শ্রমিক বিক্ষোভ

আশুলিয়ায় ছুটি ও বন্ধের নোটিস ৭৯ কারখানায়

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I সাভার

জামগড়া শিমুলতলা এলাকায় রোববার রাতে একটি পোশাক কারখানায় ভাংচুর করা হয় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বিভিন্ন দাবিদাওয়াকে ঘিরে ঢাকার আশুলিয়া ও গাজীপুরের শিল্প-কারখানায় বেশ কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এরই মধ্যে কারখানায় ভাংচুর, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল অবশ্য শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। শ্রমিকরা কেবল কর্মবিরতি পালন করেছেন। ফলে গতকালও আশুলিয়ার ৭৯টি কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা এলেও মূল ফটকে ছুটির নোটিস দেখে ফিরে যান। 

আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানায় বেতন, হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। অব্যাহত এসব বিক্ষোভের ঘটনায় শিল্প খাতে প্রভাব পড়ার শঙ্কায় রয়েছে মালিকপক্ষ। তবে পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার পেছনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনকে সামনে আনছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে শ্রমিক নেতাদের দাবি, সাধারণ কিছু দাবিদাওয়ার প্রতি মালিকপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে গতকাল আশুলিয়ার জিরাবো, নিশ্চিন্তপুর, নরসিংহপুর, সরকার মার্কেটসহ বেশকিছু এলাকার ৭৯টি কারখানা বন্ধ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে সাভারের অন্য এলাকার কারখানাগুলোয় শ্রমিকরা কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত আছে বলে জানান শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম।

এদিকে চার বছর আগে বন্ধ হওয়া লেনী ফ্যাশন ও লেনী অ্যাপারেলস তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) মূল ফটকের ভেতরের অংশে মানববন্ধন করেছেন। এছাড়া ধামরাই উপজেলার ইসলামপুর এলাকায় জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাটা গ্রিন ফ্যাক্টরির সামনে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখান আরম্যাক সার্ভিসেস লিমিটেডের কর্মচারীরা। 

শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও কারখানাসংশ্লিষ্টরা জানান, সাভার ও ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় গতকাল নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হন শ্রমিকরা। তবে আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর, ইউনিকসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় কারখানার শ্রমিকরা বেতন, হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ নানা দাবিতে কাজে যোগ না দিয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওইসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শ্রমিকদের দাবি পূরণ করতে না পারায় আগে থেকেই অনেক কারখানার ফটকে বন্ধ ও ছুটির নোটিস টাঙিয়ে দেয়া হয়।

মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মূলত শ্রমিকদের দাবিগুলোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় আগে থেকেই কয়েকটি কারখানা বন্ধ ও ছুটির নোটিস টাঙিয়ে দেয়। এছাড়া কিছু কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করায় সেগুলোয় ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা মোট কারখানার সংখ্যা ৭৯।’ 

শিমুলতলা এলাকায় গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। তখন সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাদের সরিয়ে দেন। একই স্থানে রোববার রাতেও বিক্ষোভ করেছিলেন তৈরি পোশাক কারখানাটির শ্রমিকরা। বিক্ষোভের সময় কারখানায় ভাংচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এছাড়া র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর দুটি গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে বিক্ষোভকারীরা।

র‍্যাব-৪ (সিপিসি-২) নবীনগর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর জালিস মাহমুদ খান জানান, দুষ্কৃতকারীরা র‍্যাবের একটি গাড়ি ভাংচুর করে আগুন দেয়। পরে তা নিভিয়ে ফেলা হয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। বিষয়টির ছায়া তদন্ত চলছে। তাছাড়া গতকালও শিমুলতলা এলাকায় শ্রমিকরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। শিল্পাঞ্চলে যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে, সেসব দুষ্কৃতকারীকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন