এবছর চবিতে ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্রসংগঠনগুলোর মিছিল হবে না

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, চবি

ভর্তি পরীক্ষার সময় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য দেখাতে বড় আকারের মিছিল করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ঘটনা। তবে এবছর এ ‘রীতি’ থেকে সরে আসছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। আসন্ন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রসংগঠনগুলো মিছিল করবে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে তারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। উপলক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের নেয়া সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এএফএম আওরঙ্গজেব, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান, শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নুর আহমদ, ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (একাডেমিক শাখা) এসএম আকবর হোছাইন, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী, সহকারী প্রক্টর মো. রেজাউল করিম প্রমুখ।

অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি, ডিএসবিসহ সাত শতাধিক আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। আর জালিয়াতি ঠেকাতে ডিজিএফআই, এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর ১২০ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন বলেও জানান তিনি। 

এবছর প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় চার ইউনিট ও দুটি উপ-ইউনিটের মোট চার হাজার ৯২৬টি আসনের বিপরীতে এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৭০ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। শিরীণ আখতার বলেন, ‘আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইউনিট প্রধান, বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে শুধু দুটি ইউনিটের পরীক্ষা পাশ্ববর্তী হাটহাজারী সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত হবে। এবার ভর্তি পরীক্ষার্থী সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি হওয়ায় ক্যাম্পাসের বাইরে শুধু একটি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আবাসিক হলগুলোর প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকরা হল পরিদর্শন করবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যতীত সকল ধরনের পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট, চিকা মারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এসব অপসারণের কাজও চলছে। ছাত্র সংগঠনগুলো এবার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মিছিল করবে না। তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সহযোগিতা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছাত্রী ও নারী অভিভাবকদের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেখ হাসিনা হলে বিশ্রাম ও ওয়াশরুম ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল হোটেল ও খাবারের দোকানে নির্ধারিত মূল তালিকা সাটানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সহকারী প্রক্টর মো. রেজাউল করিম জানান, ‘এবছর ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ক্যাম্পাসের ভেতরে সকল ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে ও অভিভাবকদের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জালিয়াতি রোধে অভিযুক্তদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে ও মাঠে সক্রিয় থাকবে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে সকল ধরনের নোট, শিট, সাজেশন বিক্রয় ও মডেল টেস্ট নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। র‍্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় থাকবেন। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এসএম আকবর হোছাইন বলেন, ভর্তি পরীক্ষার ৪৮ ঘন্টা আগে আসন বিন্যাস ওয়েব সাইটে জানানো হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করা বাধ্যতামূলক নয়। প্রশ্নফাঁসসহ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকলে কেন্দ্রে প্রবেশের এক ঘন্টা পূর্বে লিখিতভাবে ইউনিট কো-অর্ডিনেটরকে জানাতে হবে। পরীক্ষার্থীদের শনাক্তকরণে অ্যান্টি প্রক্সি অ্যাপস ব্যবহার করবেন দায়িত্বরতরা। বোরখা, নেকাব পরিহিত ছাত্রীদের মুখমন্ডল ও কান প্রদর্শন করতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল, স্মার্ট ঘড়িসহ যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস নিষিদ্ধ।

এদিকে এবছর ভর্তি পরীক্ষার সময় কোন ধরনের শোডাউন বা মিছিল করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। তিনি বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় মাঠে থাকবে ছাত্রলীগ। আমরা এবার কোন ধরনের শোডাউন বা মিছিল করবো না। শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় ছাত্রলীগের ‘জয় বাংলা জরুরি বাইক সার্ভিস টিম’, ‘অ্যান্টি র‍্যাগিং টিম’, ‘মেডিক্যাল টিম’, ‘তথ্য সহায়তা টিম’ কাজ করবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানি ও কলম সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফী নিতু বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি স্টলের জন্য আবেদন জানিয়েছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিয়োজিত থাকবেন। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রসহ যাবতীয় তথ্য জানিয়ে সহায়তা করা হবে।

প্রসঙ্গত, আগামী রবিবার (২৭ অক্টোবর) থেকে এবারের ভর্তি যুদ্ধ শুরু হয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। দুই শিফটে ভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন