ক্ষুদ্র ঋণের পর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দ্বিতীয় প্রজন্ম হয়ে উঠেছে এমএফএস

ছবি : বণিক বার্তা

খন্দকার সাখাওয়াত আলী সমাজতাত্ত্বিক, গবেষক ও শিক্ষক। বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো এবং অধ্যাপনা করছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটির পরিবেশ উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে। কাজ করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) বিষয়ক ইমপ্যাক্ট স্টাডিতে জ্যেষ্ঠ সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে। সম্প্রতি বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন এমএফএসের বিকাশ ও চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাবের চেয়ে দ্বিগুণ হচ্ছে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) গ্রহণকারীর সংখ্যা। এমএফএসের মাধ্যমে মাসে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। গত এক যুগে এমএফএসের দ্রুত সম্প্রসারণের বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 

গত এক যুগে ডিজিটাল খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য মোবাইল আর্থিক সেবা খাতে (এমএফএস)। এ খাতের সঙ্গে তিনটি বিষয় সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রযুক্তি, ব্যাংক খাত ও রেগুলেশন—এ তিনটির সঙ্গে চতুর্থ বিষয়টি হলো ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ও চ্যানেল। অর্থাৎ এমএফএস একটি সমন্বিত কাজ ও দক্ষতার সমবায়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমএফএফ গাইডলাইনের মাধ্যমে এ উদ্যোগের সূত্রপাত হয়। গাইডলাইন অনুসারে ব্যাংক-লেড ও ব্যাংক সাব-সিডিয়ারি মডেলে এটি গড়ে ওঠে এবং সম্পূর্ণভাবে একটি পেমেন্ট সিস্টেম হিসেবে দ্রুত ও সহজভাবে অর্থ লেনদেনের একক সেবাদানের কাজ করে চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুচিন্তিত-ভাবনাপ্রসূত ও শক্ত অবস্থান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবা খাত হিসেবে এর দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটেছে। এখনো এ খাতে সম্ভাবনা, খাতভিত্তিক অগ্রগতি বা উন্নয়ন লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এটি উন্নয়নের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ। করোনাকালে এর উল্লম্ফন ঘটেছে; করোনার অভিযোজন এমএফএসের প্রসার ঘটিয়েছে—তথ্য সে কথা বলছে।

আপনার কি মনে হয় এমএফএস বাজার যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক এবং সবাই বিকশিত হওয়ার সমান সুযোগ পাচ্ছে? 

২০১১ সালের গাইডলাইনে এমএফএসের ওপর মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরকে (এমএনও) নেতৃত্বের সুযোগ দেয়া হয়নি। এমএনওর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ থেকে মালিকানা দেয়া হয়নি, এমন নয়। এর পেছনে তিনটি কারণ ছিল। প্রথমত, এমএনওর দাবি ছিল, তারাই কেবল এককভাবে ব্যাংকিং সেবা-বহির্ভূত মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছতে পারবে। অর্থাৎ সেখানে প্রতিযোগিতা থাকবে না, উল্টো একক বাজার তৈরির সুযোগ ছিল। দ্বিতীয়ত, এমএনও যেহেতু এ প্রতিযোগিতার মধ্যে আগে থাকবে তাই অন্যকে কৌশলে পেছনে ফেলে দেয়ার সুযোগটিও তার হাতেই থাকবে, যা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অসমতা তৈরি করতে পারে। তৃতীয়ত, দেশের মুদ্রানীতিতে পুরো লেনদেনের স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এমএনও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশের নাগরিকদের অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক লেনদেনের ঝুঁকি পর্যবেক্ষণের সুযোগ এমএনও-লেড মডেলে ছিল না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার দায়িত্ব পালন ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ করতে এমএনওকে মালিকানা প্রদান থেকে বিরত থাকে। উদাহরণস্বরূপ নগদের কথা বলা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় আসার আগে নগদের লেনদেনের সীমা (লিমিট) অনেক বেশি ছিল। পরে সেই সীমা সীমিত করা হলেও নগদ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, নগদকে সরকার এককভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাতের অর্থ প্রদানের জন্য এমএফএস অপারেটর হিসেবে বাছাই করছে, যা প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারের পরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা খাতের উপযোগী সেবা বাছাইয়ের স্বাধীনতা খর্ব করছে। অন্যদিকে রকেট একটি নির্দিষ্ট বাজার সবসময় ধরে রেখেছে। আর বিকাশের বাজার আগের তুলনায় কমেছে। অর্থাৎ প্রতিযোগিতার আদর্শ পরিবেশ না থাকা সত্ত্বেও এমএফএস খাতের চাহিদা ও উন্নয়ন দুটোই অব্যাহত রয়েছে।

বিবিএসের তথ্য বলছে, এমএফএস গ্রাহকের মধ্যে সাড়ে ১২ কোটির অবস্থান গ্রামে। শহর এলাকায় এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ কোটি। অর্থাৎ শহরের তুলনায় গ্রামে এমএফএস গ্রাহক বেশি। প্রান্তিক অর্থনীতিতে এমএফএস আরো কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রথম প্রজন্ম হলো ক্ষুদ্র ঋণ। ক্ষুদ্র ঋণের পর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দ্বিতীয় প্রজন্ম হয়ে উঠেছে এমএফএস। ব্যাংক-বহির্ভূত মানুষের ব্যাংক পরিসরে আনার এক ধরনের সামাজিক মডেল আমরা তৈরি করছি। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে গ্রাহক, যারা মোবাইল ব্যাংকের প্রকৃত ব্যবহারকারী। পাশাপাশি এজেন্টরা যারা শহরের এটিএম বুথের মতো কাজ করে চলছে গ্রামে। এমএফএস খাত আজ মূলধারার অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমএফএসের মাধ্যমে সরকার ট্যাক্স পাচ্ছে এবং এমএফএস অপারেটররা সেই ট্যাক্স আহরণ করে সরকারকে প্রদান করে। ক্ষুদ্র ঋণ এমএফএসের ভিত হিসেবে কাজ করেছে। তবে এমএফএসের মতো তারা ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা পায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক রেগুলেশনের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং আরম্ভ করেছে ২০১৩ সালে। গ্রামীণ সমাজে মাইক্রো অর্থনীতির জন্য ক্ষুদ্র ঋণের জন্য কাজ করছে, এমএফএস কাজ করতে টাকা আদান-প্রদানের জন্য। আর এজেন্ট ব্যাংকিং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) জন্য কাজ করছে। প্রবাসী আয় দেশে আনতে, মূলধারার ব্যাংকের পাশাপাশি, এমএফএস ও এজেন্ট ব্যাংক বড় ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। 

অভিযোগ রয়েছে, এমএফএস খাতের লোকজন হুন্ডি-হাওলায় জড়িত। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী? 

আমি মনে করি, এটি এক ধরনের দায় এড়ানোর অভিযোগ বা কৌশল। যদি বিষয়টা সত্য হয়, তবে ব্যবস্থা নেয়া করণীয়। অনুমান কিংবা অভিযোগ কাজের কথা নয়। দেশ ও দেশের সাধারণ নাগরিকের স্বার্থের সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রত্যেকটি লেনদেন চিহ্নিত করার সক্ষমতা আছে। আর ডিজিটাল স্পেসে চিহ্নিত করার সুযোগটি আরো বেশি। বাংলাদেশী প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে ‘আকামা’ অনুসারে টাকা পাঠাতে পারে। কিন্তু যে প্রবাসী বৈধ পথেই অতিরিক্ত অর্থ আয় করে সে ওই অতিরিক্ত টাকাটা পাঠাতে হুন্ডি ব্যবহার করে। এর বাইরে যারা কালো টাকার মালিক তারা এমএফএসকে টুলস হিসেবে ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করে। এক্ষেত্রে অপরাধী সেই ব্যক্তি, এমএফএস নয়। আর এ দায় বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ ও আইন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার। কারণ তারা হুন্ডিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। 

এমএফএসে বিভিন্ন জুয়া, ক্রিপ্টো, ট্রেডিং ও এমএলএমও যুক্ত হয়েছে। এমএফএস ব্যবহার করে একটি প্লাটফর্মের বিরুদ্ধেই প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এতে এমএফএসের সুনামহানি হয়েছে। বিষয়গুলোকে কীভাবে রেগুলেট করা যেতে পারে? 

বিষয়টি সুনামহানির নয়। যেকোনো আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। যখন এমএফএস ছিল না তখনো এসব অপরাধ ছিল। অপরাধীরা সবসময় অপরাধ তৈরির জন্য নতুন ধরনের চ্যানেল খোঁজে। সুতরাং এটাকে তারা নতুন চ্যানেল হিসেবে ব্যবহার করছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও হচ্ছে। এ জায়গাগুলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তদারকি করে বের করতে হবে এবং তারা বের করছেও।

তবে এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় বলা দরকার। সন্দেহজনক কোনো এজেন্ট বা ডিস্ট্রিবিউটর বা লেনদেন হলে এমএফএস অপারেটরদের বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করতে হয়। এজেন্ট বা ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমেই এ অপরাধগুলো সংঘটিত হয়ে থাকে। যেসব অপরাধ আমরা পেয়ে থাকি তার অধিকাংশই রিপোর্টের ভিত্তিতে পেয়ে থাকি। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকও এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভালো অংশের সহযোগিতা পাচ্ছে। এ অপরাধগুলোকে যদি আমাদের শনাক্ত করতে হয় তাহলে পুরো ইকোসিস্টেমের সঙ্গে যারা রয়েছেন তাদের সহযোগিতা ও সমন্বয় দরকার। অপরাধীর উদ্যোগগুলো শুরুতেই দমন করার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। আমি মনে করি, এ খাতে সামনে আরো বড় ঝুঁকি আসবে। এ ঝুঁকির জন্য খাতটিকে অপরাধী বানানো ঠিক হবে না। কারণ এ খাত থেকে সাধারণ মানুষ সেবা পাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে। 

গ্রাহক পর্যায়ে একটি ক্ষোভ রয়েছে—টাকা পাঠাতে ও উত্তোলনে উচ্চ ফি দিতে হয়। এটিকে কীভাবে আরো যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়? 

এ খাত নিয়ে ১২ বছর ধরে কাজ করছি। একজন গবেষক হিসেবে দেখেছি, গ্রাহকরা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেন না। এমএফএস আসার আগে টাকা হস্তান্তরের মাধ্যম ছিল মনি অর্ডার। তবে টাকা হস্তান্তরের বিষয়টি এমএফএসের মতো দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল না। কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি ও বাস কোম্পানিগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর করত। আবার মানুষ তার আত্মীয়-স্বজন বা নিজের পরিচিতদের মাধ্যমেও টাকা পাঠায়। সাধারণ মানুষ তাই তার অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে এমএফএস সেবা খরচকে খুব বেশি টাকা মনে করে না। 

এ শিল্পের বেড়ে ওঠার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হচ্ছে। তিনটি সূচকের ভিত্তিতে এমএফএসের ব্যয়টি দেখতে হবে। খরচের একটি অংশ পায় এজেন্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটররা। এজেন্ট ও ডিস্ট্রিবিউটরদের বাদ দেয়া গেলে খরচ অনেক কমে আসবে। আমরা ১০ বছর আগের চিত্র দেখি, মোবাইল ফ্লেক্সিলোডের সংস্কৃতি এখন আর নেই। বর্তমানে এমএফএসের মাধ্যমে ফ্লেক্সিলোড করা হচ্ছে। অর্থাৎ শিল্প ব্যয় ছাড়াই এটি অটোমেটেড হয়েছে। বর্তমানে এমএফএস খাত কেবল ক্যাশ আউটের জন্য চার্জ নেয় এবং সেন্ড মানির জন্য খুবই সামান্য পরিমাণে টাকা নেয়। ক্যাশ ইনের জন্য কোনো চার্জই নেয় না। আর বাজারে বিভিন্ন অপারেটর নানা সেবা দিচ্ছে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারের ওপর হস্তক্ষেপ করছে না। 

আপনি ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করেছেন। ক্ষুদ্র ঋণে ব্যাপকভাবে নারীদের অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এমএফএসে পুরুষের তুলনায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি খুবই কম। এটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এমএফএস গ্রাহকের মধ্যে ৬১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারী। যেহেতু আমি এ খাতে কাজ করি, কাজেই এ খাতের একটি বড় অংশের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ হয়েছে। বিকাশের ভোক্তা তথ্যানুসারে, ৫৭ শতাংশ পুরুষ ও ৪৩ শতাংশ নারী। এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে হলে দুটো বিষয়ে কাজ করতে হবে। প্রথমত, নারীকে টেলিফোনের মালিক হতে হবে। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সবসময় প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষরাই প্রাধান্য পায়। দ্বিতীয়ত, নারীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা বা শিক্ষা থাকাও দরকার। আমাদের এ অভাবটিও রয়েছে। সরকার একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক্ষেত্রে। সামাজিক সুরক্ষা খাতের অর্থ স্থানান্তরে, বিশেষ করে শিক্ষা বৃত্তির ক্ষেত্রে নারী সদস্যদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। বিবিএসের যে সংখ্যাটি দেখা যাচ্ছে সেটা মূলত সরকারের নীতির কারণে। কিন্তু আর্থিক নিয়ন্ত্রণ তো এখনো অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষদের হাতে। 

দুটো নীতি সহায়তা প্রয়োজন এ ব্যবধান কমাতে। এক. এ সেবার মানোন্নয়ন করতে হলে ব্যবহারকারীর হাতে স্মার্টফোন দরকার। স্মার্ট জাতি গঠন করতে হলে প্রথম প্রযুক্তিগত সংযুক্তি হবে স্মার্টফোন। দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে স্মার্টফোন পৌঁছে দেয়া। স্মার্টফোন পৌঁছে দেয়ার জন্য দেশে যদি ৪০ ডলারের মধ্যে স্মার্টফোন তৈরি করতে পারি, তাহলে আর্থিক খাতে বিপ্লব ঘটানো যাবে এবং নারীকেও এগিয়ে নেয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, নারীদের যে বৃত্তি দেয়া হয় সেটা যদি তাদের সরাসরি দেয়ার সুযোগ হয় তাহলে আমরা তাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। পূর্বে ১৮ বছরের আগে কোনো নাগরিকের ব্যাংক খাতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল না। এখন স্কুল ব্যাংকিং চালু রয়েছে। সেই সুযোগ এমএফএস খাতেও করা হয়েছে। তাই ১৪ বছরের ছেলেমেয়েকেও জন্মনিবন্ধন দেখিয়ে এ অভ্যস্ততার মধ্যে আনা যেতে পারে।

অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশে এমএফএসের গ্রাহক ২২ কোটি ছাড়িয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, এ খাত খুবই সম্ভাবনাময়। সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন? কীভাবে আমরা সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারি?

চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নীতির মধ্যে সমন্বয়ের সুযোগ। নীতিগুলো প্রথমে যেভাবে সম্ভাবনাময় জায়গায় তৈরি করা হয়, পরে আপস করা হয় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দিকে তাকিয়ে। তখন রেগুলেশনের বিষয়টি সমঝোতার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমএফএস খাত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের অংশ হিসেবে বিবেচনায় রাখতে হবে। ডিজিটালাইজেশন একটি আন্তর্জাতিক সম্ভাবনার জায়গা এবং সেই বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া দরকার। সেই সঙ্গে এ খাতের সঙ্গে যারা যুক্ত হবেন, তার প্রতিযোগিতা, দক্ষতা, কমপ্লায়েন্সের ওপর আস্থা থাকতে হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের ওপর সমানভাবে আত্মবিশ্বাস দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন