শাবিপ্রবিতে করোনা শনাক্তকরণ

৩ সপ্তাহে শুরু হয়নি নমুনা পরীক্ষা অসহযোগিতার অভিযোগ

দেবাশীষ দেবু সিলেট

সিলেটে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তকরণে গত ১২ এপ্রিল শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (শাবিপ্রবি) নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা শুরু করার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে নমুনা পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ায় পরীক্ষা শুরু করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের মধ্যে কেবল এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়। তবে নানা সংকটে ল্যাবে যে পরিমাণ নমুনা আসছে, তার সবই পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। ল্যাবে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ নমুনা জমা পড়লেও পরীক্ষা হয় গড়ে ১৫০টি। তাই অনেকগুলো নমুনা পড়ে থাকে। নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষার ফলাফল জানতে ক্ষেত্রবিশেষে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের। সমস্যা নিরসনে শাবিপ্রবিতে নমনুা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া হয়।

সূত্র জানায়, গত মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সিলেটে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় এপ্রিল। এরপর এপ্রিল করোনা শনাক্তকরণে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করে শাবিপ্রবি। পরবর্তী সময়ে ১২ এপ্রিল শাবিপ্রবিসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা শনাক্তকরণে নমুনা পরীক্ষা শুরুর নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে তিন সপ্তাহ পার হলেও শাবিপ্রবিতে শুরু হয়নি করোনা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া।

ব্যাপারে জানতে চাইলে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের চিঠি দিয়ে বলা হয়েছিল তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব পরিদর্শনে আসবেন। পরবর্তী সময়ে আমাদের তরফ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও মন্ত্রণালয় থেকে পরিদর্শনের জন্য কোনো টিম পাঠানো হয়নি। আমরা করোনা রোগী শনাক্তকরণে যাওয়ার আগে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করতে চাই। যার জন্য মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন অত্যাবশ্যক।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের বায়োসেফটির অবকাঠামোগত কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রিয়েল টাইম পিসিআর যন্ত্র ছিল, আমরা আরো একটি মেশিন সংযোজন করেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবলও প্রস্তুত রয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাইনি। তাই আমরা প্রস্তুত থাকলেও করোনা শনাক্তকরণ কাজ শুরু করতে পারছি না।

তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম সরকারিভাবে বেশকিছু জিনিস পাব, যা করোনা রোগী শনাক্তকরণে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আমাদের এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে তেমন কিছুই দেয়া হয়নি। এজন্য করোনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটি টাকারও বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ল্যাবের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক . শামসুল হক প্রধান বলেন, আমাদের বিভাগে যে ল্যাবগুলো আছে সেখানে সাধারণত নন-প্যাথজনিক স্যাম্পল নিয়ে রিসার্চ করা হয়। তবে প্যাথজনিক নমুনা পরীক্ষা করার জন্য যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন, তা আমাদের ছিল না। করোনা পরীক্ষা করার জন্য যেসব নিরাপদ ক্যাবিনেট প্রয়োজন, তা আমাদের না ছিল না। এজন্য আমরা ল্যাব সংস্কার করেছি।

শাবিপ্রবিতে নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, শাবিপ্রবির ল্যাব পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে চিঠি এসেছে। আজ ল্যাব পরিদর্শন করা হবে। আশা করছি, ১০ মের দিকে এখানে পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি অবগত নন জানিয়ে আনিসুর রহমান বলেন, সিলেটে মাত্র একটি পিসিআর ল্যাব ওসমানী মেডিকেল কলেজে, যা দিয়ে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারছি না। এত পরিমাণে নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে, যা মাত্র একটি ল্যাবে রাত-দিন কাজ করেও চাপ সামলে ওঠা যাচ্ছে না। অবস্থায় শাবিপ্রবির ল্যাব চালু হলে সবার জন্যই ভালো হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন