আশুলিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শ্রমিকদের সংঘর্ষে নিহত ১

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I সাভার

আশুলিয়ায় গতকাল শ্রমিকদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার শ্রমিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। আহতদের মধ্যে অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাংচুর করেছেন শ্রমিকরা।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জিরাবো এলাকার মণ্ডল নিটওয়্যার কারখানার সামনে এ সংঘর্ষ ঘটে। নিহত শ্রমিকের নাম কাউসার হোসেন খান। তিনি আশুলিয়ার টোংগাবাড়ী এলাকার ম্যাংগো টেক্স লিমিটেডের কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মধ্য রতনপুর গ্রামে। 

বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের ভাষ্য, কারখানা খুলে দেয়াসহ বেশকিছু দাবিতে গতকাল সকালে মণ্ডল নিটওয়্যারের শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে মালিকপক্ষ। বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি ছিলেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে গিয়ে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় পাশের ন্যাচারাল ডেনিমস ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিকদের মাঝে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে মণ্ডল কারখানার শ্রমিকদের আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে। পরে এ দুটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে মণ্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার সামনে যান। এ সময় আশপাশের কিছু কারখানার শ্রমিকরাও তাতে যোগ দেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়।

আহত বেশির ভাগ শ্রমিককে নেয়া হয় সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এনামুল হক মিয়া গতকাল বিকালে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘একজন শ্রমিককে দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার পেটের বাম পাশে গুলি লেগেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ আরো দুজন চিকিৎসাধীন।’

আহত কয়েকজনকে নেয়া হয় সাভারের পিএমকে হাসপাতালে। এ চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে চারজন শ্রমিককে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের পায়ে গুলি লেগেছে।’

প্রাথমিকভাবে গুলিবিদ্ধ দুই শ্রমিকের নাম জানা গেছে। তারা হলেন ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবীব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান। 

ন্যাচারাল ডেনিমসের এক শ্রমিক বলেন, ‘সকালে আমাদের কারখানায় সবাই কাজ করছিলেন। কোনো ধরনের আন্দোলন ছিল না। তবে মণ্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন।’

ন্যাচারাল ডেনিমস কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের (এইচআর) কর্মকর্তা সবুজ হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের কারখানায় কোনো সমস্যা ছিল না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছিলেন। হঠাৎ শ্রমিকদের কাছে গুজব আসে, পাশের মণ্ডল গার্মেন্টে শ্রমিক মারা গেছে। এ খবর শুনেই সব শ্রমিক মণ্ডল গার্মেন্টের সামনে চলে যান। পরে ওখানে কী ঘটেছে আমার জানা নেই।’

এ ব্যাপারে শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন