শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে পদায়ন

উচ্চঝুঁকিতে বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসকরা

জেসমিন মলি

কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে ঢাকা ঢাকার বাইরে ১২টি হাসপাতালকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব হাসপাতালে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের। যদিও নিয়োগের আগে তাদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের অন্যান্য সমস্যা (কো-মর্বিডিটি) রয়েছে এমন চিকিৎসককেও কভিড-১৯-এর চিকিৎসায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে এসব চিকিৎসক আক্রান্ত হলে তাদের অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে আট চিকিৎসককে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনই শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপের রোগী।

একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসকদের মধ্যে কভিড-১৯ সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন। অনেক তরুণ চিকিৎসকই এখন ভয় পাচ্ছেন এবং নিজেদের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সরকারি প্রণোদনা বা ঝুঁকিভাতার চেয়েও নিরাপদ কর্মপরিবেশই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুরক্ষাবিহীন সেবা প্রদান চলতে থাকলে অনেক চিকিৎসকই পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করে রেখেছেন।

পর্যন্ত কতজন চিকিৎসক কভিড-১৯- আক্রান্ত সরকারিভাবে তার কোনো হিসাব জানানো না হলেও চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) হিসাব বলছে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০০ জনের বেশি চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে সিলেটের একজন চিকিৎসক ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন। নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিতের হার ধরলে সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে তারা বলছেন।

বিডিএফ বলছে, বাংলাদেশে চিকিৎসকদের নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিতের হার ১৩ শতাংশের মতো আর অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের তথ্য হিসাবে ধরলে হার ১৫ শতাংশের বেশি হবে, যা সারা পৃথিবীতে চিকিৎসাসংশ্লিষ্টদের মধ্যে ভাইরাসে সংক্রমণের হারের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বণিক বার্তাকে বলেন, শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে চিকিৎসকদের এসব বিশেষায়িত হাসপাতালে পদায়নের ফলে তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবও রয়েছে হাসপাতালগুলোয়। রয়েছে পিপিইর সংকট। একই পিপিই একাধিক চিকিৎসককে ব্যবহার করতে হচ্ছে। সবাইকে সরবরাহ করা হয়নি এন৯৫ বা সমমানের কোনো মাস্ক। আগে থেকেই যারা শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে ভুগছেন, তাদের ভাইরাস সংক্রমণের ফলে উচ্চ ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।

জানা গেছে, দেশে এখন পর্যন্ত লাখ ১১ হাজার নিবন্ধিত চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার জন চিকিৎসক দেশে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। প্রায় ২৫ হাজারের মতো সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। বাকিরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত।

চিকিৎসক অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। কারণ চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য তাদের সরাসরি কভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে আসতে হয়। কারণে বিশ্বব্যাপী হাসপাতালগুলোয় স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের হার অনেক বেশি। ফিলিপাইনে পর্যন্ত হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। একইভাবে চীন, ইতালি, স্পেন ফ্রান্সেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন