এন্ড্রু কিশোর স্মরণে...

ফিচার প্রতিবেদক

কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর চলে যাওয়া দেশের সংগীতজগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। বিশেষ করে প্লেব্যাক গানে। বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। সেসব গান এখনো মানুষের হদয়ে স্থান দখল করে আছে। তার এমনই কণ্ঠ যে কণ্ঠে মানিয়ে যেত যেকোনো ধরনের গান। কয়েক প্রজন্ম তার গান শুনে বেড়ে উঠেছে। তার চলে যাওয়ায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমেছে শোকের ছায়া। তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অনুভূতি স্মতিচারণ করছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা। এন্ড্রু কিশোর দেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। গানের জগতে তার সঙ্গে সফল জুটি গড়ে উঠেছিল। কিশোরের মত্যুতে শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন জীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পী। তার সঙ্গে তোলা পুরনো একটি ছবি শেয়ার করে রুনা লায়লা ফেসবুকে ইংরেজিতে একটি পোস্ট শেয়ার করেন, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় এমনখুব দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমাদের সংগীত অঙ্গনের এক অমর নাম এন্ড্রু কিশোরকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। সুমধুর কণ্ঠ আর হূদয় নাড়া দেয়া গানগুলোর মাধ্যমে এন্ড্রু কিশোর সবসময় আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। তার গানগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও উদ্বুদ্ধ করবে। তার মৃত্যুতে পরিবারের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো, তাদের জন্য সমবেদনা রইল। ঈশ্বর তাদের ধৈর্য ধরার ক্ষমতা দিন। এন্ড্রু কিশোরের আত্মার প্রশান্তি কমনা করছি।

এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে একাধিক প্লেব্যাক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কনকচাঁপা। সাগরের মতই গভীর, ভালো আছি ভালো থেকো, একদিন তোমাকে না দেখলে, আমার হদয় একটা আয়নাসহ আরো অনেক শ্রোতাপ্রিয় গানে কণ্ঠ মিলিয়েছেন তারা। সহশিল্পীর মত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কনকচাঁপা লিখেছেন, বাংলাদেশের একজনই এন্ড্রু কিশোর তিনি ছিলেন আছেন থাকবেন তার কর্মের মাঝে। হে গুণী, আপনার জন্য রইল আমার আজীবনের শ্রদ্ধা।

শুধু ছবি হয়ে রয়ে যাবে আর সব/ ছবির মত চারদিক নিস্তব্ধ নীরব/ আমরা শোকাহত প্রিয় কিশোরদা। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন’—পুরনো দিনের ছবি শেয়ার করে শিল্পীর প্রতি এভাবেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কবির বকুল।

সময়ের তরুণ শিল্পীরাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন প্লেব্যাক সম্রাটকে। আঁখি আলমগীর লিখেছেন, অনেক স্মৃতি, সেসবের অনেকগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আশা করছি আপনি অনেক ভালো জায়গায় রয়েছেন এন্ড্রু আঙ্কেল। যেখানে আপনাকে আর কোনোদিন কোনো ব্যথা অনুভব করতে হবে না। আপনার মতো কেউ আসবে না। আপনি চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শান্তিতে থাকুন।

বিদায় এন্ড্রু কিশোর কাকা। আর কোনোদিন একসাথে গান করা হবে না’—এভাবে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন ইমন সাহা। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে পুরনো দিনের একটি ঘটনা শেয়ার করেছেন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। লিখেছেন, এন্ড্রুদার সাথে কিছু সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছিল আমার। আমাদের এন্ড্রু কিশোর দা। অনেক বছর আগে। আমেরিকায়। ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড উপলক্ষে সেটা ছিল আমার প্রথম আমেরিকা সফর। বাংলাদেশের তিনজন মহাগুণী সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ আইয়ুব বাচ্চু একসঙ্গে সে বছর ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান আলোকিত করেছিলেন। আমরা একই হোটেলে থাকতাম। অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম, ওনারা তিনজনই আমাকে অত্যধিক পছন্দ স্নেহ করেন। এন্ড্রুদা তো রীতিমতো আমাকে স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে নিজে গান প্র্যাকটিস করালেন। আমি বলেছিলাম, দাদা, আমাকে ক্ষমা করে দেন, আপনাদের সামনে মঞ্চে গান গওয়ার সাহস আমার নেই। এন্ড্রুদার উত্তর, একদম চুপ, তুই গাইবি। নে প্র্যাকটিস কর। অনুষ্ঠান শেষ হলো। কোনোমতে সাহস করে বেঁচে গেলাম। রাতে রুমে ফোন দিয়ে দাদা বললেন, কই তুই? আয় আড্ডা দিই। রাতভর আড্ডা....বাচ্চু ভাই, এন্ড্রুদা, বিশ্বজিত্দা, আসিফ আকবর ব্রো, ফেরদৌস ভাই, আরো কয়েকজন। দাদার চলে যাওয়ার খবর শোনার পর থেকে কী লিখব কিছুই মাথায় আসছিল না। হাজার হলেও আমাদের প্রাণের মানুষ তো। প্রাণের শিল্পী তো এন্ড্রুদা। সেই স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল। সবই স্মৃতি হয়ে গেল। তারপর অনেক অনুষ্ঠানে দাদার সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করেছেন। আর আমি আস্তে করে বলেছি, দাদা, ওই রকম একটা আড্ডা আবার হয় না? দাদা মুচকি হেসে বলতেন, টাইম ম্যানেজ কর, একদিন বসি। আর কোনোদিন বসা হলো না। টাইমও ম্যানেজ হলো না কারো। এন্ড্রুদা সময়ের ঊর্ধ্বে চলে গেলেন। অবনত শ্রদ্ধা দাদা। সময় আপনাকে অন্য কোথাও নিয়ে গেলেও আপনি আমাদের মাঝে মানুষ হিসেবে, শিল্পী হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন