সিলেটবাসীর ঘরে থাকা কঠিন করে তুলছে পানি সংকট

দেবাশীষ দেবু, সিলেট

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন’—সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে সিটি করপোরেশন। যদিও তীব্র পানি সংকটের কারণে গত দুদিন ধরে নগরীর অনেক এলাকায় বাসিন্দারা হাত ধোয়ারও পানি পাচ্ছেন না। অবস্থায় মহামারীর কঠিন সময়ে ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে নগরীর অন্তত ছয়টি এলাকার প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দার। 

গত মঙ্গলবার দুপুরে নিজের বাসার বারান্দায় বসে সিটি করপোরেশনের করোনা সচেতনতামূলক মাইকিং শুনছিলেন নগরীর কাজীটুলা এলাকার জামিল আহমদ। তিনি বলেন, তারা বারবার হাত ধোয়ার কথা বলছে। অথচ হাত ধোয়ার পানিটুকুও তারা দিতে পারছে না। লকডাউনের কারণে আমরা বাইরে বেরোতেও পারছি না। আবার পানি সংকটের কারণে ঘরেও থাকতে পারছি না।

শাহী ঈদগাহ এলাকার এহিয়া আহমদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পানি সংকটে ভুগছি। নিয়মিত বিল দেয়ার পরও আমরা ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না। করোনার মতো দুর্যোগেও আমরা পানি পাচ্ছি না।

কাজীটুলা, শাহী ঈদগাহ ছাড়াও নগরীর গোয়াইটুলা, কালাশাহ মাজার এলাকা, কাষ্টঘরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন। পানি না থাকায় রান্নাবান্নাসহ প্রাত্যহিক কাজে দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে আরো।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা বলছেন, নগরীর হাজারিবাগ গোয়াইটুলার দুটি পাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কয়েকটি এলাকায় পানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। পাম্পগুলো মেরামতের কাজ চলছে।

তবে এসব এলাকার সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের অভিযোগ, কিছুদিন পর পরই পাম্পগুলো বিকল হয়ে যায়। ব্যাপারে একাধিকবার সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের বলা হলেও তারা কোনো স্থায়ী সমাধান করছেন না। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ বলেন, কিছুদিন পর পরই এখানকার পাম্প নষ্ট হয়ে পানির জন্য এলাকাবাসী দুর্ভোগে পড়েন। বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে। পাম্প মেরামতের অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তবু স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।

১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. রাশেদ আহমদ বলেন, আমরা এলাকাবাসীর পানির সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালাচ্ছি। পাম্প মেরামত হয়ে গেলে সমস্যা আর থাকবে না।

গতকাল সকালে নগরীর গোয়াইটুলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি পানির পাম্পের পাশে বসে আছেন এলাকার অর্ধশতাধিক নারী। পাম্পের সামনে কলস সারি করে রাখা। 

তাদের অভিযোগ, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাম্পের পাশে অপেক্ষা করেও পানির দেখা পাননি তারা। পানি না থাকায় বাসায় রান্নাবান্না, গোসল, কাপড় ধোয়াসহ অন্য জরুরি কাজগুলো তারা করতে পারছেন না।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর বাসিন্দাদের জন্য প্রতিদিন পানির চাহিদা প্রায় আট কোটি লিটার। এর মধ্যে বর্তমানে সিটি করপোরেশন থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার কোটি লিটার। 

ফলে সব পাম্প সচল থাকলেও প্রতিদিন নগরীতে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি লিটার পানির ঘাটতি থাকে। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বণিক বার্তাকে বলেন, হাজারিবাগ গোয়াইটুলায় দুটি পাম্প নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য আশপাশের কয়েকটি এলাকায় সমস্যা হচ্ছে। বিশেষত উঁচু এলাকাগুলোয় সমস্যা তীব্র। আমরা পাম্পের মেরামতকাজ শুরু করেছি। দু-তিনদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, পানির অধিক চাহিদার কারণে পাম্পগুলো বিরতিহীনভাবে চালাতে হয়। ফলে সংস্কারের পরও পাম্পগুলো মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। 

আলী আকবর বলেন, এমনিতে আমাদের যারা গ্রাহক রয়েছেন, তাদের জন্য তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি লিটার পানির প্রয়োজন। কিন্তু নগরীতে পানির অনেক অবৈধ সংযোগ রয়েছে। তার সঙ্গে আছে ভাসমান গ্রাহক। এসব কারণে পানির সংকট দেখা দেয়। আমরা অবৈধ গ্রাহক চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা বন্ধ রয়েছে। 

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন