শ্রমিক অসন্তোষ

আশুলিয়ায় বন্ধ করতে হয়েছে ৬৫ কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গতকালও বন্ধ ছিল আশুলিয়ার প্রায় ৬৫টি কারখানা। সাভারের ইপিজেড এলাকা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়া ও গাজীপুরের শিল্প-কারখানাগুলোয় যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে গতকালও আশুলিয়ার প্রায় ৬৫টি কারখানা শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বন্ধ রাখতে হয়েছে। মালিকপক্ষ আশা করছে, শিগগিরই পূর্ণ গতিতে সব কারখানা সচল হবে।

এদিকে স্বাভাবিক উৎপাদনে ফিরেছে গাজীপুরের শিল্প-কারখানাগুলো। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গতকাল এ অঞ্চলের কোনো কারখানায় ছুটি ঘোষণা করার খবর পাওয়া যায়নি।

শিল্প পুলিশ ও খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, আশুলিয়া ও গাজীপুরে বিভিন্ন খাতের কারখানা রয়েছে। তবে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানাই বেশি। ফলে এ খাতের কারখানাগুলো ঘিরেই শ্রমিক অসন্তোষ বেশি দেখা দেয়। এর মধ্যে গত ৩১ আগস্ট থেকে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে ওষুধ খাতের কারখানাগুলোয়ও। ৪ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া ও গাজীপুরে প্রায় ২০০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। এর মধ্যে পোশাক কারখানা ছিল ১৬৭টি। বাকিগুলো ছিল ওষুধ কারখানা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন মালিক, শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিরা। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। 

বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আশুলিয়ায় আজ (গতকাল) ৬৫টি কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক খাতের কারাখানা রয়েছে ৪৮টি। সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে বলেই ৪৪৮টির মধ্যে মাত্র ৪৮টি কারখানা সচল রাখা যায়নি।’

শ্রমিকপক্ষের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই-তিনটি মৌলিক বিষয় রয়েছে। শ্রম আইনের বাইরে একটা বিষয় আছে—হাজিরা বোনাস ও টিফিনের টাকা বাড়ানো। এর বাইরে যে দাবিটি আছে, সেটি হলো কারখানায় সমান হারে নারী ও পুরুষ শ্রমিক নিয়োজিত করা। এসব দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মালিকদের সঙ্গে আমরা পরামর্শ করছি। আগে বন্ধ ছিল, এমন অনেক কারখানাই আজ সচল ছিল। আজ রাতেও বড় বড় কারখানার মালিকদের সঙ্গে বসে একটা সমন্বয় করা হবে। মালিকরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে কাজে নিয়োজিত করার ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছেন। আগামীকালের (আজ) মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি। উদ্বেগের যে বিষয়গুলো, সেগুলো এক কারখানার সঙ্গে আরেক কারখানার অভ্যন্তরীণ ইস্যু ছিল। হাজিরা বোনাস, টিফিনের টাকা—এসব বিষয়ে কিছু বৈষম্য হয়, সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়গুলো সমন্বয় করা হবে।’

শিল্প পুলিশের বরাত দিয়ে সাভার প্রতিনিধি জানান, গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করার পর ধীরে ধীরে অন্যান্য কারখানায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তাদের সঙ্গে মালিকপক্ষ সমঝোতায় পৌঁছতে না পারায় অন্তত ৬৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ইয়াগি বাংলাদেশ, নিউএইজ, আল মুসলিম, জেনারেশন নেক্সটসহ অন্তত ২০টি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি তুলে কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। কারখানার অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে লুসাকা, মাসকাট, বেক্সিমকো (২১ ইউনিট) নিট কম্পোজিটসহ সাতটি গ্রুপ ও কারখানার শ্রমিকরা।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুকুরপাড় এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা জিরাব-বিশমাইল শাখা সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা সেখানে গিয়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। আটক করা হয় ছয়জনকে, যারা শ্রমিক না হয়েও আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একাধিক শ্রমিক জানান, মালিকপক্ষের সঙ্গে দাবি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তারা কাজ না করে বাসায় যাচ্ছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ আজ কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।

এদিকে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকার নাসা গ্রুপের সব কারখানাই স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছে। সেখানকার শ্রমিকরা জানান, মালিকপক্ষ তাদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। তাই আজ তারা কাজে যোগ দিয়েছেন।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আজও (গতকাল) ৬৫টি কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে অস্থিরতার জেরে।’ তিনি জানান, আশুলিয়ার-১-এর আওতায় ওষুধ কারখানা রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে একটি বন্ধ ছিল।

এদিকে গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, এ অঞ্চলের প্রায় সব কারখানা গতকাল চালু খোলা। এর মধ্যে টঙ্গী ও গাজীপুর সদরের কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। কিন্তু মালিকপক্ষ অধিকাংশ দাবি মেনে নেয়ায় শ্রমিকরা কাজে ফিরে যান। 

গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন জানান, টঙ্গী এলাকায় আপাতত কোনো কারখানা বন্ধ নেই। কারখানার নিরাপত্তা জোরদারে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছেন। 

শিল্প পুলিশ, কারখানা মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন দাবিতে গত ২১ আগস্ট গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। এদের বেশির ভাগই তৈরি পোশাক, ওষুধ ও চামড়াজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী কারখানার শ্রমিক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন