হল নির্মাণের জন্য টিলা কাটছে শাবিপ্রবি

দেবাশীষ দেবু সিলেট

ছাত্রী হল নির্মাণের জন্য টিলা কেটে সমতল করছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী না থাকার সুযোগে এক্সক্যাভেটর দিয়ে টিলা কাটা হচ্ছে। এরই মধ্যে বড় একটি অংশ কাটা শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, টিলার পাদদেশের কিছু অংশ সমতল করা হয়েছে। টিলা কাটা হয়নি। তবে নিয়েও আপত্তি আসায় কাটা বন্ধ রাখতে এক্সক্যাভেটর সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাঁর দাবি, একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন চায় না। তাই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তবে টিলা কাটা টিলার পাদদেশ সমতল করার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর () ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন অথবা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটার ব্যাপারে উচ্চ আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাহাড় বা টিলা কাটার কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। তবে তারা টিলা কাটছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ পেয়েছি। ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করলে তারা এমন কিছু করছে না বলে জানিয়েছে। তবু আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।

জানা যায়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে বেগম ফজিলাতুন্নেছার নামে একটি ছাত্রী হল নির্মিত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ছাত্রী হল রয়েছে। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হল বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল নামে দুটি ছাত্রী হলের মধ্যবর্তী স্থানেই নির্মিত হচ্ছে নতুন হলটি।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি বিভিন্ন উঁচু নিচু টিলায় ঘেরা। নির্বিতব্য হলের জন্য নির্ধারিত জায়গার কিছু অংশও টিলা শ্রেণীর ভূমি। হল নির্মাণে ভূমি সমতল করতে গত সপ্তাহ থেকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাঝারি উচ্চতার টিলা কাটার কাজ শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন নতুন ছাত্রী হলটির কাজ পেয়েছে মেসার্স সিএফ করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারাই মেশিন দিয়ে টিলা কাটছে। টিলার কাটার মাটি ফেলে রাখা হয়েছে পার্শ্ববর্তী নিচু জমিতে। ওই মাটি দিয়ে নিচু জায়গা সমতল করার কাজ করছেন শ্রমিকরা।

টিলা কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএফ করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক হেদায়াতুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে টিলা ধসে পড়ে। তাই আমরা ধস ঠেকাতে টিলার পাশে গার্ডওয়াল নির্মাণ করার জন্য কিছু মাটি সরিয়ে নিচ্ছি। টিলা কাটছি না।

ব্যাপারে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি পরিবেশপ্রেমী মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ২৫ হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আমার সময়ে এখানে কোনো পরিবেশবিধ্বংসী কাজ হবে না।

তিনি বলেন, হল নির্মাণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিলার পাদদেশের কিছু মাটি সরিয়ে নিয়েছিল। এটা নিয়েই অনেকে অপপ্রচার শুরু করে দিয়েছে। আমার কাছে খবর পৌঁছার পর শুক্রবার আমি তাদের মাটি সরানোর কাজ বন্ধ রাখতে মেশিন সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আর মাটি কাটা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কারো চাকরি থাকবে না বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছি।

উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এতদিনেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। আমি অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। কিন্তু একটা গোষ্ঠী চায় না এসব উন্নয়ন হোক। তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবু আমি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। হলের জন্য নির্ধারিত জায়গার বর্তমান অবস্থার ভিডিও করেও পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে কাজ অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন