চলে গেলেন চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান

বণিক বার্তা অনলাইন

নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান চলে গেলেন না ফেরার দেশে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ২৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গত ২৫ নভেম্বর রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনেরা তাঁকে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ৭০ বছর বয়সী চলচ্চিত্রের গুণি এই মানুষ।

মাহফুজুর রহমান খানের পরিবার জানায়, পুরান ঢাকার চকবাজারে শাহী মসজিদে আজ  শুক্রবার তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে মরদেহ পরিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এফডিসিতে নেওয়া হতে পারে। মাহফুজুর রহমান খানের স্ত্রী ড. নিরাফাত আলম শিপ্রা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০০১ সালের ২৭ আগস্ট মারা যান।

মাহফুজুর রহমান ১৯৪৯ সালে ঢাকার লালবাগে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর চাচা ই আর খান (ইরতিফা-উর-রহমান খান) ছিলেন গত শতকের ষাট থেকে আশির দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন খ্যাতনামা পরিচালক ও প্রযোজক। প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক এহতেশাম ও মুস্তাফিজ ছিলেন তাঁর ফুফাতো ভাই।

চিত্রগ্রহণ শেখার উদ্দেশ্যে তিনি প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবির সেটে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া রফিকুল বারী চৌধুরী ও আবদুল লতিফ বাচ্চুর কাছ থেকে চিত্রগ্রহণের বিভিন্ন বিষয় শিখেছেন।

মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আবদুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্য। তাঁর অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘দর্প চূর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত ‘কাচের স্বর্গ’ (১৯৭২)। একই সময় তিনি আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘জল্লাদের দরবার’ (১৯৭২), আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ (১৯৭৩), মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘আলোছায়া’ (১৯৭৪), নুর-উল-আলম পরিচালিত ‘চলো ঘর বাঁধি’ (১৯৭৪), দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘দাবি’ (১৯৭৪), সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া পরিচালিত ‘একালের নায়ক’ (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অসংখ্য ছবিতে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন মাহফুজুর রহমান খান।

রাজ্জাক পরিচালিত ‘অভিযান’ (১৯৮৪) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক বিভাগে মাহফুজুর রহমান খান প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।পরে আজহারুল ইসলাম খানের ‘সহযাত্রী’ (১৯৮৭), আখতারুজ্জামানের ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ (১৯৯৬), হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ (১৯৯৯), ‘দুই দুয়ারী’ (২০০০), ‘আমার আছে জল’ (২০০৮) ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ (২০১২), কোহিনূর আক্তার সুচন্দার ‘হাজার বছর ধরে’ (২০০৫), গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের ‘বৃত্তের বাইরে’ (২০০৯) চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি আটবার বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার এবং একবার ‘হাজার বছর ধরে’ (২০০৫) ছবির জন্য বিশেষ বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার পেয়েছেন। আরও পেয়েছেন এম আবদুস সামাদ স্মৃতি সম্মাননা (২০১৫)। শোক প্রকাশ করেছেন বিনোদন জগতের অনেকেই। তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য একটি অপূরনীয় ক্ষতি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন