এবারের
বাজেট প্রণয়ন
হতে যাচ্ছে
এক ভিন্ন
আঙ্গিকে। করোনা
মহামারীতে সারা
বিশ্ব আজ
এক বিরাট
সংকটের মুখোমুখি।
বাংলাদেশও এর
ব্যতিক্রম নয়।
দেশে বর্তমানে
৫৫ হাজারের
ওপরে
মানুষ
আক্রান্ত হয়েছে
এবং সাত
শতাধিক মানুষ
এ পর্যন্ত
মারা গেছে
(৩ জুন,
২০২০ পর্যন্ত)।
মে মাসের
শেষ দিকে
মোট টেস্টিংয়ের
২০-২২
শতাংশ আক্রান্তের
হার দেখা
গেছে। তবে
হিসাবটি বর্তমানে
যে পরিমাণে
টেস্টিং হচ্ছে,
তার ওপর
নির্ভর করে
বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশে টেস্টিংয়ের
হার ১
শতাংশেরও অনেক
নিচে। টেস্টিং
বাড়ালে আক্রান্তের
হার আরো
বাড়ত বলে
ধারণা করা
যায়। টেস্টিং
কম হওয়ার
কারণও পরিষ্কার।
টেস্টিং ল্যাবের
অপ্রতুলতা, প্রশিক্ষিত
টেকনিশিয়ান ও
ডাক্তারের অভাব
কম টেস্টিংয়ের
মূল কারণ।
অন্যদিকে করোনা
আক্রান্তদের জন্য
(মোটামুটিভাবে মোট
আক্রান্তের ২০
শতাংশের জন্য)
যতটুকু স্বাস্থ্যসেবা
(হাসপাতাল বেড,
আইসিইউ, ভেন্টিলেটর
ও পর্যাপ্ত
অক্সিজেন সরবরাহ)
নিশ্চিত করা
দরকার ছিল,
তাও আমরা
করতে পারিনি।
এটি অনেক
দেশও করতে
পারেনি। কিন্তু
করোনা মহামারীর
কারণে আমাদের
জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার
এক বেহাল
চিত্র ফুটে
উঠেছে। আমরা
উপজেলা পর্যায়ে
পর্যন্ত হাসপাতাল
তৈরি করেছি,
কিন্তু তাতে
স্বাস্থ্যসেবার ন্যূনতম
সুবিধাও অনেক
ক্ষেত্রে নিশ্চিত
করা যায়নি।
করোনা মহামারী
আমাদের স্বাস্থ্য
খাতের বেহালকে
নগ্নভাবে তুলে
ধরেছে। ঐতিহাসিকভাবে
দুর্নীতিতে ভারাক্রান্ত
এবং অদক্ষতা
ও অবহেলার
শিকার জনস্বাস্থ্য
আমাদের আজ
এক নির্মম
বাস্তবতার সম্মুখীন
করেছে। যারা
এতদিন সামান্য
অসুস্থতার জন্য
বিদেশে চিকিৎসার
জন্য পাড়ি
দিতেন, অর্থাৎ
ভারত, সিঙ্গাপুর,
ব্যাংকক, লন্ডন
যেতেন, তারা
আজ অসহায়ভাবে
চেয়ে চেয়ে
দেখছেন দেশের
চিকিৎসার অবস্থা।
এ প্রেক্ষাপটে
এবারের বাজেটে
কোন কোন
বিষয় প্রাধান্য
দেয়া উচিত,
এ নিয়ে
অনেক আলোচনা
হচ্ছে। আমি
বাজেটের প্রাধিকারকে
দুই ভাগে
ভাগ করতে
চাই—এক.
মহামারী মোকাবেলা
ও জনস্বাস্থ্য
খাতের উন্নয়ন
এবং দুই.
অর্থনীতির পুনরুদ্ধার
প্রক্রিয়া বেগবান
ও টেকসই
করা। এর
কারণ হচ্ছে,
অর্থনীতির যে
ক্ষতি হলো
বা আরো
হবে, তা
পুনরুদ্ধার করে
করোনা-পূর্ববর্তী
অবস্থায় নেয়ার
জন্য বাজেটে
বরাদ্দ ও
দিকনির্দেশনা থাকা
প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য খাত:
মাননীয়
অর্থমন্ত্রী কিছুদিন
আগে বলেছিলেন
যে এবারের
বাজেট হবে
স্বাস্থ্য বাজেট,
যা আমার
কাছে মনে
হয়েছে সময়োপযোগী
ভাবনা। কিন্তু
পরবর্তীতে বার্ষিক
উন্নয়ন কর্মসূচির
বরাদ্দের যে
তথ্য পত্রপত্রিকায়
দেখলাম, তাতে
মনে হয়েছে
অর্থমন্ত্রীর ভাবনার
প্রতিফলন এতে
তেমন নেই।
তবুও আশা
করি, আমাদের
ভাবনার একটি
প্রতিফলন এ
বাজেটে থাকবে।
অনেক সময়
সংকটও সম্ভাবনার
দ্বার উন্মোচন
করে। স্বাস্থ্য
খাতের বর্তমান
সংকট এ
খাতকে সম্পূর্ণ
ঢেলে সাজানোর
একটি সুযোগ
আমাদের সামনে
নিয়ে এসেছে।
সুযোগটি কাজে
লাগিয়ে আমরা
স্বাস্থ্য খাতকে
যুগোপযোগী ও
আন্তর্জাতিক মানে
উন্নীতকরণের কাজটি
এ বাজেটেই
শুরু করতে
পারি। এ
খাতের উন্নয়নে
এ বাজেটে
দুই ধরনের
ব্যবস্থাসংবলিত পরিকল্পনা
ও বরাদ্দ
থাকা প্রয়োজন—এক.
মহামারী মোকাবেলার
জন্য ব্যবস্থা
এবং দুই.
স্বাস্থ্য খাতের
ভৌত অবকাঠামো
নির্মাণ, সংস্কার
ও পরিবর্ধনের
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।
এজন্য একটি
স্বল্প-তাত্ক্ষণিক,
মধ্যম ও
দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ
থাকা প্রয়োজন,
যার ভিত্তিতে
বাজেটারি বরাদ্দ
দেয়া যেতে
পারে।
করোনা মহামারী
মোকাবেলার জন্য
পিপিই, টেস্টিং
কিট, মাস্ক,
আইসিইউ, অক্সিজেন
সরবরাহ, ভ্যাকসিন
ও সেবা
প্রদানকারীদের প্রণোদনাসহ
আগামী এক
বছরের জন্য
বরাদ্দ রাখতে
হবে। মহামারী
মোকাবেলার ক্ষেত্রে
স্বাস্থ্য খাতে
লোকবলের মারাত্মক
সংকট পরিলক্ষিত
হয়েছে। ডাক্তার,
নার্স, টেকনিশিয়ান,
আয়া, ওয়ার্ড
বয় নিয়োগের
জন্য পর্যাপ্ত
বরাদ্দ রাজস্ব
খাতে রাখতে
হবে। প্রতিটি
জেলা শহরের
হাসপাতালগুলোয় অন্তত
১০টি আইসিইউ
বেড, কেন্দ্রীয়
অক্সিজেন সরবরাহ
ব্যবস্থা ও
অন্যান্য চিকিৎসা
যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা
থাকতে হবে।
যদি এ
ধরনের কোনো
রোডম্যাপ এখনো
তৈরি না
হয়ে থাকে,
তাহলে সংশ্লিষ্ট
মন্ত্রণালয়গুলোকে বিশেষজ্ঞদের
পরামর্শ নিয়ে
আগামী এক
মাসের মধ্যে
তা প্রণয়নের
নির্দেশনা থাকতে
পারে। এর
সঙ্গে বাজেটে
দ্বিতীয় ধাপ
অর্থাৎ স্বাস্থ্য
খাতের ভৌত
অবকাঠামো নির্মাণ,
সংস্কার ও
পরিবর্ধনের সুনির্দিষ্ট
পরিকল্পনা অনুযায়ী
এ বাজেটে
বরাদ্দ থাকতে পারে।
এতে স্বাস্থ্য
খাতে অতীতের
তুলনায় (বাজেটের
৫%) বরাদ্দ
অনেক বাড়ানো
প্রয়োজন। মোটামুটি
এ খাতে
বরাদ্দ বাজেটের
ন্যূনতম ১০-১১
শতাংশ হওয়া
প্রয়োজন বলে
মনে করি,
যা জিডিপির
অনুপাতে ২
শতাংশ হতে
পারে। জনস্বাস্থ্য
ব্যবস্থাকে ঢেলে
সাজানোর সঙ্গে
সঙ্গে জাতীয়
স্বাস্থ্য বীমা
চালুর কথাও
চিন্তা করা
যেতে পারে।
অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া: গত ২৬
মার্চ থেকে
মে মাসের
৩০ তারিখ
পর্যন্ত দেশে
সাধারণ ছুটিসহ
‘এক
ধরনের শিথিল
লকডাউন’ ছিল।
এতে অর্থনীতির
চাকা অনেকটাই
অচল হয়ে
পড়ে, যদিও
খাদ্যশৃঙ্খল বজায়
রাখা সম্ভব
হয়েছিল। এতে
অনেকেই কর্মহীন
হয়ে পড়েন।
দরিদ্ররা অনেকেই
আরো দরিদ্র
হয় এবং
আয় কমে
যাওয়ার কারণে
নতুন করে
আরো একটি
বড় অংশ
দারিদ্র্যসীমার নিচে
চলে আসে।
বিভিন্ন জরিপে
দেখানো হয়েছে
যে দেশে
করোনা-পূর্ববর্তী
২০ শতাংশ
দরিদ্রের সঙ্গে
প্রায় সমপরিমাণ
দরিদ্র যোগ
হয়েছে। ফলে
মোটামুটি দেশে
দরিদ্র মানুষের
সংখ্যা ৪০
শতাংশ ছাড়িয়ে
গেছে। অর্থাৎ
সাত-আট
কোটি মানুষ
এখন দারিদ্র্যসীমার
নিচে বা
কাছাকাছি অবস্থান
করছে, যাদের
বিভিন্ন রকম
সহায়তা প্রয়োজন।
মে মাসের
শেষ দিক
থেকে সংক্রমণের
হার বাড়তে
শুরু করেছে
অথচ সরকার
সীমিত আকারে
সবকিছু খুলে
দেয়ার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে। এ
অবস্থায় মহামারী
কী আকার
ধারণ করে,
তা হয়তো
বাজেট পাসের
আগেই আমরা
জানতে পারব।
এতে যদি
সংক্রমণ ও
মৃত্যুর হার
অনেক গুণ
বেড়ে যায়,
সেক্ষেত্রে কঠিনতর
লকডাউনের (কারফিউ/জরুরি
অবস্থা জারির
মতো) কথা
চিন্তা করতে
হতে পারে।
করোনা মহামারীর
যে গতি-প্রকৃতি
দেখা যাচ্ছে,
তাতে দ্বিতীয়-তৃতীয়
ঢেউয়ের জন্যও
প্রস্তুত থাকতে
হবে। এ
ধরনের অনিশ্চয়তার
মধ্যে এ
বাজেটে নিম্নোক্ত
বিষয়গুলোর প্রাধান্য
থাকা প্রয়োজন
বলে মনে
করি।
সামাজিক সুরক্ষা
খাতকে মহামারীর
প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর
ক্যানভাসে দেখতে
হবে এবং
এর আকার
ও পরিধি
আগের চেয়ে
বাড়িয়ে ঘোষিত
প্রণোদনা প্যাকেজের
সমন্বয়ে এ
খাতে বরাদ্দ
রাখতে হবে।
এ খাতকে
‘সামাজিক
সুরক্ষা খাত’
না বলে
‘এনটাইটেলমেন্ট
সাপোর্ট’ও
বলা যেতে
পারে। তিন
থেকে ছয়
মাসের জন্য
সাত-আট
কোটি মানুষের
জন্য (প্রায়
২ কোটি
পরিবারকে) একটি
সাপোর্ট প্যাকেজ
(পরিবারপ্রতি যদি
মাসে ২৫০০
টাকা দেয়া
হয়) প্রয়োজন
হবে, যাতে
জিডিপির প্রায়
৩-৫
শতাংশ সমপরিমাণ
বরাদ্দ প্রয়োজন
হতে পারে
(খুব সীমিত
আকারে যদি
হিসাব করা
হয়), যা
বর্তমান বাজেটের
প্রায় ২০-২৫
শতাংশ হবে
বলে ধারণা
করা যায়।
এতে যারা
কর্ম হারিয়েছেন,
তাদের পক্ষে
নতুন কাজ
খোঁজা বা
জীবিকা নির্বাহ
করা সুবিধাজনক
হবে। অন্যদিকে
ভাইরাস মোকাবেলায়
সামাজিক ও
শারীরিক দূরত্ব
মানানোর ক্ষেত্রে
সুফল পাওয়া
যাবে। ফলে
বাজেটের প্রায়
অর্ধেক বরাদ্দ
স্বাস্থ্য ও
সামাজিক নিরাপত্তা
খাতে রাখার
তাগিদ রয়েছে,
যাতে বর্তমান
বার্ষিক উন্নয়ন
কর্মসূচির প্রায়
পুরোটাই ব্যয়
হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। ফলে
বাজেটের অন্যান্য
উন্নয়ন খাতকে
বঞ্চিত করতে
হবে, যা
বর্তমান সময়ের
প্রেক্ষাপটে যৌক্তিক।
ফলে শুধু
মেগা প্রকল্পগুলোর
জন্য সীমিত
পরিমাণে বরাদ্দ
রেখে মেইনটেন্যান্স
ও সংস্কার
ব্যতীত অবকাঠামো
খাতে নতুন
কোনো বরাদ্দ
রাখা ঠিক
হবে না,
যেহেতু রাজস্ব
আয়ও তাত্পর্যপূর্ণভাবে
কমে যাবে।
প্রকল্প নির্বাচনের
ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার
নির্ণয় করে
অপ্রয়োজনীয় ব্যয়
কমাতে হবে।
কৃষি খাতে
ভর্তুকি বজায়
রেখে অন্যান্য
খাতে ভর্তুকির
আওতা সংকুচিত
করতে হবে,
যাতে অর্থের
সংকুলান বাড়ানো
যায়। যেমন
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি
তেলের দাম
কমায় এ
খাতে ভর্তুকি
প্রত্যাহার করে
অর্থ সাশ্রয়
করা যায়।
কুইক রেন্টালের
জন্য যে
ভর্তুকি দেয়া
হচ্ছিল, তা
যদি এখনো
বহাল থাকে,
এ সময়ে
এটি প্রত্যাহার
করে নিতে
হবে।
বাজেটের আকার
বড় না
করাই উচিত।
গতানুগতিক ধারায়
১৫-২০
শতাংশ বর্ধিত
করে বাজেট
প্রণয়ন করা
ঠিক হবে
না। অন্যথায়
ফিসকাল সাসটেইনেবিলিটির
ওপর নেতিবাচক
প্রভাব পড়তে
পারে। রাজস্ব
আয় (ডিরেক্ট
ও ইনডিরেক্ট)
তাত্পর্যপূর্ণভাবে কমে
যাবে, যা
এরই মধ্যে
লক্ষ করা
যাচ্ছে। কর
কমানোর (ব্যক্তি
খাত ও
করপোরেট উভয়)
নীতি নিতে
হবে, যাতে
উভয় খাত
স্বাচ্ছন্দ্য বোধ
করে। অর্থাৎ
ব্যক্তি খাতে
সর্বোচ্চ করসীমা
আগের বছরের
চেয়ে বাড়ানো
প্রয়োজন, যা
৪ লাখ
টাকা নির্ধারণ
করা যেতে
পারে এবং
এর সঙ্গে
করপোরেট করহার
কমানো প্রয়োজন।
এতে ব্যক্তি
ও করপোরেট
উভয় খাতে
কিছুটা সঞ্চয়
ও বিনিয়োগের
প্রণোদনা তৈরি
হবে, যা
অর্থনীতির ভবিষ্যৎ
পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক
ভূমিকা রাখবে।
রাজস্ব বাড়ানোর
জন্য চলমান
সংস্কার চালিয়ে
যেতে হবে,
যাতে রাজস্ব
খাতে কিছুটা
স্বস্তি আসে।
যদিও এ
সময়টা সংস্কার
বাস্তবায়নের জন্য
উপযুক্ত নয়।
ঘাটতি ব্যবস্থাপনা
এবারের বাজেটের
একটি বড়
চ্যালেঞ্জ। মহামারীর
কারণে এবং
মহামারীর আগে
ভ্যাট আইন
বাস্তবায়নে ধীরগতির
কারণে রাজস্ব
আদায়ে একটি
বড় ঘাটতির
আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে আয়করও
অনেক কমে
যাওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। ব্যাংক
ব্যবস্থা থেকে
ধার করার
ক্ষেত্র কিছুটা
সংকুচিত হয়েছে।
মহামারী যদি
এ বছর
নিয়ন্ত্রণে আসে
তাহলে ব্যক্তি
খাতের বিনিয়োগকে
বেগবান করতে
হবে। অন্যদিকে
সরকার শিল্প
খাতের জন্য
ঋণভিত্তিক যে
প্রণোদনা ঘোষণা
করেছে, তা
বাস্তবায়ন করতে
হলেও ব্যাংক
ব্যবস্থায় প্রচুর
তারল্যের জোগান
থাকা প্রয়োজন।
সেক্ষেত্রে ব্যক্তি
খাতের বিনিয়োগ
সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত
না করে
সীমিত পরিমাণে
ব্যাংক ব্যবস্থা
থেকে ঋণ
নেয়া যেতে
পারে। বৈদেশিক
উৎস দ্বারা
বাজেট ঘাটতি
পুরোপুরি মেটানো
যাবে না।
এরই মধ্যে
এডিবি ও
আইএমএফ বাংলাদেশকে
কিছুটা বাজেট
সাপোর্ট প্রদানের
অঙ্গীকার করেছে,
যা ইতিবাচক।
এক্ষেত্রে অনেকের
মতো আমিও
সীমিত আকারে
নোট ছাপিয়ে
অর্থসংস্থানের পক্ষে।
এতে মূল্যস্ফীতি
তেমন বাড়বে
না বলে
মনে করি।
কারণ এক্সিটিং
চাহিদা যতটুকু
কমেছে, নতুনভাবে
অর্থায়নের ফলে
চাহিদা সর্বোচ্চ
আগের জায়গায়
ফিরে আসতে
পারে, কিন্তু
অতিরিক্ত চাহিদা
তৈরি হবে
না বলেই
মনে হয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে
বাজেট ঘাটতি
জিডিপির ৭-৮
শতাংশ পর্যন্ত
প্রক্ষেপণ করা
যেতে পারে,
যা এ
ধরনের সংকটকালের
জন্য গ্রহণযোগ্য।
বাজেট ঘাটতি
বাড়িয়ে জিডিপির
প্রবৃদ্ধি তেমন
বাড়ানো যাবে
না বলেই
আমি মনে
করি। আমাদের
মনে রাখতে
হবে যে
বর্তমান যে
মন্দা, তা
কেইনিসিয়ান টাইপের
মন্দা নয়
যে সম্প্রসারমূলক
ফিসকাল পলিসি
দ্বারা তা
মোকাবেলা করা
যাবে। কারণ
বর্তমান সমস্যা
অনেকটাই করোনা
মহামারীর কারণে
ঘরবন্দি হয়ে
থাকার ফলে
সরবরাহজনিত অনুৎপাদনশীলতা
এবং একই
কারণে চাহিদার
ঘাটতি। তাই
সরকারি বিনিয়োগ
বাড়িয়ে জিডিপির
প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর
চেষ্টা করলে
তা কাউন্টার
প্রডাক্টিভ হতে
পারে এবং
মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক
প্রভাব ফেলতে
পারে। তাই
অর্থনীতির গতিশীলতাকে
ধরে রাখার
লক্ষ্য নিয়ে
বাজেট প্রণয়ন
করাটা আমি
যৌক্তিক মনে
করি।
বাজেট বাস্তবায়নে
সামাজিক সুরক্ষা
প্রণোদনা দেয়ার
ক্ষেত্রে এবং
স্বাস্থ্য খাতের
উন্নয়নে স্বচ্ছতা
ও জবাবদিহিতা
নিশ্চিত করাসহ
সুশাসনের ওপর
জোর দিতে
হবে, যাতে
এই আপত্কালীন
অর্থের অপচয়
রোধ করা
যায়। মহামারী
থেকে উত্তরণের
জন্য সামাজিক
সুরক্ষা সহায়তা
(নগদ ও
ত্রাণ উভয়ই)
যত দ্রুত
সম্ভব জনগণ
ও এন্টারপ্রাইজগুলোর
কাছে পৌঁছাতে
হবে। অনু,
ক্ষুদ্র ও
মাঝারি শিল্পের
জন্য ঋণভিত্তিক
যে প্রণোদনা
দেয়া হয়েছে,
তার সুফল
এদের অধিকাংশের
পক্ষেই ভোগ
করা সম্ভব
হবে না।
কারণ ব্যাংকঋণ
নেয়ার জন্য
যে ধরনের
যোগ্যতা প্রয়োজন,
তা তাদের
অনেকেরই নেই।
এ পরিপ্রেক্ষিতে
একটি বাস্তবায়নযোগ্য
প্রণোদনা এসব
ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের
জন্য প্রণয়ন
করা প্রয়োজন।
পরিশেষে বলব,
জিডিপির প্রবৃদ্ধি
ও মূল্যস্ফীতির
প্রক্ষেপণ বাস্তবসম্মত
হওয়া প্রয়োজন।
অন্যথায় অর্থনৈতিক
এজেন্টদের কাছে
ভুল বার্তা
যেতে পারে,
যা অর্থনীতির
জন্য বিপদ
ডেকে আনতে
পারে। তাই
আমাদের এবারের
বাজেট হোক
স্বাস্থ্য খাতের
উন্নয়নের বাজেট
এবং অর্থনীতিকে
পুনরুদ্ধারের বাজেট।