কোটা সংস্কার আন্দোলন

সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহতের খবর

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি : বণিক বার্তা

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলছে। এ কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে হতাহতের খবর আসছে। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক। নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদী ঢাকা টাইমসে কর্মরত বলে জানা গেছে। সন্ধ্যার পর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে তাকে আনা হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

রাজধানী: কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে রাজধানীতে এখন পর্যন্ত আট জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল চারজনের, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল দুইজনের এবং ধানমন্ডি সিটি হাসপাতাল একজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। এছাড়া রামপুরায় একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। 

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট মিজানুর রহমান ৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আহত হয়ে ৫০ জনেরও বেশি হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও আছেন। 

অন্যদিকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাব্বির আহমেদ বিকাল পৌনে চারটায় বণিক বার্তাকে জানান, এই কলেজ হাসপাতালে কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়নি। দুপুরের দিকে একজন শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। আমরা ওই মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দিয়েছে।

বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থী ব্রট ডেড (মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা) অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করিনি, কেননা কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হতে পারে। পরে তার সঙ্গে আগত দুই ছেলে আমাদের অনুরোধ করে যে, তাকে যেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। আমরা তাই করেছি। আমাদের হাসপাতালে শতাধিক শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের কেউ বেশি আহত হয়েছে, কেউবা কম। তবে শুরুতে আমরা রেকর্ড রাখতে পারিনি। তবে রেকর্ড অনুযায়ী এখানে ৬২ জন আহত মানুষ চিকিৎসা নিয়েছে। তবে কোনো ভর্তি নেই।

উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ৪০০ জনের বেশি আন্দোলনকারী আহত হয়ে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। তার পরিচয় জানা যায়নি।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এক রিকশাচালককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিকশাচালকের নাম–পরিচয় জানা যায়নি। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়ার নিশ্চিত করেন।

সাভার : সাভারে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিক্ষোভরত এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী এমআইএসটিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আনোয়ারুল কাদের নাজিম বিকালে বণিক বার্তাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে একজনকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। কিছুক্ষুণের মধ্যেই তাকে নিয়ে যাওয়া যায়। এরপর কী হয়েছে তা সাভার থানা পুলিশ বলতে পারবে। প্রায় পাঁচজন আহত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’

মাদারীপুর : মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের ধাওয়ায় শকুনি লেকে পড়ে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত শিক্ষার্থীর নাম দিপ্ত দে (২১)। তিনি মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

চট্টগ্রাম: নগরের বহদ্দারহাটে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

নরসিংদী: নরসিংদীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে তাহমিদ ভুইয়া (১৫) ও ইমন (১৮) নামে দুই শিক্ষার্থী নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভেলানগর-জেলখানা মোড় এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।

নরসিংদীর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে আনার পর তাহমিদ ভুইয়া (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমান। অপরদিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়ার পর ইমন নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাশার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন