ছাত্রদল নেতা মাসুদ রানার নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে
দুই পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যার পাশাপাশি থানা ভবনেও হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে
তিনি এমন অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, গ্রেফতার ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানার
নেতৃত্বে ইরফান, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া ও তারেকসহ ২৫-৩০ জনের একটি দল গত
১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগে অবস্থান
করে। এছাড়াও মাসুদ রানার উপস্থিতি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় ইরফান ও বক্কর আরো
কয়েকটি দল নিয়ে এসে তার সঙ্গে যোগ দেয়। মাসুদ রানার নেতৃত্বে তারা রায়েরবাগ-শনির আখড়া
এলাকায় অগ্নিসংযোগ এবং মসজিদের মাইকে গুজব ছড়ানো, থানা আক্রমণ এবং পুলিশ হত্যায় সক্রিয়
অংশগ্রহণ করে।
হামলার বর্ণনা তুলে ধরে ডিবি প্রধান বলেন, ১৯ জুলাই রাত আনুমানিক
সাড়ে ১১টায় তারা এক মোটরসাইকেল আরোহীকে তাড়া করে। তাদের তাড়া খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী
রাস্তার পাশে পড়ে গেলে মাসুদ রানা ও তার সহযোগীরা সেই ব্যক্তির ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশের
পোশাক ও আইডি কার্ড দেখতে পায়। তখন তারা পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করে। তাদের চিৎকারে
আশপাশের অনেকে সেখানে জড়ো হয়ে যায়। তাদের হাতে থাকা হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে
ওই পুলিশ সদস্যকে মারতে থাকে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। তার মৃতদেহ নিয়ে তারা উল্লাসে
মেতে উঠে। তার চালিত মোটরসাইকেলটিতেও তারা অগ্নিসংযোগ করে। আন্দোলনে যাওয়ার জন্য তাদেরকে
কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য তারেক অর্থ সহায়তা দিত এবং তার নির্দেশে তারা অগ্নিসংযোগ ও
ভাংচুরের কাজ করেছে।
তিনি বলেন, পরের দিন ২০ জুলাই সকালেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
ওই এলাকায় মোটরসাইকেলে করে সাদা পোশাকে একজন ব্যক্তিকে আসতে দেখে দুষ্কৃতকারীরা ধাওয়া
করে, তাকে ধরে ফেলে এবং পুলিশ সদস্য বুঝতে পেরে তাদের হাতে থাকা হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি
ইত্যাদি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। তার মোটরসাইকেলটিও
একইভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
সংঘর্ষে নিহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন— এএসআই মোহাম্মদ মুক্তাদির (৫০)
ও নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮)। এ দুই পুলিশ সদস্য হত্যায় গ্রেফতার ৬ জনের ভূমিকা সম্পর্কে
হারুন বলেন, মাসুদ রানা রায়েরবাগ-শনির আখড়া এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের মধ্যে সমন্বয়ের
কাজ করে। ইরফান ও মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যদের হত্যা ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ
করে। আবু বক্কর পুলিশ সদস্যকে মারপিট করে এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। রবিউল ইসলাম
হকিস্টিক দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগে সহায়তা করে।
সৌরভ মিয়া বাঁশের লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে। তারেক লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের
মারপিট করে এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগে সহায়তা করে।
হারুন বলেন, জামায়াত ও বিএনপির ক্যাডাররা নির্মমভাবে পিটিয়ে আমাদের
দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়েছিল পুলিশ। পুলিশই
দুর্দিনে প্রথম এগিয়ে আসে। ২৮ অক্টোবরে আমরা দেখেছি রাষ্ট্রীয় স্থাপনা, বিচারপতির বাসভবনে
হামলার চিত্র। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার
করে এর আড়ালে আমরা দেখলাম রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও পুলিশকে টার্গেট করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী,
শনির আখড়া, রায়েরবাগ এলাকায় গিয়ে তারা পুলিশকে টার্গেট করেছে। পুলিশ মারতে পারলেই ১০
হাজার টাকা পুরস্কারও তারা ঘোষণা করেছিল।