গরু আমদানি নিয়ে শঙ্কায় সিরাজগঞ্জের খামারিরা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ

প্রতি বছর ঈদুল আজহার দিন যত ঘনিয়ে আসে, ততই সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাটে বাড়তে থাকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আনা বিভিন্ন জাতের গরুর সংখ্যা। এসব গরুর কারণে কয়েক বছর ধরে লোকসান গুনতে হয়েছে জেলার খামারিদের। তাই এবারো বিদেশী গরু নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের অধিকাংশ পশুর হাটে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আনা গরুর সংখ্যা বেশি থাকে। এছাড়া বড় গরুর প্রতি ক্রেতাদেরও আগ্রহ থাকে বেশি। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় স্থানীয় খামারিদের। এবারো যদি এসব দেশ থেকে আমদানি করা গরু হাটে ওঠে, তাহলে খামারিদের আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে না। স্থানীয় খামারিদের টিকিয়ে রাখতে বিদেশী গরু আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের তালিকাভুক্ত খামারি ১২ হাজার ৩৫৮ জন। এর বাইরেও একটি, দুটি ও তিনটি করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সমপরিমাণ মানুষ কোরবানিকে সামনে রেখে গরু-ছাগল লালনপালন করেন। এ বছর জেলার নয় উপজেলায় ৬৯ হাজার ৭৫৭টি ষাঁড়, ১১ হাজার ৫৮২টি বলদ, ৪৭ হাজার ৬১৭টি ছাগল ও ৮ হাজার ২০৭টি ভেড়াসহ ১ লাখ ৪৪ হাজার ২৩৩টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলায়ও পাঠানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পশু কোরবানির হাটে উঠলে দেশী পশুর চাহিদা কমে যায়। এ কারণে খামারিদের প্রতি বছরই লোকসান গুনতে হয়। এর মধ্যে অনেক খামারি আগ্রহ হারিয়ে এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। তাই ঈদুল আজহা পর্যন্ত গরু আমদানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শাহজাদপুর উপজেলার রেশম বাড়ির খামারি ফরহাদ ফকির বলেন, কোরবানিকে সামনে রেখে প্রতি বছরই এ অঞ্চলের অসংখ্য খামারি গরু ছাগল লালনপালন করেন। আমি এ বছর ২৫টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। ভারতীয় গরু হাটে না উঠলে ভালো দাম পেতে পারি। কিন্তু প্রত্যেক বছর শেষ মুহূর্তে যে পরিমাণ ভারতীয় গরু হাটগুলোয় ওঠে, তাতে এবারো আমাদের শঙ্কা কাটছে না। তার ওপর গোখাদ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। এ অবস্থায় যদি কোরবানির ঈদে আমাদের লোকসান দিতে হয়, তাহলে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

সদর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের তালুকদার ডেইরি ফার্মের মালিক বোরহান তালুকদার বলেন, ২০১৬ সালে ২০টি গাভী দিয়ে খামার শুরু করি। বর্তমানে খামারে ২২০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টি উন্নত জাতের গরু কোরবানিকে সামনে রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রত্যেক বছর ভারতীয় গরুর কারণে আমাদের লোকসান গুনতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে একদিন জেলার সব খামারি গরু লালনপালন বন্ধ করে দেবেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আকতারুজ্জামান ভুইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ১৫ হাজার বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গরু লালনপালনের ক্ষেত্রে খামারিদের সচেতন করার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, হাটে যদি ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসা পশু ওঠে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় পশুর দাম কমে যাবে। এজন্য সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে গরু আসা বন্ধ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন