করোনাযোদ্ধা ব্যাংকারদের জন্য শোকগাথা

আনোয়ার ফারুক তালুকদার

মহামারী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে এরইমধ্যে বিশ্বের ৫ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আর আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে এক কোটি ১২ লাখেরও বেশি। বাংলাদেশেও গতকাল (৩ জুলাই) পর্যন্ত এক হাজার ৯৬৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৮ হাজারের বেশী মানুষ। মৃত্যু এবং আক্রান্তের তালিকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ডাক্তার, ব্যাংকার, পুলিশ, সংবাদকর্মী, অন্যান্য পেশাজীবী রয়েছেন। 

করোনায় আক্রান্ত রোগীর সেবা করতে গিয়ে ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীগণ প্রাণ হারিয়েছেন। তারা নিজের জীবন বিপন্ন করে রোগীর সেবা করতে পিছপা হননি। তাদের জন্য আমাদের দোয়া, ভালোবাসা; আর যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদের প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এটাই মানবতা। তারা আমাদের মানবতার ঋণে আবদ্ধ করেছেন। তাদের প্রতিদান বৃথা যাবে না। তেমনিভাবে পুলিশসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যারা আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে রাস্তাঘাটে দিনের পর দিন অবস্থান করছেন তাদের প্রতি আমাদের অশেষ ভালোবাসা আর মাথা নোয়ানো শ্রদ্ধা। 

মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য দিনরাত খেটে যাচ্ছেন আরও অসংখ্য পেশার মানুষ। তাদের সকলের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থাকে সচল রাখতে যেয়ে ইতিমধ্যে দেশের প্রায় ২৮ জন ব্যাংকার প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ছয় শতাধিক ব্যাংকার। এছাড়া উপসর্গ দেখা দিয়েছে সহস্রাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার। ব্যাংকগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা। সাধারণ ছুটির সময়েও ব্যাংকারা অন্যান্য জরুরি পেশাজীবীদের সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। 

গেল মাস থেকে ব্যাংকগুলোতে সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অফিসে যাওয়া-আসা, ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পরিপালন করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রাহকদের সচেতনতার অভাবে ক্ষেত্রবিশেষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ব্যাংকাররা এবং গ্রাহকগণ। ফলে দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। অবিরাম সেবা দিতে যেয়ে যেসব ব্যাংকার তথা অর্থনীতিযোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমাদের মাথা নোয়ানো শ্রদ্ধা আর তাঁদের শোকাতুর পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা।

বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও ব্যাংকারদের সুরক্ষার জন্য সময়ে সময়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো পরিপালনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যথাযত পদক্ষেপ নিচ্ছে। অর্থনীতিকে সচল রাখার স্বার্থে ব্যাংকাররা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে যদিও এটা খুব দ্রুত পুনঃরুদ্ধার করা কঠিন হবে তথাপিও সকল পক্ষই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ব্যাংকাররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ যে সমস্ত অর্থনৈতিক পুনঃরুদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকারদেরই ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। ব্যাংকারা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন তাই তাদের সর্বতোভাবে কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মানুষের জীবন জীবিকার স্বার্থে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। গ্রাহকদের সচেতন করার পাশাপাশি ব্যাংকে যাতে অধিক কর্মীসমাগম না হয় সেইজন্য ই-ব্যাংকিং এর উপর জোর দিতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন। ব্যাংকাদের অবদানকে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

লেখক: ব্যাংকার 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন