাবিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাসে বহু দৃষ্টান্ত আছে এই বিষয়ে।

এর সঙ্গে এবারও আছে রাশান প্রশাসনের আগ্রহÑমিস্টার ট্রাম্পকে পুনর্নির্বাচিত হতে দেখা। অন্যদিকে অনেকে মনে করেন, চীন চাচ্ছে মিস্টার জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট দেখতে। সোজাসাপ্টা কথায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও শেষ পর্যন্ত বাইরের কোনো শক্তি বা কোনো উগ্র ‘জাতীয়তাবাদী’ চিন্তাধারায় প্রভাবিত হতে যাচ্ছে এবং প্রভাবিত হচ্ছে। ৩ এর সূচনা কবে হয়েছে বলতে পারব না, তবে দৃশ্যত সূচনা ২০১৬ সাল থেকে, যেখানে সরাসরি অভিযোগ এসেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নিয়ে। মজার বিষয় এটা যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধীরা বলছেন রাশিয়ার কথা। আর ট্রাম্পের সমর্থকেরা আঙুল তুলছেন চীনের প্রতি।

বিশ্ব আজ কোন পথে এগোচ্ছে। ভবিষ্যৎ ‘গণতন্ত্র’-এর সংজ্ঞা কেমন হবে বা হতে পারে। ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতির এবং আদর্শের একটি বড় জায়গা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের নেতা-নেত্রী এবং জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা। রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া। এটা আর নির্দিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের নাগরিকদের একক নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারছে না। হাইজ্যাক হয়ে গেছে গ্লোবাল  রাজনীতির কারণে এবং করপোরেট ডেমোক্রেসির স্বার্থের নেটওয়ার্কে। উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা, বর্ণবাদী চিন্তা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমূলক চিন্তা, নাগরিকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অনিরাপত্তা, গায়ের জোর, অটোক্রেসি, দুঃশাসন ও অন্যায্য বিচারের সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে বিশ্বে এখন গণতন্ত্রের নামে এবং এর মোড়কে। একটি কারণ, রাজনীতি এখন কেবল ‘ক্ষমতা’র জালে বন্দী। ধীরে ধীরে এসব গণতন্ত্রে অনুপ্রবেশ করে গণতন্ত্রের ঐক্যকে সহমতসহিষ্ণুতা এবং সহবাস নীতিকে খণ্ডিত  করে দিচ্ছে।

এখন পৃথিবীর ছোট-বড় সব দেশেই দেখা যাচ্ছে, গণতন্ত্র নয়, স্বৈরতন্ত্র। বিভেদ বিশৃঙ্খলা। দুর্নীতি ও দুঃশাসন। এসব কিছু গণতন্ত্রের মোড়কে বিক্রি হচ্ছে। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি বড় আশঙ্কা, এর ফলাফল শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে। এই কী হতে পারে কথার অর্থ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলটা কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে, নাকি কোনো অপশক্তির ‘শোডাউনে’ হবে। যদি শক্তির দ্বারা হয়, সেই শক্তির মহড়া রক্তশূন্য হবে কি না। এর মধ্যে গেল সপ্তাহে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচন পূর্বের ন্যাশনাল কনভেনশন হয়ে গেল ১৭ আগস্ট। এই কনভেনশনটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী হলেও একটি সফল কনভেনশন বলা যেতে পারে।

পার্টির মনোনীত ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনেটর কমলা হ্যারিস এবং প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিস্টার জো বাইডেন তাদের নিজ নিজ বক্তব্যকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছে অনেকটাই স্পষ্ট করতে সফল হয়েছেন। এই কনভেনশনের ব্যতিক্রমী দিকটি ছিল, এবারই প্রথম সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাসে কোনো রকম জনসমাগমের উপস্থিতি ছাড়া শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থীরা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন এমনভাবে, তাতে মনে হয়েছে তাদের সামনে লাখ লাখ সমর্থক বসে আছেন।

‘কভিড-১৯’-এর জনস্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে এবারকার কনভেনশন পুরোটাই ভার্চুয়াল কনভেনশন হল। মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প যদিও এ ধরনের কনভেনশনের পক্ষপাতী নন এবং সমর্থক নন, তবু তাকেও তার দলের মনোনয়নকে এ-রকম আরেকটি ভার্চুয়াল কনভেনশনের মাধ্যমেই গ্রহণ করতে হবে। যা-ই হোক, এই কনভেনশনের ব্যাপারে তেমন কিছু এই মুহূর্তে বলার নেই। সামনে রিপাবলিকান দলের কনভেনশন আছে, সেখানে রিপাবলিকান দল তাদের পক্ষেও নানা রকম যুক্তিতর্ক সঙ্গে ‘কুতর্ক’ উপস্থাপন করবে, কোনো সন্দেহ নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ব্যাপারে কোনো জুড়ি নেই বলা যায়। একটা অত্যন্ত নিম্নমানের ক্ষমতালোভী ও উদ্ধত চরিত্রের মানুষ মিস্টার ট্রাম্প; যার মাঝে কোনো ভদ্রতা, শিষ্টতা, সৌজন্য ব্যবহার, সহমর্মিতা বা কোনো ধরনের ‘ঊসঢ়ধঃযু’ নেই, যেটা যেকোনো নেতার চারিত্রিক একটি বড় গুণ।

৪ এসবের কোনো কিছুই নেই মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো প্রকাশে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের লজ্জা হওয়া উচিত এ রকম একটা অসভ্য ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। উল্লেখ্য যে এই প্রেসিডেন্টের যারা একসময় খুব কাছে ছিলেন, বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছেন, অধিকাংশই এরা এখন কারাগারে। অভিযোগ কী? মিথ্যাবাদিতা, অর্থ আত্মসাৎ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক পদক্ষেপ। আরো অনেক। এদের মধ্যে যারা একটুনিজেদের আত্মসম্মানের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন, তারা পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করার পরে তারা অনেকেই মিস্টার ট্রাম্পের অসততা নিয়ে কথা বলেছেন। যারাই ট্রাম্পের বিপক্ষে গেছে, তাদের তুলাধোনা করে ছেড়েছেন মিস্টার ট্রাম্প। এই হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটিজি। উনি আনুগত্য চান শুধুতার প্রতি, চোর-ডাকাত-মাস্তান যা চায়। কনভেনশনে কোন দল কী বলল, সেটা নাগরিকদের কতটা প্রভাবিত করবে। এই নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সেটার ব্যাপারে একধরনের আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। কারণ, ইতিহাসে প্রায়ই দেখি, অসুরের সঙ্গে সুরের লড়াই।

এতে অনেক সময় সুর হেরে যায়, অসুর জেতে। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা যদি বিপুল ভোটে ডেমোক্র্যাটিক দলকে বিজয়ী করে আনতে না পারেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাগ্যে অসুরের ছায়া আরো বাড়তে পারে। মিস্টার ট্রাম্পের মতো একজন নিম্নশ্রেণির মানুষ, অসভ্য মিথ্যাবাদী মানুষ, একজন অপদার্থ ও দাম্ভিক মানুষ, হোয়াইট হাউসে আবার ফিরে এলে পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা আছে। এবারের নির্বাচনী লড়াইটা কেবলই ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের ক্যান্ডিডেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জড়িত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতির ভবিষ্যৎ।

সততার সঙ্গে অসততার লড়াই। বিনয়, ভদ্রতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা- এসবের বিরুদ্ধে অসভ্য শক্তির লড়াই। এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে টিকে যাবে কে বা পড়ে যাবে, বলা কঠিন হলেও আশঙ্কা হয়, এই যুদ্ধে যদি মানবতার পরাজয় হয়, বিনয় ও ভদ্রতা এবং সৌজন্যের পরাজয় হয়, তার অশুভ ফল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ভবিষ্যতের পথে বড় রকমের নেতিবাচক পরিবর্তন এনে দিতে পারে। সেই পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর আগামী ভবিষ্যৎ আরো বেশি সংঘাতময় হওয়ার আশঙ্কা আছে। ইতিমধ্যে যার কিছু নমুনা দেখছি। ট্রাম্পের বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য নীতি, রাশিয়া ও চীননীতি। এ ব্যাপারে তার চিন্তা এবং পদক্ষেপ ধর্মবিদ্বেষ এবং অন্যান্য বর্ণবাদী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো চার বছর এসব যদি প্র্যাকটিস করতে পারেন, আমেরিকার জন্য সেটা কোনোভাবেই আমেরিকার ঐতিহ্যকে তার প্রতি বিশ্ব আস্থাকে ধরে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। রাজনীতিতে যদি ট্রাম্প নীতি, ট্রাম্পইজম বা স্ট্র্যাটেজি বলে কিছু প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তখন ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রভাবশালী থার্ড পার্টি, ‘ট্রাম্প পার্টি’ সৃষ্টি হতেও পারে, যার উদ্দেশ্য থাকবে ‘জোর যার মুল্লুক তার’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এই নীতিকে প্রতিষ্ঠা করা। অনেকের মতে, যেটা এখনো আছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগে এ বিষয়টির ব্যাপারে যে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স ছিল, এই জায়গাটাকে মিস্টার ট্রাম্প ভেঙেচুরে দিয়েছেন। মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই পথে নিঃশর্তভাবে সাহায্য করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মিডিয়া, যার নাম ‘ফক্স’ টেলিভিশন।

৫ এই ইলেকট্রনিক মিডিয়া রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা এমনভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কথা বলছেন, শুনলে মনে হবে এই চ্যানেলের মালিকানা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এটা এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরেকটি ব্যক্তিগত সংগঠন/ প্রতিষ্ঠান। এসব কারণে একটা আতঙ্ক, একটা শঙ্কাও কাজ করছে, কী জানি কী হয়। মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যদি বিপুল ভোটে পরাজিত করা না যায়, সে ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর যে করবেন না, সেটা আজ স্পষ্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বডি পলিটিকস এবং তার একক সিদ্ধান্ত, ইচ্ছা এবং ভোটের রায়ের ব্যাপারে আগে থেকেই একটা সন্দেহ প্রকাশ ও কুয়াশা সৃষ্টি করা।

সঙ্গে ভোটের রায়কে তার একক নিয়ন্ত্রণে রাখার শেষ রক্তবিন্দু মিস্টার ট্রাম্প দিতে চেষ্টা করবেন। জানি না ডেমোক্রেট দলের এ ব্যাপারে কতটা এবং কী রকম প্রস্তুতি আছে মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে এই রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে সরানোর। মিথ্যার বিরুদ্ধে, অসভ্য ও বর্বরতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবার কি বিজয়ী হতে পারবে? এখন এটা স্পষ্ট বলা যাচ্ছে না। দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়। লিখতে, লিখতে মনে পড়ল বিখ্যাত দার্শনিক ও কবি রুমির একটি কবিতার কথা। মনে হলো প্রাসঙ্গিক হবে এই লেখাটার সঙ্গে। কবিতাটি পড়লে আগামী নির্বাচনে আমাদের মন স্থির করতে পারব, কাকে ভোট দেব। বিষয়টা কিছুটা সহায়ক হতেও পারে।

আমি এর আগে কখনো ভোট দিইনি। এবার মনে হয়েছে, আমেরিকার দুটি পার্টি ডেমোক্র্যাটিক দল ও রিপাবলিকান একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কিন্তু এবার এই প্রথম মনে হলো এর একটি পিঠ না বদলাতে পারলে ভবিষ্যৎ মানবসভ্যতার পক্ষে কোনো পরোক্ষ ভ‚মিকাও রাখা সম্ভব হবে না। 

মাহমুদ রেজা চৌধুরী

সমাজ ও রাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক 

নিউইয়র্ক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন