‘২৩ সংখ্যাটি বিষাদময় হয়ে থাকবে’

নিশাত ছিল থিয়েটারের এক ধ্যানমগ্ন যোগী। তার মৃত্যুতে থিয়েটার থেমে যেতে পারে না। নিশাত এক সাক্ষাৎকারে বলেছে, ‘আমার মৃত্যু হলেও দেশ নাটক-এর স্বপ্ন থামবে না। তাইজলবাসর ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ হলে প্রদর্শিত হবে। নিশাতের শেষ কাজটা দেখতে আসুন...”—নাট্য সংগঠক ইশরাত নিশাতকে চিরবিদায় জানানোর পরদিনই তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মী নাট্যকার মাসুম রেজা এ আহ্বান জানিয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মূলত এর পরই তুমুল আগ্রহ নিয়ে নাট্য সংগঠন দেশ নাটকের কর্মীরা জলবাসর নাটকটি মঞ্চায়নের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন। গতকালের পর আজো নাটকটির আরেকটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। টকিজের মুখোমুখি হয়ে সংগঠনটির অন্যতম সংগঠক এবং জলবাসর-এর রচয়িতা ও নির্দেশক মাসুম রেজা বললেন কেন তারা থেমে না গিয়ে নিশাতের প্রস্থানের পরপরই নাটকটি মঞ্চায়ন করছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুবেল পারভেজ

ইশরাত নিশাতের অনুপস্থিতিতে দেশ নাটকের প্রথম আয়োজন জলবাসর। এ সম্পর্কে বলুন।

নিশাত একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিল, ‘আমার মৃত্যু হলেও দেশ নাটকের স্বপ্ন থামবে না। মানুষটি সারা জীবন থিয়েটার করে গেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে থিয়েটারকে চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তাই তার মতো একজন শিল্পীর প্রস্থানে সবকিছু থামিয়ে দেয়া একদমই ঠিক নয় বলে আমরা মনে করেছি! এ কারণে নিশাতের প্রয়াণের পর সবাই মিলে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম যে নিশাত যেখানেই থাকুক, কখনো যেন তার মনে না হয়, দেশ নাটক থেমে গেল। নিশাতের এ স্বপ্নকে সত্যি করে রাখতেই আমরা ওর প্রস্থানের পর থেমে থাকেনি, দেশ নাটককে চালিয়ে যাওয়ার শপথ করেছি। আসলে এর মধ্য থেকে এ বার্তাও দিতে চাইথিয়েটার চলছে, থিয়েটার থামার কোনো ব্যাপার নয়।

নাটকটির অভিনয়ের অংশের দায়িত্ব নিশাত পালন করছিলেন। এমন এক পরিস্থিতি আপনি কীভাবে সামাল দিয়েছেন?

নিশাত আমার বন্ধু। তিনি কাজটি কতটা দায়িত্বের মধ্য দিয়ে পালন করছিলেন, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমরা তার সেই কাজটি এগিয়ে নিতে তত্পর হই। এজন্য দলের সবাইকে বলেছিলাম, ‘যা পাওয়ার নিশাতের কাছ থেকে তা পেয়েছ, তাই নিয়েই তোমরা নিজেদের সেরাটুকু তুলে ধরো। তোমাদের তিনি যা দিয়ে গেছেন, সেটি নিয়েই তোমরা মঞ্চে উঠবে। আমি দেখতে চাই, তোমরা নিশাতকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছ। আমার মনে হয়, এ উদ্দীপনা নিয়েই দলের সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করেছে। অবশ্য এক ধরনের বিষাদের উপস্থিতি ছিল সবার মাঝে। এমনও দেখেছি রিহার্সেলের সময় ওদের কেউ কেউ কাঁদছে। কিন্তু তারা পুনরায় উদ্যম নিয়ে কাজে মনোযোগ দিয়েছে।

এমনটা কেন ঘটল বলে মনে করেন?

আসলে নিশাতের সঙ্গে দলের সবার আত্মিক সম্পর্ক ছিল। রিহার্সেলের সময় সেসব স্মৃতিই মনে পড়ছিল। নাটকের প্রতিটি শব্দ, লাইন, নিশাতের পরামর্শ সবই যেন চোখের সামনে ভেসে ভেসে আসছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই একটা বিষাদময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তার পরও চেষ্টা করেছি সবাইকে মানসিক সমর্থন জোগানোর। যদিও কষ্টে আমার ভেতরটা বেসামাল হয়ে উঠেছিল।


দেশ নাটকের এটি ২৩তম প্রযোজনা। ২৩ শব্দটি কি শুধু স্বাভাবিক শব্দ হয়ে থাকবে?

২৩তম প্রযোজনার ২৩ সংখ্যাটি আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থে বিষাদময় হয়ে থাকবে সারা জীবন।

আপনার নাট্যরীতি, দেশ নাটক এবং নিশাতের সংশ্লিষ্টতাএ সবকিছুর যূথবদ্ধতা আপনার ভাবনার জগেক কতটা প্রভাবিত করে?

আমরা দুজন সহযোদ্ধা, ৩৩ বছর ধরে এক মঞ্চে হেঁটে চলেছি। তারও তিন বছর আগে থেকে নিশাতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। ওর শিল্প ধারণা এবং আমার শিল্প ধারণা এক ও একাকার। জলবাসর নাটকটি ওর কাছে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল। ও বারবার বলত, নাটকটির উপস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। ও এতটাই এর ধ্যানে পড়েছিল যে নিজের নাটকের প্রতিও এত বেশি মনোযোগী হয়নি।

দলের অন্যতম প্রধান সদস্যকে হারানোর বেদনা নিয়েও জলবাসর মঞ্চে উঠছে সময়মতো। নবীনদের জন্য বিষয়টি কোন ধরনের বার্তা দেবে?

থিয়েটার বন্ধ হয় না, থিয়েটার চলতে থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে থিয়েটারই একটা অবলম্বন বা মাধ্যম, যা আমাদের ধৈর্য ধরতে শেখায়। তেমনিভাবে এগিয়ে যেতেও শেখায়।

এবার জলবাসর নিয়ে বলুন।

প্রতিনিয়ত আমরা বৈশ্বিক পরিবেশের ক্ষতিসাধন করছি। এমন যদি চলতে থাকে তাহলে একসময় পরিবেশ বৈরী হয়ে আমাদেরই আক্রমণ করবে। এ রকম খুব স্বাভাবিক একটি ভাবনা জলবাসর-এর বিষয়বস্তু। কিন্তু ভাবনাটি আমি তুলে ধরেছি জাদুবাস্তব একটা গল্পের ভেতর দিয়ে। তিন বোনদোর্শি, দোপাটি ও দাওয়াএ তিন সহোদরার গল্প এটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন