নাসীরুদ্দীন ও আখতারের নেতৃত্বে ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের চলমান লড়াই সফল করার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করল ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতকাল বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৫৫ সদস্যের এ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে। আখতার হোসেনকে করা হয়েছে সদস্য সচিব।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এর আগে লিয়াজোঁ কমিটির পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তিনি ছাত্র ফেডারেশনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি আমার বাংলাদেশ পার্টির রাজনীতির সঙ্গেও কিছুদিন কাজ করেছেন।

কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। পরে হন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক। কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বিভিন্ন সময় ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। 

কমিটির সদস্যদের মধ্যে আরিফুল ইসলাম আদীব ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে লিয়াজোঁ কমিটির মিডিয়া ও তথ্য অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আরেক সদস্য আকরাম হুসেইন ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে লিয়াজোঁ কমিটির এডুকেশন অ্যান্ড আদার অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। সদস্য অনিক রায় ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। সদস্য অলিক মৃ সমতলের অধিবাসীদের প্রতিনিধি; অন্যদিকে সায়ক চাকমা পাহাড়ি অধিবাসীদের প্রতিনিধি। সদস্য আবু রায়হান খান ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সদস্য সালেহ উদ্দিন সিফাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম ও গণরুমের অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার ছিলেন। আরেক সদস্য কানেতা ইয়া লাম লাম ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ছাত্রদলের ব্যানারে ডাকসু নির্বাচন করেছিলেন। 

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরী, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আব্দুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সানজিদা রহমান তুলি, মাহমুদা আলম মিতু, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এসএম শাহরিয়ার, মানজুর-আল-মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আব্দুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, তানজিল মাহমুদ, আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, এসএম সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার ও সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির। 

আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিলোপ করতে এ কমিটি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। দেশী-বিদেশী চক্রান্ত আমরা ছাত্র-নাগরিক সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করব। আমরা এসব কাজে সব সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সহযোগিতা কামনা করছি।’

সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচার থেকে মুক্তি পেয়েছে। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতেই এ নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করেছে।’

কমিটি আটটি প্রাথমিক কাজের কথা বলছে। এর মধ্যে রয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা; ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ; রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহির পরিসর তৈরি এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা।

প্রাথমিক কাজের তালিকায় আরো রয়েছে দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা; জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণী প্রস্তাব তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া এবং গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণ-আলোচনার আয়োজন করা।

জাতীয় নাগরিক কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমিটি একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে। অচিরেই সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে তারা আলোচনা করবে। তৃণমূল পর্যন্ত এ কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর মাধ্যমে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন