কভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা

রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ হবে সারা দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকাসহ সারা দেশকে রেড, ইয়েলো গ্রিন জোনে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করছে সরকার। যেসব এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা বেশি থাকবে, সেসব এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। ওইসব এলাকার জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বাইরের এলাকা থেকেও রেড জোনে প্রবেশে থাকবে কড়াকড়ি। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ কম ঘটেছে, সেসব এলাকাকে ইয়েলো জোন হিসেবে চিহ্নিত করে আক্রান্তদের ঘর-বাড়ি লকডাউন করে সংক্রমণ বিস্তার ঠেকানো হবে। যেসব এলাকায় এখনো করোনার রোগী পাওয়া যায়নি, সেসব এলাকায় যাতে বাইরের কেউ ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হবে।

বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ মৃত্যুর হার অনুযায়ী সারা দেশকে রেড, ইয়েলো গ্রিন জোনে ভাগ করা হবে। আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম নিয়ে গত পরশু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত বিষয়ে আলাপ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন সে পরামর্শ অনুযায়ী আমরা আজ বসলাম। আমরা 

একটা প্ল্যান তৈরি করব। নীতিগতভাবে এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেব। মেয়র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সমন্বিতভাবে এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখনো জোন করা হয়নি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর চট্টগ্রাম সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে। যদি কোনো জোন রেড হয়ে থাকে, সেগুলোকে রেড করা হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা উপজেলা এখনো অনেকাংশে ভালো আছে। আমরা সেটা ভালো রাখতে চাই।

এলাকাভিত্তিক লকডাউন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, জোনিংয়ের মাধ্যমেই সব করা হবে। যে জোনের মধ্যে খুব বেশি সংক্রমিত হবে; ছোট্ট এলাকা, ঢাকার ভেতরে ধরেন একটা ছোট্ট এলাকা, সেখানে হয়তো একটি এলাকাকে বলব যে এলাকা বন্ধ থাকবে এই কয়দিনের জন্য। এভাবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেবেন, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর নারায়ণগঞ্জকে রেড জোনে ফেলা হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ বিশেষজ্ঞরা করবেন। তবে আমরা মনে করি রেড জোন হওয়া উচিত, কারণ এখানে তো অনেক সংক্রমিত।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। পাশাপাশি নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষার হারও বাড়ছে। আজকে সেজন্য কয়েকটা জোন মার্কিং করছি। যেমন, রেড, ইয়েলো গ্রিন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল জোনগুলোর মধ্যে রেড জোনকে কীভাবে গ্রিন জোন করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়ে কিছু প্রস্তাব দেবেন। সেই প্রস্তাব আমরা খুব শিগগির বাস্তবায়ন করব। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে একটি নির্দেশনা দিয়েছে যে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তার বেশি কেউ যেন একসঙ্গে অফিসে না আসেন বা পর্যায়ক্রমে তারা যাতে অফিসে আসেন।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মন্ত্রণালয় গঠিত মিডিয়া সেলের ফোকাল পয়েন্ট মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, কভিড-১৯ টেস্টের ফলাফল বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জোনিং করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে -সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সারা দেশকে জোনিং করে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। রেড জোন এলাকাগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে, যাতে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ওইসব এলাকার কেউ বাইরে বের হতে বা বাইরে থেকে কেউ যেতে না পারে। এভাবেই রেড ইয়েলো জোনগুলোকে পর্যায়ক্রমে গ্রিন জোনে উন্নীত করার মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন