লকডাউনে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশু, স্কুল খুলে দেয়ার আহ্বান

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বজুড়ে লকডাউন চলছে। সর্বত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। যেসব দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে সেসব দেশেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোমাত্রায় খোলেনি। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্কুলে ফেরার এই বিলম্বকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ হিসেবে দেখছেন শীর্ষ মনোবিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, এই বিলম্ব তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকি।

ব্রিটেনের শিক্ষা সচিব গ্যাভিন উইলিয়ামসনকে লেখা খোলা চিঠিতে মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, লকডাউন ও আইসোলেশনের কারণে এরই মধ্যে তরুণ মানুষগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্কুল খুলতে আরো বিলম্ব হলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে পড়বে। 

শিশুদের মধ্যে কভিড-১৯ এর ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম, তাই তাদের জন্য সামাজিক দূরত্ব পালনের নিয়মটি শিথিল চান মনোবিজ্ঞানীরা। এমনকি দ্রুতই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার দাবি জনান তারা। 

মনোবিজ্ঞান, মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরোসার্জনসহ প্রায় ১০০ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির সাক্ষরিত এ চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছে দ্য সানডে টাইমস পত্রিকায়। তারা লিখেছেন, ‘বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে কাজ করছেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি এবং যত দ্রুত সম্ভব যেন শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের লকডাউন থেকে মুক্তি দেয়া হয়।’

চিঠিতে আরো লেখা হয়, ‘তাদের একসঙ্গে খেলতে দিন, পড়াশোনা করতে দিন। এজন্য প্রি-স্কুল, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি খুলে দিন যাতে তারা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, গান-বাজনার মতো পাঠ্যক্রমের বাইরের কর্মকা-ের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব এটা করতে হবে।’ 

সম্প্রতি ‘ল্যানসেট চাইল্ড অ্যান্ড ও অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ’ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মুখোমুখি না হওয়া কিংবা একত্রে খেলাধুলা করতে না পারায় শিশু ও তরুণ বয়সের মানুষগুলো দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এই প্রতিবেদনের পরই মূলত মনোবিজ্ঞানীরা এক হয়ে সরকারের কাছে স্কুল খুলে দেয়ার আহ্বান জানান। 

চিঠি পাঠানোর এই কার্যক্রমের সমন্বয়ক ও নটিংহাম ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এলেন টাউনসেন্ট বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এমনই এক উদ্বেগ যা লকডাউনের আগে থেকেই কম বয়সীদের মধ্যে ভর বাড়ছিল। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, মহামারীর মধ্যে স্কুল বন্ধ থাকায় এবং লকডাউনের কারণে সঙ্গনিরোধ অবস্থায় থাকায় শিশুদের ও টিনএজদের মধ্যে একাকিত্বের অনুভুতি বেড়েছে যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে চরম খারাপ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। এ নারী অধ্যাপক বলেন, কিছু শিশুর সংগ্রাম করার ‘হৃদয়বিদারক’ গল্প তিনি শুনতে পাচ্ছেন। 

চিঠিতে তারা এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে, শিশুদের কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। চিঠিতে বলা হয়, ‘এরই মধ্যে ইংল্যান্ডে ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে, যা বিশ্বব্যাপী তরুণদের মৃত্যুর দ্বিতীয় শীর্ষ কারণ। কিন্তু আনন্দের সঙ্গে বলতে হয়, কভিড-১৯ মহামারীতে কখনই এত বেশি শিশুর মৃত্যু হবে না।’

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এই সংকটের সময় শিশুদের উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং এখন থেকেই তাদের ভবিষ্যতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। 

করোনাভাইরাসের বিস্তার কমাতে গত ২০ মার্চ থেকে যুক্তরাজ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই থেকে স্কুল দেখা হয়নি শিশুদের, এমনকি গ্রীষ্মের ছুটির আগে আর স্কুলে যাওয়া হবে না তাদের। অবশ্য পরীক্ষমূলকভাবে সেখানে নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্লাবের শিক্ষার্থীরা স্কুলে ফিরেছে, তাও সব স্কুলে নয়। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের এখন থেকেই নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের কথায়, ‘শিশুরা এরই মধ্যে অন্যদের জন্য যে ত্যাগস্বীকার করেছে তা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে এবং এই ত্যাগস্বীকার যেন আর না বাড়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এই শিশুদের দলগুলো যখন সাবালক হয়ে উঠবে তখন আমরা চরম মন্দায় পড়ে যাব। কাজেই তাদের মানসিক সহিষ্ণুতা ও শিক্ষাগত প্রস্তুতি থাকতে হবে। কিন্তু আমরা এই দুটিকেই ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছি, যা তাদের ও জাতির জন্য জীবনব্যাপী এক প্রভাব ফেলবে।’

সূত্র: বিবিসি 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন