কিচেন, বাথ ও লিভিং পণ্যের তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী

যাপিত জীবনে নতুনত্ব ও আধুনিকতার ছোঁয়া

তোফাজ্জল হোসেন

ছবি : বণিক বার্তা

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির উন্নয়ন আর সৃজনশীলতার মেলবন্ধনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা খাতে এসেছে বিপ্লব। এমনই এক খাত হলো কিচেন, বাথ ও লিভিং পণ্য। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের চাহিদা ও রুচিশীলতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেশেই এখন তৈরি হচ্ছে কিচেন, বাথ ও লিভিংয়ের প্রায় সব শ্রেণীর পণ্য। এসব পণ্য উৎপাদন করেই থেমে থাকেন না দেশীয় উদ্যোক্তারা। ভোক্তার হাতে সঠিক পণ্য পৌঁছে দেয়া থেকে শুরু করে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে ভোক্তাকে পরিচিত করা, সেসব পণ্যের ব্যবহার এবং মানের ক্ষেত্রে সচেতন করাও বিক্রেতা, পরিবেশকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আধুনিক বাণিজ্যে এটি এখন ব্যবসায়ীদের জন্য অপরিহার্য একটি কাজ। 

তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের পাশাপাশি উৎপাদক ও পরিবেশকরা আয়োজন করছেন বিভিন্ন ধরনের মেলা ও প্রদর্শনী। ভোক্তাকে সচেতন করা, চাহিদা সম্পর্কে জানা, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করানো এবং সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে পণ্যে বৈচিত্র্য ও উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে এবার রাজধানীতে শুরু হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমী এক আয়োজন।

১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই ঢাকার পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরার (আইসিসিবি) হল ২ ও ৩-এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘রোসা থার্ড কিচেন, বাথ অ্যান্ড লিভিং এক্সপো বাংলাদেশ।’ তিনদিনের এ আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো টাইটেল স্পন্সর হিসেবে থাকছে আকিজ বশির গ্রুপের ব্র্যান্ড রোসা। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, আরব আমিরাত, চীন, শ্রীলংকা, ভারত ও স্বাগতিক বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ৭০টি ব্র্যান্ড একই ছাদের নিচে অংশ নেবে তিনদিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে। 

উৎপাদক, রফতানিকারক ও সরবরাহকারীরা তাদের নতুন পণ্য, আধুনিক প্রযুক্তি এবং নিজেদের দক্ষতা বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন এ এক্সপোতে। এক্সপোতে থাকবে পছন্দের পণ্য কেনার সুবিধা। ১৮ জুলাই বেলা ২টায় এ এক্সপোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। দর্শনার্থী ও ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সবার জন্য  প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত। এক্সপোতে থাকবে স্টুডেন্ট ডিজাইন কম্পিটিশন, ওয়ার্কশপ, বায়ার সেলার মিটিং, ইনোভেশন এক্সচেঞ্জ ও জব সার্চ। এছাড়া প্রতিদিন থাকছে র‍্যাফল ড্রতে আকর্ষণীয় পুরস্কার।

দেশের বাজারে ইন্টেরিয়র খাতে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের অর্থমূল্য ২০২৭ সালের মধ্যে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে আশা করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে এ খাতের বাজারের অর্থমূল্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের অর্থনীতিতে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশকে এগিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছে। 

বাথরুম, কিচেন, লিভিং খাত দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে বাথরুম পণ্যের মধ্যে রয়েছে শাওয়ার হেড, পেপার হোল্ডার, শাওয়ার আর্ম, হ্যান্ড শাওয়ার, টাওয়েল সেলফ, এশিয়ান প্যান স্যানিটারি, স্যানিটারি, কমোড, ইংলিশ কমোড, অটোমেটেড ফ্ল্যাশ সিস্টেম, বাথ টাব মিক্সার সিস্টেম ইত্যাদি। 

অন্যদিকে এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে সেন্সরড ফসেট। যেটি জীবনযাত্রার মান এক ধাপ এগিয়ে দেয়। কিচেন পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় সিংক মিক্সার, মুভিং সিংক মিক্সার, মুভিং সিংক ট্যাব, সিংক বিপ ট্যাপ ইত্যাদি। আর লিভিং পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিভিন্ন ডিজাইনের স্বাস্থ্যসম্মত ফার্নিচার, বোর্ড, ডোর ইত্যাদি। 

ইউরোপিয়ান মানদণ্ড বজায় রেখে দেশে উৎপাদন হওয়ায় এসব পণ্যের রফতানি বাজারেও অবস্থান ক্রমেই বাড়ছে। একটা সময় পুরোপুরি আমদানিনির্ভরতা থাকলেও এসব খাতে এখন আমদানি হওয়া পণ্যের শতকরা হার নাম মাত্র। অর্থনীতিতেও এ খাতের অবদান ক্রমেই বাড়ছে। পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সরকারের নীতি সহায়তার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে এ খাত। আমদানি কমানোর মাধ্যমে ডলার সংরক্ষণ এবং দেশের বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার পাশাপাশি রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন কিচেন, বাথ ও লিভিং খাতের পণ্য উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা।

তিন দিনব্যাপী এবারের এক্সপোতে বিদেশী ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলনমেলায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে প্রত্যাশা খাতসংশ্লিষ্টদের। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এ খাতে আরো সমৃদ্ধি আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে রোসা থার্ড কিচেন, বাথ অ্যান্ড লিভিং এক্সপো বাংলাদেশ। আগামীতে আরো বড় আকারে এবং আরো আকর্ষণীয়ভাবে আয়োজনের মাধ্যমে এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যাশা রাখছেন ব্যবসায়ীরা। 

এ প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য হলো ভোক্তাদের চাহিদা সম্পর্কে জানা, তাদের নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করা এবং পণ্যের মান উন্নয়নে সহায়তা করা। এছাড়া নতুন পণ্যের উন্নয়ন ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনাও এ প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ও সেবার বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ পাবেন।

এবার মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকছে রোসা, প্লাটিনাম স্পন্সর জাকুয়ার ও বেঙ্গল এজেন্সি, গোল্ড স্পন্সর পার্লে, হুইদা, গ্যাসডাম ও ইউ কমফোর্ট এবং সিলভার স্পন্সর গ্রিন বোর্ড, ডরফেন, জোমু, এসবিইএম, সুপার বোর্ড, ওরিয়েন্টাল ও আলোয়। মেলায় এয়ারলাইনস পার্টনার হিসেবে থাকছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস।

সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা কিচেন, বাথ ও লিভিং পণ্যের এ প্রদর্শনী আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মান উন্নয়ন ও আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে। এটি শুধু পণ্য প্রদর্শন নয়, বরং প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সৃজনশীলতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন। নতুন দ্বার উন্মোচনের মাধ্যমে এ খাতকে আরো এগিয়ে নেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ও সেবার বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ পাবেন এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এ খাত আরো সমৃদ্ধ হবে। এ প্রদর্শনী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং ভবিষ্যতে আরো বড় আকারে আয়োজনের মাধ্যমে এ খাতকে আরো এগিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলেই প্রত্যাশা আয়োজকদের।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন