প্রতিযোগিতামূলক দরে লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহনের সুযোগ চান ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি : সংগৃহীত

অভ্যন্তরীণ নদীপথে ছোট আকারের বা লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহনের পুরো প্রক্রিয়াটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) কিন্তু দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ এনে জাহাজ মালিকদের একটি পক্ষ সংস্থা থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে পণ্য পরিবহন শুরু করে। এতে প্রতিযোগিতামূলক ভাড়ায় সময়মতো পণ্য হাতে পেয়ে সুবিধা পায় আমদানিকারকরা। তবে আলাদাভাবে জাহাজ পরিচালনায় তৈরি হয় বিরোধ।

এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি) গঠনের মাধ্যমে নদীপথে পণ্য পরিবহনের নির্দেশনা দেয়া হয়। ফলে স্থগিত হয়ে যায় ডব্লিউটিসির কার্যক্রম।

অভিযোগ উঠেছে, গত বছর বিলুপ্ত হওয়া ডব্লিউটিসি পুনরায় চালু করার চেষ্টা চলছে। এদিকে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিধিমালা প্রণয়নের জন্য চলছে তোড়জোড়। লাইটার জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর পণ্য পরিবহন নীতিমালা ২০২৪-এর খসড়ার ওপর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আজ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি স্টেকহোল্ডারদের উপস্থিতিতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এতে সভাপতিত্ব করবেন।

টিকে গ্রুপের হেড অব বিজনেস (গ্রেইন অ্যান্ড লজিস্টিকস) সত্যজিৎ দাস বর্মণ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এক দশক আগেও আমরা বড় পরিসরে লাইটার জাহাজ মালিকদের সঙ্গে কার্গো পরিবহনে চুক্তিবদ্ধ হতাম। পরিবহন চাহিদা আরো বাড়তে থাকলে ডব্লিউটিসি গঠন করে আমদানিকারকদের এক প্রকার জিম্মি করে ফেলা হয়। বাই রোটেশনে জাহাজ দিত, সময়মতো লাইটার না পেয়ে একেকটা মাদার ভেসেলের ড্যামারেজই চলে আসত -১০ লাখ ডলার। এক পর্যায়ে লাইটার জাহাজ বরাদ্দ পেতে কমিশন বাণিজ্য শুরু করে দিল। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আবারো ট্রান্সপারেন্ট ওয়েতে লাইটার জাহাজ ডিস্ট্রিবিউট হচ্ছিল। যেটা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের আমলে আবারো অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু হয়। এতে অতিষ্ঠ হয়ে বড় আমদানিকারকরা বিশেষ করে খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী সিমেন্ট কোম্পানিগুলো সরকারের অনুমতি নিয়ে নিজস্ব লাইটার জাহাজ তৈরি করে নিজেদের পণ্য পরিবহনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আমদানি ভলিউম বাড়ায় আমাদের এখনো জাহাজ ভাড়া করতে হয়। আগে বহির্নোঙর থেকে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া নিত টনপ্রতি ৬৬২ টাকা। সেটা কমে এখন টনপ্রতি ৫৪০ টাকা পরিবহন করা যাচ্ছে। সাশ্রয়ের সরাসরি সুফলভোগী ভোক্তারা। আমরা চাই সিন্ডিকেটের কারণে নদীপথে পণ্য পরিবহনে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।

দেশের লাইটার জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের নির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের প্রতিনিধি নিয়ে গঠন করা হয়েছিল ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল। লাইটার জাহাজ মালিকদের বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিভোয়া), কোস্টাল ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (কোয়াব) এবং ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগং (আইভোয়াক) নামের তিনটি সংগঠনের সদস্যদের মালিকানাধীন জাহাজগুলো বন্দরের বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহন করে থাকে। ডব্লিউটিসি অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে লাইটার জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগং (আইভোয়াক) বের হয়ে আলাদা সেল গঠন করে। দুটি পৃথক সেল থেকে জাহাজ সিরিয়াল দিয়ে পরিচালনা করায় আমদানিকারকরাও প্রতিযোগিতামূলক দামে শিল্পের কাঁচামাল, খাদ্যপণ্য সময়মতো হাতে পাচ্ছে। তবে নিয়ে আবারো জাহাজ মালিকদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হলে বিশৃঙ্খলা এড়াতে চট্টগ্রামের নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি সেল গঠন করা হয়। এরপরও জাহাজ মালিকদের বিরোধ চলতে থাকলে ডব্লিউটিসি বাতিল করে গঠন করা হয় বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি) তবে ডব্লিউটিসি নামের সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়া হলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে পুনরায় সংস্থাটির কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নদীপথে শৃঙ্খলা জাহাজ ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার উদ্দেশ্যে ডব্লিউটিসি গঠন করা হয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্থাটি ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার হতে শুরু করে। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ভাড়া নির্ধারণ, অনিয়ম, পণ্য পরিবহনে সিরিয়াল নিয়ে দুর্নীতি এসব করে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য থেকে সরে আসে। এখন আমদানিকারকরা নিজেদের পছন্দমতো দরাদরি করে ভাড়া নির্ধারণ করতে পারছে, যা স্বস্তিদায়ক হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য নিয়ে আসা জাহাজের উল্লেখযোগ্য অংশই খোলা পণ্যবাহী (বাল্ক) বাল্ক ক্যারিয়ারে চাল, ডাল, গম, ছোলা, চিনি, সিমেন্ট ক্লিংকার, কয়লা, পাথর, স্ক্র্যাপসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়। বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করা বড় জাহাজ থেকে এসব পণ্যের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে দেশের ৩৪টি নৌ রুট রয়েছে। এসব রুটে পণ্য নিয়ে লাইটার জাহাজ চলাচল করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন