ব্যাংকিং পেশার চ্যালেঞ্জ

এ বি সিদ্দিকী

২০০৬ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে কর্মজীবন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, আমার বন্ধুদের মতো আমিও সরকারি চাকরির তুলনায় বেসরকারির কথাই বেশি ভেবেছি। সরকারি চাকরি, কম বেতন, যেখানে-সেখানে বদলি, অবৈধ আয়ের প্রশ্নএসব ভাবনা ছাড়াও কেউ কেউ বলতেন, ‘পাশের কলিগ পান খেয়ে পিক ফেলল, তোর জামায় একটু লেগে গেল, কী করবি?’ এমন আরো কিছু অদ্ভুত এবং অপরিপক্ব ভাবনা আমাদের চাকরির সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রেখেছে। প্রাইভেট ব্যাংককেই বেসরকারি চাকরির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা ভেবে অনেকেই তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বেসরকারি ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। ভালো বেতন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ পরিপাটি অফিস ইত্যাদি দেখে প্রথম কিছুদিন কেটে যায় ভালো করে কিছু বোঝার আগেই। সময় যেতে থাকে তার চিরায়ত নিয়মে। দুই-চার বছর যাওয়ার পর এই নব্য ব্যাংকারদের অনেকেই ভাবেন, ভুল হয়ে গেছে মনে হয়। কেউ কেউ অন্য বন্ধুদের সঙ্গে অন্য চাকরির পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েও যান। কিন্তু ভালো বেতন আর অন্যান্য সুবিধার যে ফাঁদ, তা থেকে বেরিয়ে যাওয়া সহজ নয়। এভাবে কয়েক বছর চলে যাওয়ার পর যারা ভাবলেন যে সঠিক পথেই আছেন, তাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা অনুভব করলেন যে ভুল হয়ে গেছে, তাদের আর ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ সারা দিন অফিস করে বাসায় ফিরে নতুন করে চাকরির জন্য পড়ালেখা করা কঠিন কাজ। আর তার চেয়ে বড় কথা হলো, বয়স যে ত্রিশের সীমানা পেরিয়ে গেছে। আমার জানামতে পরের গ্রুপের সদস্যই বেশি। তবে কেউ যে খাঁচা ভাঙতে পারেননি তা নয়। আমাদের সঙ্গের একজন, শিক্ষাজীবনে আমার মতো যার সবগুলোতেই প্রথম বিভাগ, তিনি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে অর্ধেক বেতনে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন এবং কিছুদিন পর ফুল স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে চলে যান। যতটুকু জানি, তিনি সুখী এবং এখন তার পিএইচডি শেষের পথে। আবার এর ঠিক উল্টা উদাহরণও আছে। আমাদের সঙ্গের আরেকজন ব্যাংক ছেড়ে দিয়ে সিভিল সার্ভিসে চলে গেলেন, দু-তিন বছর পর আবার ব্যাংকে ফিরে এলেন সমসাময়িকদের নিচের পোস্টে। যারা ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন, একটা সময় পরে বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পারেন না এবং সারা জীবন ফাঁদে পড়ার মতো কষ্ট নিয়ে পার করেন, তাদের মনঃকষ্টের কথা ভেবেই আলোচনা।

নতুন যারা কর্মজীবনে প্রবেশ করবেন এবং ব্যাংকিংকে পেশা হিসেবে নিতে চান, তাদের উদ্দেশে কিছু বিষয় উল্লেখ করতে চাই। যাতে উল্লিখিত ফাঁদে পড়ার মতো কষ্ট নিয়ে যাপিত জীবন কারো না হয় এবং প্রতিষ্ঠানও মনেপ্রাণে ব্যাংকার হতে চান এমন অফিসার পায়। ব্যাংকে, বিশেষভাবে বেসরকারি ব্যাংকে কর্মজীবন শুরুর আগে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার তা নিম্নরূপ:

প্রথমত, ব্যাংকারের কাজের পরিধি সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। অর্থাৎ কর্মজীবন শুরু করার পর থেকে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত ব্যাংকারের কাজ কী, তার কিছুটা হলেও জানা দরকার। ব্যাংকের বাইরে থেকে আমরা ধারণা করি, ব্যাংকার টাকা জমা নেয়া প্রদান করা, হিসাব খোলা, বিনিয়োগ বা লোনের কাজ, এলসি ইত্যাদি করেন সারা দিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসে বসে। কী আরাম! বাস্তবে দৃশ্যমান কাজ ব্যাংকারের কাজের অর্ধেক বা কোনো কোনো ব্যাংকে অর্ধেকেরও কম প্রকাশ করে। বিষয়টি পরিষ্কার করা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন