বাংলাদেশ বেতারে অটোমেশন সফটওয়্যার সরবরাহে দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি— বণিক বার্তা।

বাংলাদেশ বেতারের জন্য তৈরি করা অটোমেশন সফটওয়্যার সরবরাহ ও সংস্থাপন না করা হলেও বিল পরিশোধ হয়ে গেছে। এর সঙ্গে ১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। অটোমেশন সফটওয়্যার সরবরাহ ও সংস্থাপন বিষয়ক অনিয়ম তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর। কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক (সংগীত) এস এম জাহিদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠি সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।

একই অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) অনুসন্ধান করছে। ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি সহকারী পরিচালক সুভাষ চন্দ্র মজুমদার স্বাক্ষরিত এক চিঠি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালকের (প্রশাসন ও অর্থ) কাছে এই বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন প্রকল্প ও অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় বাৎসরিক ক্রয়কাজ এবং অনুষ্ঠান শাখার শিল্পী নিয়োগে আর্থিক অনিয়ম ও লুটপাটের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তিনি অনুসন্ধান করছেন। ২০২৩ সালের অভিযোগটির অনুসন্ধান পরিচালিত হচ্ছে অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ শাখা থেকে। এছাড়া বাংলাদেশ বেতারের আরো একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন উপপরিচালক আতাউর রহমান সরকার। এটি দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখার বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২ শাখা থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) সফটওয়্যারটি সরবরাহ করার কথা ছিল। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে অটোমেশন সফটওয়্যারটি ৬২টি দপ্তরে সরবরাহ ও সংস্থাপন করার কথা থাকলেও ১৯ মাস পরও এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমআইএসের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকটি ক্রটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ। সফটওয়্যারটিও বেতারের কোনো দপ্তরে সংস্থাপিত হয়নি। এটি চালু অবস্থায়ও পাওয়া যায়নি।

সফটওয়্যারটির অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও এমআইএস কনসালটিং ফর বেটার প্রজেক্ট নামের একটি ব্যাংক হিসাবে দুই দফায় বরাদ্দের পুরো এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাবটি পরিচালনকারী ছিলেন অধ্যাপক ড. এম হেলাল উদ্দীন আহমেদ ও অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ বাজেটে কম্পিউটার সফটওয়্যার খাতে কোনো বরাদ্দ ছিল না। সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দ পাওয়ার আগেই সফটওয়্যার সরবরাহ ও সংস্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। একই অর্থবছরের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনাতেও (এপিপি) অটোমেশন সফটওয়্যার সরবরাহ ও সংস্থাপন কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এক্ষেত্রে পিপিআর ২০০৮, ধারা ১৬(৬) এর ব্যত্যয় হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারের তখনকার মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) খান মো. রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) শোভা শাহনাজ, অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) শফিকুল ইসলাম, উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ হামিদুর রহমান, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সুলতান হোসেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (কমন) গোলাম ফারুক, হিসাব রক্ষক খন্দকার আনিছুল করিম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (কমন) কামাল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক (কমন) আব্দুল মান্নান, সুপারিনটেন্ডেন্ট (বাজেট) শহিদুল আলম, হিসাব রক্ষক (বাজেট) সোহেল রানা, উচ্চমান সহকারী (কমন) শাহীনুর ইসলাম, গুদাম রক্ষক সাইদুল ইসলাম, অফিস সহকারী মামুন সরকারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয়জন দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন, আর নয়জন আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন