শর্তসাপেক্ষে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ল ১৫ জুন পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড- ১৯ এর বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী ৩০ মের পর শর্তসাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি এবং জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। 

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। ৫, ৬, ১২ ও ১৩ জুন সাপ্তাহিক ছুটি এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। 

নিষেধাজ্ঞাকালে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। প্রতিটি জেলার প্রবেশ ও বহির্গমন পথে চেকপোস্টের ব্যবস্থা থাকবে। 

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলাচলে নিষেধাজ্ঞাকালে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পযন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ কেনা, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না। সর্বাবস্থায়ই বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর ব্যত্যয় করলে নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

গতকাল বুধবার (২৭ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলমান সাধারণ ছুটি আর বাড়ছে না। তবে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসে কাজ করতে হবে। এসময় বয়স্ক এবং গর্ভবতী নারীদের অফিসে আসতে হবে না। আর গণপরিবহণ সীমিত আকারে চলাচল শুরু হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে আরো নির্দেশনার বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে তা হলো-

• নিষেধাজ্ঞাকালে জনগণ ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশমালা কঠোরবভাবে মেনে চলতে হবে।

• হাট-বাজার, দোকান-পাটে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হতে।

• শপিং মলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিং মলে আগত যানবাহন অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাট-বাজার, দোকান-পাট, শপিং মল অবশ্যই বেলা ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।

• বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। সড়ক ও নৌপথে সব ধরনের পণ্যবাহী যানবাহন চলবে।

• নিষেধাজ্ঞাকালীন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না।

• ব্যাংকিং ব্যবস্থা পূর্ণভাবে চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

• সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে চালু থাকবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

• নিষেধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। এসময়ে সময়ে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহণ, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

• উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষ নিজ ব্যবস্থাপনায় ফ্লাইট চলাচলের বিষয় বিবেচনা করবে।

• সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক মসজিদে সর্বসাধারণের জামাতে নামাজ আদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠান অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৩ মার্চ সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত, তৃতীয় দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ও চতুর্থ দফায় ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বর্ধিত করা হয়। এরপরও পরিস্থিতির উন্নত না হওয়ায় পঞ্চম দফায় ১৬ মে এবং সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করে সরকার।

২৫ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জরুরি পরিষেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং তাদের অধীনস্থ অফিসগুলো বর্ধিত সাধারণ ছুটির দিনে সীমিত আকারে খোলা থাকবে। সর্বশেষ গত ১৪ মে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ১৭ মে থেকে যে সাধারণ ছুটি, শবে কদরের ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি এবং ঈদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, এখনও তা চলছে। করোনার সংক্রমণ রোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রেল, সড়ক, নৌ ও বিমান যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন