১১ বছরের সর্বনিম্নে বৈদেশিক ঋণপ্রবাহ

ভারতীয় কোম্পানিগুলোর অর্থের বড় জলাধার শুকিয়ে যাচ্ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে বেশ বিপাকে ফেলেছে। এসব কোম্পানি তাদের চলতি মূলধনের জন্য অনেকটাই বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত দুই মাসে ভারতীয় কোম্পানিগুলোয় বৈদেশিক ঋণপ্রবাহ ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। বিষয়টি তাদের জন্য বেশ উদ্বেগজনক, বিশেষ করে দুর্বল মূলধন ভিত্তির কোম্পানিগুলোর জন্য। কারণ তাদের ঘাড়ে আগে থেকেই বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা রয়েছে, যেগুলো পরিশোধের সময় হয়ে গেছে। অবস্থায় কোম্পানিগুলোকে পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে সংকটে পড়তে হচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ।

গত এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের স্থানীয় কোম্পানিগুলো মাত্র ১৪০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করতে পেরেছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৩০ কোটি ডলার। কোম্পানিগুলোর বৈদেশিক বন্ড বিক্রিও অনেকটা কমে গেছে।

২০১৮ সালে শ্যাডো লেন্ডার ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলঅ্যান্ডএফএস) খেলাপি হয়ে যাওয়ার পর থেকে এমনিতেই ঋণ অর্থায়নে সংকটে পড়েছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো। এর ওপর কভিড-১৯ মহামারী চাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ভারতে লকডাউনের মেয়াদ বেড়েই চলেছে। ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংকটও আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অবস্থায় ভারতকে সোমবার আরো একটি দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে। এদিন দেশটির সার্বভৌম ঋণমান কমিয়ে জাংকের মাত্র এক ধাপ আগে নিয়ে এসেছে মুডি ইনভেস্টরস সার্ভিস। অর্থাৎ নতুন করে বৈদেশিক ঋণ পেতে বেশ সংগ্রামই করতে হবে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে।

বৈদেশিক ঋণপ্রবাহে যত বাধা আসবে, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর নগদ প্রবাহের সংকট তত বাড়বে। আর এমন এক সময়ে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, যখন এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির টাকার খুব দরকার। করোনা মহামারীর কারণে চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম দেশটির অর্থনীতি সংকোচনের মুখে রয়েছে।

করোনার প্রভাব মোকাবেলায় ২৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। কিন্তু বিশ্বের শীর্ষ বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর অনেকেই ভারতে ঋণ সরবরাহের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, দেশজুড়ে প্রলম্বিত লকডাউন ভারতের করপোরেট ক্রেডিট প্রোফাইলে ক্ষতিসাধন করবে।

বর্তমানে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মাথায় রয়েছে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক ঋণ বন্ড নগদায়নের বোঝা। চলতি পঞ্জিকাবর্ষে হাজার ১০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ ম্যাচিউরড হবে। আগামী বছর অংকটি বেড়ে দাঁড়াবে হাজার ৪০০ কোটি ডলার। অথচ কোম্পানিগুলোর জন্য বৈদেশিক ঋণপ্রবাহ ঠিক রাখাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ করোনার প্রভাব মোকাবেলায় তারা চলতি অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে এত বেশি ঋণ নিচ্ছে যে স্থানীয় মুদ্রার ঋণবাজার থেকে তাদের ছিটকে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কানাডায় কর্মরত ভারতবিষয়ক সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার সন্দ্বীপ ভাট বলেছেন, বর্তমান অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আরো ঋণ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। এর ফলে যেসব ভারতীয় কোম্পানির ক্রেডিট প্রোফাইল কিছুটা দুর্বল, তাদের জন্য পুনঃঅর্থায়নের পথটা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

ডিসেম্বরের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ বন্ডের পুনঃঅর্থায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবেএমন ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম টাটা স্টিল লিমিটেড। গত মাসে ফিচ রেটিংসে তাদের ঋণমান আরো বেশি জাংকে নেমে গেছে। সংকটের মধ্যে থাকা দেওয়ান হাউজিং ফিন্যান্স করপোরেশন রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস লিমিটেডের বৈদেশিক মুদ্রার ঋণও আগামী ডিসেম্বরে ম্যাচিউরড হবে। পুনঃঅর্থায়নের জন্য কোম্পানিগুলো কোনো পরিকল্পনা করেছে কিনা, তা জানতে চাওয়া হলেও টাটা স্টিল, দেওয়ান হাউজিং বা রিলায়েন্স কমিউনিকেশনসের প্রতিনিধিরা কোনো জবাব দেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন