করোনাভাইরাসের প্রভাব

রফতানিমুখী সিরামিক শিল্পে চলতি মূলধন শূন্যের কোটায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ববাণিজ্য অবরুদ্ধ। ক্রয়াদেশ বাতিলের মতো ঘটনা ঘটছে। এছাড়া আগের ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রেক্ষাপটে পণ্যের মূল্য পরিশোধ বিলম্বিত হওয়ায় সিরামিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চলতি মূলধন এরই মধ্যে শূন্যের কোটায় নেমে গেছে বলে জানিয়েছে খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) সংগঠনটি সরকারের কাছে সিরামিক খাতের জন্য হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছে।

জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সিরামিক (টেবিলওয়্যার, টাইলস স্যানিটারি ওয়্যার) খাতের বিপর্যয় ঠেকাতে গত ২৩ মার্চ অর্থমন্ত্রীর কাছে সহায়তার আবেদন করে বিসিএমইএ। সেখানে করোনার প্রাদুর্ভাবে খাতের পরিস্থিতি তুলে ধরে ছয়টি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।

দেশের সিরামিক শিল্পে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে দেশী-বিদেশী ৬৮টি প্রতিষ্ঠান। খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের। রফতানির মাধ্যমে খাতটি প্রতি বছর ৪০০ কোটি টাকার বিদেশী মুদ্রা অর্জন করে। আর স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় হাজার কোটি টাকার পণ্য। অর্থনীতিতে খাতটির অবদান বিবেচনা করে করোনার প্রাদুর্ভাবে সিরামিক খাতের পরিস্থিতি তুলে ধরে সরকারের সহায়তা চেয়েছে বিসিএমইএ।

বিসিএমইএ বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে রফতানীকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চলতি মূলধন শূন্যের কোটায় নেমে গেছে। শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয় বলে কাঁচামাল সরবরাহেও সংকট রয়েছে। আবার স্থানীয় বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রিতেও সংকট দেখা দিয়েছে। কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে করোনা নিয়ে আতঙ্ক থাকায় তাদের উপস্থিতি কমে গেছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। প্রেক্ষাপটে শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধ মালিকদের পক্ষে সম্ভব হবে না বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

সার্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রীর কাছে ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেছে বিসিএমইএ। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে সিরামিক শিল্পে উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখার জন্য ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিনা সুদে বিনা জামানতে ন্যূনতম পরবর্তী দুই প্রান্তিকের জন্য প্রয়োজনীয় চলতি মূলধন সরবরাহ করা, শিল্পে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ঋণের সুদ দুই প্রান্তিকের জন্য মওকুফ করা এবং পরিশোধের সময়সীমা আগামী এক বছর পর্যন্ত মুলতবি রাখা, আগামী ছয় মাসের জন্য সিরামিক কারখানাগুলোর ভ্যাট, ট্যাক্স, এআইটির কিস্তি প্রলম্বিত করা, কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি পরিষেবার বিল পরিশোধের সময়সীমা আগামী এক বছর পর্যন্ত মুলতবি রাখা এবং কোনোভাবেই সময়ের মধ্যে ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে সরবরাহ নিশ্চিত করা।

এছাড়া সিরামিক খাতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে হাজার কোটি টাকার একটি আপত্কালীন তহবিল গঠন করে পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি, বেতন ঈদ বোনাস পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছে বিসিএমইএ। সংগঠনটির সর্বশেষ প্রস্তাবনাটি হলো, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় নির্বাহে আগামী এক বছর পর্যন্ত ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনা জামানতে অর্থায়ন প্রাপ্তির সুযোগ রাখা।

বিসিএমইএর মতে, প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে সেগুলোর বাস্তবায়ন করা হলে সিরামিক শিল্প মালিকদের কিছুটা হলেও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে সিরামিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য সংকট কাটিয়ে সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন