ব্যাংকঋণের মহামারী

রবিউল হোসেন

খেলাপি ব্যাংকঋণের বেসামাল সমস্যার ত্বরিত সমাধান আসলেও কি সম্ভব? সম্ভব হলে তা অবিলম্বে হচ্ছে না কেন? এটি একটি বিশেষ ভাবনার বিষয়। এ উদ্বেগ অবশ্যই জ্বালাময়ী। কারণ এমন ঋণের পাল্লা দিন দিন ভারী হচ্ছে পুরনোর সঙ্গে নতুন ঋণ বর্ধিত হারে অনাদায়ী হওয়ার অস্বাভাবিক বাড়তি চাপে। ব্যাংকের ঋণ বিভিন্ন ধরনের ক্রমবর্ধমান হারে অনড় হয়ে আটকে পড়ছে। ব্যাংক বা ঋণদাতাদের সাধ্যমতো চেষ্টাও এমন সব খেলাপি ঋণ আদায় করতে সমর্থ হচ্ছে না। এরূপ অবস্থা চলতে থাকলে ঋণ আদায় কালচার এ দেশে একদিন খোলামেলা ঋণ হাইজাক কালচারে রূপ নিয়ে মহামারী সৃষ্টি করতে পারে।

জন্মগত রুগ্ণ ঋণ সংগত কারণে খেলাপি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ঋণের সার্বিক খেলাপি হওয়ার দায় আসলে কার? সন্তান খারাপ হলে সমাজ যেমন তার দোষ মা-বাবার ঘাড়ে চাপায়, তেমনি ঋণ খারাপ হলে তার দায়িত্ব ঋণদাতার ওপরই বর্তানোর কথা। তাই খেলাপি ঋণের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ ব্যাংকারদের নেই। ভালো ঋণ দেয়ায় বাধ্যবাধকতা এবং খারাপ ঋণ দেয়া ও তা অনাদায়ে জবাবদিহিতার কঠোরতা না থাকায় ঋণ আদায় সংস্কৃতি এ দেশে সংক্রামক ব্যাধি হয়ে বেড়ে চলছে। মূলত ঋণ আদায়ের সব আইনকানুন, নিয়মাচার অবাধে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। তাই তো দেশে ব্যাংকঋণের মড়ক ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলেছে।

কিছুদিন আগে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিশেষ চতুষ্পক্ষীয় সভায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ২০টি সুপারিশ পাওয়া গেছে বলে খবর বের হলো (দৈনিক বণিক বার্তা, ২৭ আগস্ট ১৯)। ওই সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি, বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান খায়রুল হক এক সারগর্ভ বক্তব্যে ব্যাংকঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকারদের বেশ জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন; যা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ পেশায় অব্যাংকার হয়েও স্বকীয় মেধা, বুদ্ধিমত্তা এবং বিচারিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতার বলে ব্যাংকিংয়ের মতো টেকনিক্যাল বিষয়ের ওপর গভীর আলোকপাত করে তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন। এমন সব পরামর্শ দেশের বিভিন্ন সভা-সমিতি, সেমিনার, টিভি টকশো ও সাক্ষাত্কারে অহরহ আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। এমনকি সরকারি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দাদাগিরি অনুশাসন তথা নির্দেশনাও কোনো কাজে আসছে না। তাদের সার্কুলার ঘন ঘন পরিবর্তন হচ্ছে এবং এ কারণে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রকদের পারঙ্গমতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। প্রসঙ্গত বলতে হয়, দক্ষ চিকিৎসক দ্বারা নির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় হয়ে তার ওপর সঠিক ওষুধ না পড়া পর্যন্ত যেমন রোগ সারে না, তেমনি পেশাদার ব্যাংকার দ্বারা ব্যাংকিংয়ের প্রকৃত দুর্বলতা চিহ্নিত না হয়ে অব্যাংকার নিয়ন্ত্রকের পরীক্ষামূলক ব্যবস্থায় কোনো কাজ হবে না। অতএব, মানব-রোগীর অমূল্য জীবনের মতো অর্থনীতির প্রাণ ব্যাংকিংয়ের সবল অস্তিত্ব সুরক্ষার প্রয়োজনে দক্ষ ও অভিজ্ঞ পুরনো ব্যাংকারের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যথায় এ খাতের ঊর্ধ্বমুখী দুরবস্থা দূর হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। 

বর্ণিত চতুষ্পক্ষীয় সভার সুপারিশে আইন সংযোজন, সংশোধনের সঙ্গে কিছু নতুন আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। এমনটি করা হলে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য আপাতদৃষ্টে কিছু ভালো কাজ করা হবে। কিন্তু তাতে বাস্তবিক কোনো সুফল পাওয়া যাবে কিনা, নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ এ দেশে আইনের কমতি নেই, তবে তার সঠিক প্রয়োগে পর্যাপ্ত ঘাটতি রয়েছে। তাই হয়তো আইনবজ্র  আঁটুনি ফসকা গেরোর মতোই ফেঁসে গিয়ে নির্বাক বসে থাকছে।

উল্লিখিত চতুষ্পক্ষীয় সভার আরেক পরামর্শে বলা হয়েছে, ঋণ দেয়ার আগে অর্থাৎ ঋণপত্র খোলার বা সরাসরি ঋণ দেয়ার আগে সেই সেক্টরের ডিমান্ড গ্যাপ, কেওয়াইসি, ঋণের জামানত, সেক্টরওয়ারি বাজেট, ঋণের সঠিক ব্যবহার, ঋণ আদায়ের সুযোগ ও সম্ভাবনা যাচাই-বাছাই করে তার যথার্থতার ওপর নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়া ঋণ প্রশাসন কাজে নিয়োজিত সব কর্মীর সততা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, কাজের আগ্রহ ইত্যাদির উপযুক্ততা সম্পর্কেও সন্তুষ্ট হতে হবে। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায়, ঋণ অনুমোদন-পূর্ব এবং অনুমোদন-উত্তর সব অবশ্যকরণীয় কাজ সঠিকভাবে করা না হলে ঋণ খারাপ হবে এবং তার কুফল ব্যাংকিং খাতকে সুস্থ থাকতে দেবে না। 

আসলে দেশী ব্যাংকিংয়ে নির্বিচারে নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড হয় বিধায় এ খাতের অবস্থা ক্রমে খারাপ হচ্ছে। নতুন নতুন আইনের নিষ্ক্রিয়তা এটি প্রণয়নকারী মন্ত্রণালয়/ডিপার্টমেন্টের পারফরম্যান্সের দুর্বলতা প্রমাণ করছে। কারণ আইন পাস হওয়ার পর সঠিকভাবে তা প্রয়োগ হচ্ছে কিনা বা প্রয়োগ হলেও তাতে প্রত্যাশিত ফল আসছে কিনা, সে খবর হয়তো কেউই রাখছেন না। যাদের ওপর আইন প্রয়োগের দায়িত্ব পড়ছে, তারা নির্বিকারে এমনসব আইনকে পাশ কাটিয়ে চলছেন অথবা নিজেদের এজেন্ডার কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না। অথচ এ কাজের প্রক্রিয়ায় অযথা বিপুল অর্থ ব্যয় হয়ে সংস্থার অপচয় ও ক্ষতির অংক বাড়নো হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারও পর্যাপ্ত ট্যাক্স পাচ্ছে না। এভাবেই কথিত সব আইন ও সিদ্ধান্ত হয়তো প্রহসনের ফাঁদে পড়ে অপাঙেক্তয় হয়ে যাচ্ছে। আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারী মূল কর্তৃপক্ষ অভিন্ন হলে আইন বাস্তবায়নের কার্যকারিতা অধিক সক্রিয় হতে পারে। কারণ তারা দায়িত্ব এড়াতে পারে না। অন্যদিকে ভিন্ন হলে তার জন্য সক্রিয় পৃথক তদারকি ব্যবস্থা থাকতে হয়। তা না হলে দায় ভাগাভাগির টানাপড়েনে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।

আইন ছাড়াও দায় এড়াতে এ দেশে প্রায় সব ঘটনায় কমিটি গঠন প্রাধান্য পায়। অবশ্য ম্যানেজমেন্টেরডিভিশন অব লেবার থিওরির নিরিখে কোনো বড় কাজ ভালোভাবে করতে কমিটির প্রয়োজন পড়তে পারে। আবার ব্যাংকিংয়ের বড় অনিয়ম ও দুর্ঘটনা তদন্তেও কমিটির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এমন সব কাজে অথবা ব্যাংকের উন্নয়নের প্রয়োজনে গঠিত কমিটির সদস্যরা প্রধানত অব্যাংকার হয়ে থাকেন, যাদের অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গ্রুপের। যদিও ব্যাংকিং কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতায় তাদের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এমন সব সদস্য তাদের মূল কাজে বিশেষ পারদর্শী। নিজেদের দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই তারা পদোন্নতি পেয়ে বড় বড় দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অনেকে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কারও পান। কিন্তু নিজ নিজ অঙ্গনে নিজেদের সেসব স্বীকৃত প্রশাসনিক দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে আবশ্যকীয় সহায়ক হতে পারে না। তাই তাদের উঁচু মানের স্বাগতিক দক্ষতা, মেধা, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি দিয়ে তারা ব্যাংকিং খাতকে ভালোভাবে চালাতে চাইলেও তেমনটি করতে সমর্থ হন না। এ কারণেই তাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা কাটছে না। আসলে দুর্বলতা দেশের প্রশাসনিক প্রথায়। এদিকে কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন।

উল্লিখিত মতামতের সপক্ষে অদূর অতীতের একটি রেগুলেটরি সিদ্ধান্তের উপমা টানা যেতে পারে। যেমন খেলাপি ঋণ আদায়ে ২০০৩-০৪ সালে সরকারি সমর্থনে প্রাইভেটডেট রিকভারি এজেন্ট নামে একটি বিশেষ কার্যক্রম চালু হলেও তা সফলতা পায় না। তাই খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্প্রতি প্রস্তাবিতঅ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ভাগ্য ওই এজেন্সির মতো হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। এ কারণেই হয়তো অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি প্রবর্তনের পক্ষে আইএমএফের সমর্থন পাওয়া যায়নি। আসলে এ কোম্পানি সরকারি হলে জাতীয় কোষাগারের টাকায় সব ব্যাংকের খারাপ ঋণ অ্যাসেট হিসেবে কিনে ওইসব ব্যাংকের ব্যালান্স শিটকে মেকি সুস্থতা দিতে পারলেও তা অস্থায়ী হবে। ফলে সেসব ব্যাংক পরিশেষে শক্ত-সবল হতে পারবে না। কারণ ব্যাংকের অধিকসংখ্যক অপটু ও অনীহ কর্মিবাহিনী হয়তো পূর্ববত অনিয়মের মহড়াই দেবে। তাই প্রস্তাবিত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এমন দীর্ঘ অনড় ঋণ আদায়ে সফল হবে, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। তাহলে প্রস্তাবিত কোম্পানির ঋণ ক্রয়ের কাজে জনগণের ট্যাক্সের টাকা এবং চড়া সুদের বৈদেশিক ঋণের টাকা খরচ হবে, কিন্তু দেশের উন্নয়ন ফান্ডে ঘাটতি ঘটবে। অবশেষে দেশেরডিফল্ট কালচার’-এর বদৌলতে ওই ক্রয়কৃত অনড় ঋণ আদায় হবে না। ফলে উল্লিখিত বাজেট ঘাটতি ক্রস ম্যাচিংয়ের কারণে অবশেষে বাজেট বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশের উন্নয়নকাজকে বাধাগ্রস্ত করবে। তখন ফান্ডের অভাবে বিদেশী ঋণ সুদসহ পরিশোধ করা দুরূহ হবে এবং তাতে নতুন বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তিতে সমস্যা দেখা দেবে। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকির অভাবে দেশের রফতানি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণসহ শিল্পোন্নয়নের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল, মেশিন ইত্যাদির আমদানি সংকটে পড়বে। ফলে চলমান উন্নয়নে অগ্রগামী বাংলাদেশ এক পা এগিয়ে আবার দুই পা পিছিয়ে যাওয়ার অবস্থায় পড়বে, যা সরকারের অর্জিত যশস্বী ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। অন্যদিকে প্রস্তাবিত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বেসরকারি হলে আগের ব্যর্থ ডেট রিকভারি এজেন্ট’-এর মতো শক্তিধর স্বেচ্ছাখেলাপি ঋণ আদায়ে অসফল হবে। অতএব, ব্যাংক এখন অশুভ চক্রে পড়ে গেছে। সরকারকে মরিয়া হয়ে এর সুরাহা করতে হবে। অন্যথায় ব্যর্থতার বাড়তি বোঝায় জাতীর দুর্দশা বাড়বে। 

উল্লেখ্য, আইএমএফের পক্ষে আমাদের দেশের অন্তর্নিহিত ভাবধারা পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। সে কারণে তাদের উপদেশ, পরামর্শ আমাদের জন্য সবসময় পর্পূির্ণ সফলতা না-ও দিতে পারে। যেমন সর্বশেষ কেয়ারটেকার সরকারের উদ্যোগে আইএমএফের পরামর্শে এবং ১৪৮ কোটি টাকার ঋণে দেশের সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে সংস্কারের কর্মসূচি নেয়া হয়। ওই ঋণের আরেক শর্তের সঙ্গে ব্যাংকের শুধু এমডি বা প্রধান নির্বাহীদের বেতন ৬০ গুণ বৃদ্ধি করা হয় (মাসিক ১৫ হাজার থেকে ৯ লাখ টাকা) এতে ব্যাংকের অবশিষ্ট বিশাল কর্মিবাহিনীর স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়া সেখানে টিমওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে তদানীন্তন সরকারের সেই অবাস্তব প্রত্যাশিত ব্যাংক সংস্কার ব্যর্থ হয়। এরপর হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংক ইত্যাদি বড় ঋণ কেলেঙ্কারি দেশী ব্যাংকিং ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করে বেকায়দায় ফেলে দেয়। আসলে তখন বিভিন্ন ব্যাংকের এলোমেলোভাবে ঋণ প্রদানের ফলে খেলাপি ঋণের কলেবর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ব্যাংক বোর্ডের নামে ব্যাপক সমালোচনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়, যা সামলাতে কতিপয় পর্ষদ পরিচালককে আন্তঃব্যাংকে বদলি হতে দেখা যায়। অতঃপর আবার গত্বাঁধা নতুন আইন প্রণয়ন এবং নতুন কমিটি গঠনের কর্মকাণ্ড চলতে থাকে। ব্যাংকারদের অপেশাদারি ও অসততাজনিত দুর্নীতি এমন ব্যর্থতার মূল কারণ হতে পারে। 

যাহোক, ব্যাংকিং খাতের চলমান নিম্নমুখিতার ইউটার্ন করাতে দুটি বিশেষ পদক্ষেপ অতি জরুরি। এক. পরীক্ষামূলকট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতি অবিলম্বে বন্ধ করা। দুই. সঠিকভাবে টার্গেট করে আগাম কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করা। এমনটি করা না হলে ফাটল বেড়ে জাতীয় অর্থনীতির প্রধান সেক্টর এ ব্যাংক ধ্বংসের অতল জলে তলিয়ে গিয়ে দেশকে বেসামাল অস্থির অবস্থায় ঠেলে দিতে পারে। তবে একটি খুশির বিষয় হলো, ব্যাংকিং খাতকে বাঁচাতে দেশের উন্নয়ন বাজেট থেকে আর কোনো সহায়তা না দেয়ার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সাহসী ঘোষণা নতুন ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকায় এবং চলমান নতুন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে অথবা মার্জার/অ্যামালগামেশনের সাহায্যে বেঁচে থেকে ব্যাংকিং খাতকেওভার ব্যাংকিংয়ের অনৈতিক ব্যাংকিং প্রতিযোগিতার কুফল থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে বলে ধারণা। তবে ভয় হয়, এই একটি মাত্র ভালো সিদ্ধান্ত সরকারের তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক অসফল সিদ্ধান্তের ঢেউয়ে ভেসে না যায়। তাই সরকারকে এ ব্যাপারে অধিক সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। তা না হলে ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা কাটবে না।

দেশী ব্যাংকিংয়ের ক্রমাবনত অবস্থার ওপর প্রকাশিত আরেকটি খবরনাজুক অবস্থায় ৯টি ব্যাংক (ঋণের অর্ধেকই খেলাপি)’ অনুযায়ী এসব ব্যাংকের আয় কমায় প্রভিশন ঘাটতির দায় বাড়ছে। এছাড়া অযৌক্তিকভাবে ঘন ঘন ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ এবং আদায়শূন্য ঋণ অবসায়ন শ্রেণীকৃত ঋণ বাড়িয়ে ব্যাংকিংয়ের তথা জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি করছে। এমন ক্ষতি দেশের কর্মসংস্থানে আঘাত হেনে সামাজিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে। অবশ্য সরকারের শক্ত সমর্থন পেলে দেশের অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ বাণিজ্যিক ব্যাংকাররা ব্যাংকিংয়ের আশঙ্কিত ভয়াবহ অবস্থা সামাল দেয়ার কাজে সফল হতে পারেন। কারণ আমার বিশ্বাস, তারা জীবনের শেষ সময়ে এসে কোনো দুর্নীতিতে জড়াবেন না। তাই ব্যাংকিং সেক্টরকে ভালো করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত ডিএমডি-এমডি দিয়ে অবিলম্বে একটিস্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করা অপরিহার্য। প্রস্তাবিত ব্যাংক কমিশনের প্রধানের অবশ্যই আজীবন বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ে, বিশেষ করেক্রেডিটফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যাংকিংয়ে সরাসরি কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অব্যাংকার (অবাণিজ্যিক ব্যাংকার অথবা বোর্ড পরিচালক/চেয়ারম্যান, প্রশাসক বা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার) কেউ কমিশনের প্রধান হলে ব্যাংক সংস্কারের উদ্যোগ সফল হবে না।

(বাকি অংশ আগামীকাল)

 

রবিউল হোসেন: সাবেক এমডি, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড   

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন